এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা লেইট ব্লাইট রোগ প্রতিরোধী আলুর উন্নয়ন এবং সম্ভাবণা নিয়ে আলোচনা করতে ফিড দ্য ফিউচার গ্লোবাল বায়োটেক পটেটো পার্টনারশিপের একটি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
শনিবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ফিড দ্য ফিউচার গ্লোবাল বায়োটেক পটেটো পার্টনারশিপ প্রকল্পের আ্ওতায় জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে বাংলাদেশে লেইট ব্লাইট প্রতিরোধী আলু উৎপাদন নিয়ে এ কর্মশালার আয়োজন করা হয় । ‘এনগেজিং স্টেক হোল্ডার ফর ডেভেলপিং লেইট ব্লাইট রেজিস্ট্যান্ট বায়োটেক পটেটো ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই কর্মশালায় আলুর লেইট ব্লাইট রোগ বা নাবীধ্বসা রোগটির কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকারী প্রতিনিধি, গবেষক, কৃষক এবং বেসরকারি খাতের অংশীজনদের মধ্যে সহযোগীতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়। জিন প্রকৌশল প্রক্রিয়াকে আরো জোরদার করার মাধ্যমে নাবীধ্বসা রোগ প্রতিরোধী আলুর উন্নয়ন, বিকাশে এবং কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দিতে এই প্রকল্প কাজ করে যাচ্ছে।
ক্ষতিকর প্যাথোজেন ফাইটোফথেরা ছত্রাকের আক্রমনে সৃষ্ট লেইট ব্লাইট রোগ বিশ্বব্যাপী আলু শস্যের জন্য বড় ধরেনের হুমকি। এর ফলে আলুর ফলনের ব্যাপক ক্ষতি হয় যা বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ফিড দ্য ফিউচার গ্লোবাল বায়োটেক পটেটো পার্টনারশিপ প্রকল্পে, বাংলাদেশে সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এবং ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ। উত্তরোত্তর গবেষণা এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে এই সকল প্রতিষ্ঠান ।
গ্লোবাল বায়োটেক পটেটো পার্টনারশিপ প্রকল্পের পরিচালক এবং যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির প্রফেসর ড. ডেভিড ডাউচেস বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে বেশ কিছু স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান থ্রি আর(রেজিস্ট্যান্স/প্রতিরোধী)জিন নিয়ে কাজ করছে । এটি মূলত, এক ধরনের বুনো আলুর জাতের মধ্যে থেকে একটি জিন সংগ্রহ করা হয় যেটি লেইট ব্লাইট রোগ প্রতিরোধী। পরবর্তীতে এটি স্থানীয় জাতের আলুর সাথে জিন প্রকৌশলের মাধ্যমে লেইট ব্লাইট রোগ প্রতিরোধী করে নতুন জাত উদ্ভাবন করা হয় । যা বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে লেইট ব্লাইট রোগ প্রতিরোধে বড় ভূমিকা পালন করে । এই উদ্ভাবন এই অঞ্চলের খাদ্য নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পিপিসি উইংয়)ড. মো. রুহুল আমিন তালুকদার বলেন, ‘টেকসই কৃষিকে আরও বেগবান করতে আমাদের যে চেষ্টা, সেখানে গ্লোবাল বায়োটেক পটেটো পার্টনারশিপ-এর মতো অংশীদারিত্ব বাংলাদেশের কৃষির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা বিশ্বাস করি ৷ জীবপ্রযুক্তি ব্যবহার করে, আমরা আলুর রোগপ্রতিরোধ সক্ষমতা বাড়াতে পারি । এর ফলে কমে যাবে ক্ষতিকারক কীটনাশকের ব্যবহার এবং উন্নত হবে কৃষকদের জীবনযাত্রার মান । লেইট ব্লাইট রোগ আলু চাষের জন্য একটি দীর্ঘস্থায়ী চ্যালেঞ্জ, এর ফলস্বরূপ ফসলের উল্লেখযোগ্য পরিমান ক্ষতিসাধন হয় এবং কৃষকগন অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হন ।‘
অনুষ্ঠানে, সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট (বারি)- এর মহাপরিচালক ড. দেবাশীষ সরকার বলেন, ‘আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হলেও প্রতি বছর প্রচুর পরিমাণে আলু নষ্ট হয়, লেইট ব্লাইট রোগের কারণে । যার কারণে আমাদের দেশের কৃষকগন অর্থনৈতিকভাবে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হন । এই কারণে, আমাদের আরো কিছু ভ্যারাইটির প্রয়োজন । আমাদের বিজ্ঞানীরা বতুন জাতের আলুর উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের প্রতিষ্ঠান খুবই গুরুত্ব নিয়ে এ গবেষণার কাজটি করছে । আশা করছি, খুব দ্রুতই আমরা এই কাজটি শেষ করতে পারবো। বিটি বেগুনের মতো এই ‘এলবি আর থ্রি আর’ জিন আলু গবেষণায়ও আমরা সফল হবো।‘
কৃষি জীবপ্রকৌশল এবং আলু উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণের সাথে সম্পৃক্ত প্রখ্যাত বিজ্ঞানী এবং বিশেষজ্ঞরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে বাংলাদেশে লেইট ব্লাইট রোগ প্রতিরোধী আলুর উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে আলোকপাত করেন।
ফিড দ্য ফিউচার ইনিশিয়েটিভের অধীনে, ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি) দ্বারা প্রদত্ত সহায়তার মাধ্যমে এই ইভেন্টটি সম্ভব হয়েছে। এখানে প্রকাশিত মতামত লেখক এবং আয়োজকদের এবং এর সাথে ইউএসএআইডি বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মতামতের প্রতিফলন নয়।