বাংলাদেশের প্রায় ৭৭ শতাংশ কৃষক প্রতি মৌসুমে অন্তত একবার হলেও রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার করে

কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনু।। বাংলাদেশের প্রায় ৭৭ শতাংশ কৃষক প্রতি মৌসুমে অন্তত একবার হলেও রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার করে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) ধানের রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য মাঠে সেন্সর ভিত্তিক পরিবর্তনশীল হারে কৃষি রাসায়নিক স্প্রেয়িং ব্যবস্থপনা শীর্ষক প্রকল্পের গবেষণা অগ্রগতি কর্মশালায়কর্মশালায় এ তথ্যটি উঠে আসে।

রবিবার (১৯জুন) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অফিসের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত কর্মশালাটি আয়োজন করে কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ওই প্রকল্পটি পরিচালিত হচ্ছে। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্পের প্রধান গবেষক এবং কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. আনিসুর রহমান।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে তিনি বলেন, সর্বোচ্চ ফলন পাওয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ হচ্ছে ফসলকে রোগবালাই মুক্ত রাখা। আর ফসলকে রোগবালাই মুক্ত রেখে ভালো ফলন পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের কৃষি অধিকাংশই নির্ভরশীল বিভিন্ন রাসায়নিক সার ও বালাইনাশকের উপর। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশের প্রায় ৭৭শতাংশ কৃষক প্রতি মৌসুমে অন্তত একবার হলেও রাসায়নিক বালাইনাশক ব্যবহার করে। এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে যে পরিমাণ অপচয় হয় এতে খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি পরিবেশের ও কৃষকের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতির কারণ।

এই সকল সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে এই প্রজেক্টের কাজ চলছে। আমরা যদি জানতে পারি একটি পাতার ঠিক কতটুকু অংশ রোগে আক্রান্ত এবং ততটুকুরই ট্রিটমেন্ট করা গেলে রাসায়নিক ব্যবহারের পরিমাণ যেমন কমে যাবে তেমনি পরিবেশে দূষণ ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিও কমবে। এতে ফলন বাড়বে ও আর্থিক ক্ষতি কমবে এবং এই প্রক্রিয়ায় সাসটেইনেবল প্রোডাকশন ও প্রিসিশন এগ্রিকালচারকেও প্রমোট করবে।

কর্মশালায় কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মঞ্জুরুল আলমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলাম এবং বিশেষ অতিথি উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেমের (বাউরেস) পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. জয়নাল আবেদীন। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ।

ড. মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের কৃষিখাত চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে প্রবেশ করবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে কৃষি হবে সেন্সর ভিত্তিক রোবট ও ড্রোনের ব্যবহার ভিত্তিক। যার মাধ্যমে প্রিসিশন এগ্রিকালচার বাস্তবায়িত হবে। আমাদের কাজের বাধা হলো বাজেট স্বল্পতা। যে কারণে কাজের অগ্রগতি কম থাকে। সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলে গবেষণার অগ্রগতি বৃদ্ধি পাবে। এতে নতুন নতুন প্রযুক্তি কৃষিতে যুক্ত হবে, যা কৃষিতে বিপ্লব ঘটাবে।

কর্মশালায় মুক্ত আলোচনায় ইমেজ প্রসেসিংয়ের বিভিন্ন দিক, স্প্রেয়িংয়ের ক্ষেত্রে ড্রপলেটের আকার, ক্যামেরার বিভিন্ন কোণ, চাকার স্থায়িত্ব এবং স্বয়ংক্রিয় যন্ত্রের কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়। আলোচনায় অংশ নেয় কীটতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মহির উদ্দীন ও অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তোফাজ্জল হোসেন হাওলাদার, কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল আওয়াল, অধ্যাপক ড. মোরশেদ আলম ও অধ্যাপক ড. মো হামিদুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. চয়ন কুমার সাহা, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান এবং কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ম্যাথমেটিক্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মেছবাহ উদ্দিন।