বিশেষ প্রতিবেদক: নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবেলা করে এখনো দেশের পোল্ট্রি শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে চেষ্টা করে যাচ্ছি আমরা। এ খাতে জড়িত সকলে মিলে নিরাপদ ডিম ও ব্রয়লার মাংস উৎপাদন করে যাচ্ছে। উৎপাদকদের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত না হলে তারা আর কতদিন লোকসানের বোঝা নিয়ে আপামর মানুষের জন্য নিরাপদ প্রাণিজ আমিষ সরবরাহ করতে পারবে?
আগামী ১৬-১৮ মার্চ রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় অনুষ্ঠিতব্য তিন দিনব্যাপী ১২তম আন্তর্জাতিক পোলট্রি শো ২০২৩ উপলক্ষে কথা প্রসঙ্গে ওয়াপসা-বিবি সভাপতি জনাব মসিউর রহমান জানিয়েছেন অনেক কথা। তার সংক্ষিপ্ত কিছু অংশ সম্মানিত পাঠকদের জন্য-
মশিউর রহমান বলেন, আমাদের দেশে শিল্পকে সকলের মাঝে পরিচিত করতে ওয়ার্ল্ডস পোলট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) কর্তৃক আয়োজিত মেলা বিশেষ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। পোল্ট্রি শো দেশের আপামর জনসাধারণকে পোল্ট্রি সম্পর্কে যেমন পরিচিতি করেছে তেমনি এ থেকে তৈরী হয়েছে নানামুখী কর্ম সংস্থানের ক্ষেত্র। এখন রাস্তায় ভ্যানে করে যে মুরগি বিক্রি করে তাও যেমন এই পোল্ট্রি শিল্পের অবদান তেমনি বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান যারা পোল্ট্রি প্রসেস করে বাজারজাত করে সেটিও কিন্তু এই শিল্পের অবদান। প্যাকেটজাত করা বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ডিম যেমন সব সুপার স্টোরে দেখা যায় তেমনি খোলা বাজারেও ডিম এখনো সহজলভ্য একটি প্রাণিজ প্রোটিন।
তবে এ শিল্পের সাথে আমরা যারা জড়িত তারা বর্তমান সময়ে কেহই ভালো নেই। কঠিন চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করে লাইভ বিজনেসটি পরিচালনা করতে হচ্ছে। দেশের জন্য, জাতির জন্য, সর্বোপরি ভোক্তার জন্য নিরাপদ আমিষ সরবরাহের জন্য এখনো কাজ করে যাচ্ছে এদেশের খামারী থেকে ব্যবসায়ী সকলেই। নিরাপদ খাদ্যের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থান যেমন সুস্পষ্ট তেমনি আমরাও বর্তমান সরকারের সহযোগী হিসেবে সাশ্রয়ী মূল্যের এ প্রোটিনকে আরও নিরাপদ করতে কাজ করে যাচ্ছি। সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরও আমাদের সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেক খামারী ঝরে গেছে আবার অনেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এজন্য সরকারের নিবিড় সহযোগিতা বিশেষ প্রয়োজন বলে মনে করেন ওয়াপসা-বিবি ও বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) সভাপতি জনাব মসিউর রহমান।
প্রথম দিকের মেলাগুলির স্মৃতির কথা উল্লেখ করে মশিউর রহমান বলেন, সে সময় আগারগাঁয়ের আইডিবি ভবনে অত্যন্ত স্বল্প পরিসরে মেলাগুলোর আয়োজন করতে হয়েছিল এরপর ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র এবং বর্তমানে আমরা নিয়মিতভাবে রাজধানীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় এ শো'র আয়োজন করে যাচ্ছি। এ থেকে বোঝা যায় এ শিল্প কতটা এগিয়েছে।
মসিউর রহমান বলেন, ‘শিশু থেকে বয়স্ক সবাই পোলট্রি ডিম ও মাংস খায়। সে কারণেই ডিম ও ব্রয়লার মাংসকে অধিকতর মানসম্পন্ন ও নিরাপদ করা আমাদের দায়িত্ব। পার্শবর্ত্তী দেশের পোল্ট্রি শিল্প আমাদের থেকে ৫০ বৎসর এগিয়ে থাকলেও সেখানে পোল্ট্রি থেকে উৎপাদিত ডিম ও মুরগীর দাম বেড়েছে ৫০ ভাগেরও বেশী। আমেরিকান পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রি দিকে তাকালে দেখা যাবে সেখানেও পোল্ট্রি পণ্যের দাম বেড়েছে শতকরা সত্তর ভাগ। আর এহেন অবস্থায় বাংলাদেশের পোল্ট্রির উৎপাদিত ডিম ও মুরগীর বিক্রয় মূল্য উৎপাদন মূল্যের সাথে সঙ্গতি না রাখলে এদেশেও পোল্ট্রির ডিম ও মাংসের উৎপাদন কমতে কমতে সংকট দেখা দিবে অচিরেই জানান তিনি।
WPSA-BB (World Poultry Science Association-Bangladesh Branch) প্রতি দু’বছরে একবার আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি সেমিনার এবং শো এর আয়োজন করে। চলতি বছরের ১৪ ও ১৫ মার্চ, ঢাকা রেডিসন ব্লু হোটেলে দু’দিনের সেমিনার এবং ১৬ থেকে ১৮ মার্চ তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো বসুন্ধরা কনভেনশন সেন্টারের অনুষ্ঠিত হবে। পরিবার-পরিজন নিয়ে মেলায় সকলকে আসার জন্য বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন ওয়াপসা-বিবি সভাপতি মসিউর রহমান।