এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: বাংলাদেশে টেকসই খাদ্য এবং পুষ্টি নিরাপত্তায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের অবদানকে স্বীকৃতি ও সম্মান জানাতে এ বছরের ‘কৃষক দিবস ২০২৩’ উদযাপন করেছে ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ (এফএফবি) এবং অ্যালায়েন্স ফর সাইন্স (এএফএস)। আজ ২৮ মে বাংলাদেশের চুয়াডাঙ্গা জেলার মনিরামপুর, আলোকদিয়ায় কৃষকদের নিয়ে এক বর্ণাঢ্য কর্মসূচির মাধ্যমে দিনটি উদযাপন করেন তারা।
ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ, কৃষি বায়োস্কোপ ও অন্যান্য সমমনা প্রতিষ্ঠান এর সার্বিক সহযোগিতায় এ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করেন অ্যালায়েন্স ফর সাইন্স এর ফেলোগণ। এই আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বনির্ভরতা বৃদ্ধিতে কৃষকদের অবদানকে সম্মাননা ও স্বীকৃতি জানানো।
দিনব্যাপী এ কর্মসূচির মধ্যে ছিল র্যালি, আলোচনা অনুষ্ঠান, আধুনিক কৃষি উপকরণ প্রদর্শনীর জন্য স্টল, কৃষকদের জন্য নানারকম খেলার ব্যবস্থা এবং স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আলোচনা সভায় অংশ নেন চুয়াডাঙ্গার বিশিষ্ট কৃষি বিশেষজ্ঞ, বিজ্ঞানী ও কৃষকগণ। কৃষকদের সম্মানে বিশেষ ভোজ এর মাধ্যমে দিনব্যাপী এ আয়োজনের সমাপ্তি ঘটে।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ২০২১ সালের জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এর জরিপ অনুযায়ী আফ্রিকার ২৭৮ মিলিয়ন, এশিয়ার ৪২৫ মিলিয়ন, ল্যাটিন আমেরিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের ২৭৮ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার শিকার হয়েছে। সারাবিশ্বের ক্ষুধার্ত এই জনগোষ্ঠীগুলোর কথা মাথায় রেখেই ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত বিশ্ব নিশ্চিত করতে একযোগে কাজ করছেন জীববিজ্ঞানী ও কৃষকেরা। তাদের এই প্রচেষ্টার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই কৃষক দিবস পালনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও দিবসটি একইভাবে উদযাপন করেছে ঘানা, নাইরোবি, কেনিয়া, নাইজেরিয়া, জাম্বিয়া, মিশর এবং গুয়াতেমালা।
ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ এর সিইও এবং নির্বাহী পরিচালক, মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, “বাংলাদেশের কৃষিখাতের মূল চালিকাশক্তি হল আমাদের কৃষকেরা। তাদের এই অক্লান্ত পরিশ্রম অবশ্যই সর্বোচ্চ স্বীকৃতি পাওয়ার দাবিদার। তাদের কঠোর শ্রম ও অধ্যবসায়ের ফলস্বরূপ পুষ্টিকর খাবার এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। আজকে আমাদের এই কৃষক দিবস উদযাপন তাদের অমূল্য অবদানকে সারাবিশ্বের কাছে তুলে ধরবার একটি প্রচেষ্টা মাত্র।”
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক, কৃষিবিদ ড. মোঃ আবদুল মুঈদ। তিনি বলেন, “ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকেরা টেকসই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বড় ভূমিকা পালন করেন। তাদের স্বীকৃতি জানানোর মাধ্যমে আমরা একইসাথে তাদের কাজকে সম্মান জানাচ্ছি এবং কৃষিখাতের উন্নয়নে তাদের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারছি।”
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর বারোমাসী ফল উৎপাদন ও পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক, ড. মোঃ মেহেদি মাসুদ বলেন, “কৃষি ও পুষ্টি সম্পর্কিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষীদের অবদান অপরিসীম। বারোমাসী ফল উৎপাদনে এবং পুষ্টির চাহিদা মেটাতে তারা বদ্ধপরিকর।”
কৃষি বায়োস্কোপের প্রতিষ্ঠাতা এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর বারোমাসী ফল উৎপাদন ও পুষ্টি উন্নয়ন প্রকল্পের অতিরিক্ত উপপরিচালক, তালহা জুবায়ের মাসরুর বলেন, সমগ্র জাতির খাদ্যের চাহিদা মেটাতে এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নের নায়ক আমাদের চাষীরাই, যারা অক্লান্তভাবে কৃষিকাজ করেন। কৃষক দিবস পালনের মাধ্যমে আমরা আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রতি কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে চাই।”
এবারের কৃষক দিবস উপলক্ষ্যে অনলাইনে “কৃষি অ্যাওয়ার্ড- ২০২৩” নামে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে এফএফবি। ৩০ মে, ২০২৩ পর্যন্ত চলবে এই প্রতিযোগিতা। দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে কৃষকেরা অনলাইনে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন।
ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ (এফএফবি) বাংলাদেশে খাদ্যশস্য উৎপাদনে জিন প্রকৌশল সহ আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি বিষয়ে নীতিনির্ধারক, কৃষিবিজ্ঞানী ও কৃষকদের সাথে কাজ করে আসছে। এফএফবি কৃষির আধুনিকায়নের মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষের কাছে প্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে টেকসই খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধিতে নিয়োজিত একটি প্রতিষ্ঠান।