এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: প্রোটিনের গুরুত্ব ও উপকারিতা তুলে ধরার মাধ্যমে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং স্বাস্থ্যবান ও মেধাবি জাতি গঠনে সরকারকে সহযোগিতা করার লক্ষ্য নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও গতকাল উদযাপিত হলো- ‘প্রোটিন দিবস”। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্র্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) এবং ইউ.এস. সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিল (ইউ.এস.এস.ই.সি) যৌথভাবে এ দিবসটি উদযাপন করে। এ উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) ও সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনার, র্যালি ও রচনা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়; পোষ্টার ও স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়। আগামী সপ্তাহে পটুয়াখালি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও অনুরূপ কর্মসূচী পালিত হবে।
দিবসটির উদযাপন উপলক্ষ্যে এক বার্তায় বিপিআইসিসি’র সভাপতি শামসুল আরেফিন খালেদ বলেন, বিগত বছরগুলোতে আমাদের দেশে প্রোটিন, বিশেষ করে প্রাণিজ প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ বেড়েছে তবে সচেতনতার অভাবে কাঙ্খিত অগ্রগতি অর্জন সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, বেঁচে থাকার জন্য আমরা খাদ্য গ্রহণ করি কিন্তু যতটুকু প্রোটিন খাওয়া দরকার তা কি খাচ্ছি? আমরা কি জানি কোন্ খাবারে কতটুকু প্রোটিন আছে? অল্প বয়সী শিশুটি, গর্ভবতী মা, যুবক-যুবতী কিংবা বয়স্ক মানুষের জন্য কতটুকু প্রোটিন দরকার?
ইউ.এস সয়াবিন এক্সপোর্ট কাউন্সিলের টীম লিড-বাংলাদেশ, খাবিবুর রহমান (কাঞ্চন) বলেন, প্রতি ৩জন বাংলাদেশীর মধ্যে ১জন মনে করে যে, প্রোটিনের ঘাটতি তাঁদের শরীরে তেমন একটা প্রভাব ফেলে না। ইউ.এস.এস.ই.সি কর্তৃক সম্পাদিত প্রোটিন পারসেপশন স্ট্যাডিতে অংশ নেয়া ৪৪ শতাংশ বাংলাদেশি মনে করেন যে, প্রোটিনের চেয়ে ভিটামিন এবং মিনারেল ঢের বেশি দরকারি। তাছাড়া বেশিরভাগ বাংলাদেশীই জানেন না প্রতিদিন কতটুক প্রোটিন গ্রহণ করা দরকার।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে উপস্থিত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাকৃবি উপাচার্য্য অধ্যাপক ড. এমদাদুল হক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের মানুষ নির্ধারিত মাত্রার চেয়েও ৪০ শতাংশ বেশি কার্বহাইড্রেট গ্রহণ করে থাকে। এ কারণে দেশের মোট কৃষি জমির বেশিরভাগ অংশ ধান চাষ করতেই অকুপায় হয়ে যাচ্ছে অথচ পরিকল্পিতভাবে চাষাবাদ করলে উদ্ভিজ্জ ও প্রাণিজ প্রোটিনের উৎপাদন বাড়ানো যেত। গবাদিপশুর চারণভূমি কিংবা গোখাদ্যের জন্য ঘাস চাষ করার মত জমি পাওয়া যেত। ড. এমদাদুল হক বলেন, ভাতের চেয়ে ডিম অনেক বেশি পুষ্টিগুণসম্পন্ন খাদ্য। একজন মানুষ যদি অন্যকিছু না খেয়ে প্রতিদিন ৪-৫ টি ডিমও হয় তবে তার আর অন্যকিছুর প্রয়োজন হবে না। শুধু ডিম নয়, সুস্বাস্থ্যের অধিকারি হতে হলে অন্যান্য প্রোটিন জাতীয় খাদ্য যেমন- দুধ, মাছ ও মাংস গ্রহণ করাও অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন- মেধাবি জাতি গঠন করতে হলে প্রোটিনের কোনো বিকল্প নেই।
বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টিবিদ শামসুন্নাহার নাহিদ মহুয়া বলেন, প্রোটিন আমাদের অধিকার। ইট যেমন একটি পর একটি সাজিয়ে বিল্ডিং তৈরি হয় তেমনিই মানবদেহের বিল্ডিং ব্লক হচ্ছে প্রোটিন। আমাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ প্রোটিনের উপর নির্ভরশীল। ভেগান ও ভেজিটেরিয়ানদের ক্ষেত্রে প্রোটিন ঘাটতির ঝুঁকি অনেক বেশি। মহুয়া বলেন, প্রোটিন দেহের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করে। প্রোটিনের অভাবে পেশি দুর্বলতা হয়, গর্ভধারণজনিত সমস্যা, এনিমিয়া, আলঝেইমারসহ নানাবিধ অসুস্থতা দেখা দিতে পারে। মহুয়ার মতে, ডিম হচ্ছে স্বল্প মূল্যের ফার্ষ্টক্লাশ প্রোটিন। ডিমের উপাদান- কোলিন আমাদের মস্তিষ্ক বিকাশের জন্য প্রয়োজন। এতে আরও রয়েছে ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড। তিনি বলেন- সয়া প্রোটিন দামে অত্যন্ত সস্তা। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে সয়া প্রোটিনের বহুল ব্যবহার থাকলেও আমাদের দেশে এর ব্যবহার কম। সয়াতে প্রাকৃতিক ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ বেশি থাকে। তাই নারীদের সয়া জাতীয় খাদ্য গ্রহণ করা উচিত।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) অনুষ্ঠিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন পোলট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াস হোসেন। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, পশুপালন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ছাজেদা আখতার, শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম সরদার, পশুপুষ্টি বিভাগের অধ্যাপক ড. খান মো. সাইফুল ইসলাম, ফুড টেকনোলজি ও গ্রামীণ শিল্প বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আলীম, ফিজিওলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহা. ইলিয়াছুর রহমান ভূঁইয়া এবং বিপিআইসিসি’র যোগাযোগ ও মিডিয়া উপদেষ্টা মো. সাজ্জাদ হোসেন।
সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপাচার্য্য প্রফেসর ড. মো. জামাল উদ্দিন ভূঞা। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভেটিরিনারি, এনিমেল ও বায়োমেডিক্যাল সায়েন্সেস অনুষদের ডীন প্রফেসর ড. মো. সিদ্দিকুল ইসলাম ও সিলেট বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মো. মারুফ হাসান। সভাপতিত্ব করেন পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. এ. এস. এম. মাহাবুব। অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন বিপিআইসিসি’র সেক্রেটারি দেবাশিস নাগ।
প্রোটিন দিবসের রচনা প্রতিযোগিতায় পোল্ট্রি, মৎস্য ও ডেইরি ক্যাটাগরিতে বাকৃবি থেকে ৩জন এবং সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৩জন- মোট ৬জন শিক্ষার্থীকে ক্রেষ্ট প্রদান করা হয়।