কক্সবাজার: খাদ্য মানুষের অন্যতম মৌলিক অধিকার হলেও বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশ বিভিন্ন কারণে তার জনগণের খাদ্য, সুপেয় পানি ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হিসশিম খাচ্ছে। কক্সবাজার জেলার চকরিয়ায় বদরখালীতে ১৬ অক্টোবর ২০২৩ বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষ্যে আইএসডিই, পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক-প্রান এবং খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক-খানি এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত নাগরিক সমাবেশ এবং আলোচনায় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষির জন্য পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিতের দাবিতে পানির ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেন অংশগ্রহনকারি বক্তারা।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ভার্চু স্কুল এন্ড কলেজ এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক এবং রত্নগর্ভা আয়েশা-গোলাম শরীফ গণগ্রন্থাগারের সাধারণ সম্পাদক মহি উদ্দিন কাদের অদুল বলেন, কৃষির জন্য পানির প্রাপ্যতা এবং প্রবেশগম্যতা একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল বিষয় এবং পানি নিয়ে দ্বন্দ্ব কৃষি উৎপাদনে সরাসরি প্রভাব ফেলে। কৃষি উৎপাদনের জন্য সেচের পানির ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং পানির গুণমানের উপর বিভিন্ন প্রভাব সার্বিক পানির চাহিদার উপর চাপ সৃষ্টি করে। বিশ্বব্যাপী কৃষি, খাদ্য উৎপাদন এবং প্রক্রিয়াকরণের দীর্ঘমেয়াদী কার্যকারিতার চাবিকাঠি হচ্ছে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, এবং পানি সম্পর্কিত অন্যান্য চ্যালেঞ্জের প্রতি সহনশীলতা বৃদ্ধি এবং পানির ঘাটতি মোকাবেলা করতে পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় অর্থায়ন একটি কার্যকরী সমাধান হতে পারে।
অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধে জিয়াউল হায়দার শিহাব বলেন, বাংলাদেশ নিম্নভূমির ব-দ্বীপ দেশ হওয়ায় বন্যা ও খরা উভয়েরই ঝুকিতে রয়েছে। বাংলাদেশের পানি ব্যবস্থাপনার মূল উপাদানগুলোর মধ্যে রয়েছে: বন্যা নিয়ন্ত্রণ, সেচ ও নিষ্কাশন। পানি ব্যবস্থাপনার জন্য সরকারি অর্থায়ন এক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে গুরূত্বপূর্ণ। সঠিক বাস্তবায়ন এবং সরকারি হস্তক্ষেপে তত্ত্বাবধায়ন করে যথাযথ পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে দেশে খাদ্য নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
আগত বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় এনে "রুপকল্প-২০৪১ "-এর আলোকে জাতীয় কৃষিনীতি, খাদ্য নিরাপত্তা আইন, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট-২০৩০ এবং ডেল্টা প্ল্যান-২১০০সহ অন্যান্য পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজ করে যাচ্ছে, কিন্তু খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই কৃষি প্রধান দেশের সর্বত্র পানির সঠিক ব্যবহার এবং ব্যবস্থাপনার কোন বিকল্প নেই। বক্তারা আরোও বলেন, উপযুক্ত পদক্ষেপের মাধ্যমে পানি ব্যবস্থাপনা এবং খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণে নীতিনির্ধারক ও গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে সেই সাথে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিতে হবে।
আইএসডিই কর্মসুচী সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রতি বছর খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তার বিভিন্ন দিক পর্যালোচনার জন্য একটি নির্দিষ্ট বিষয়বস্তুর উপর দৃষ্টি নিবন্ধ করে বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হয় যার এবারকার প্রতিপাদ্য "পানিই জীবন, পানিই খাদ্য; কাউকে পেছনে ফেলে নয়"। বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০২৩ উপলক্ষ্যে জনগণের খাদ্য অধিকার নিশ্চিত করতে পানির অধিকার, প্রাপ্যতা, ব্যবস্থাপনার উপর গুরূত্বারোপ করে তিনি বলেন, খাদ্য অধিকার তথা পানি ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনায় নীতিমালা, বরাদ্দ, এবং জনঅর্থায়নের মতো সময়োপযোগী ও গুরূত্বপূর্ণ জনদাবি গুলো তুলে ধরতে এবং স্থানীয় পর্যায়ে প্রচারাভিযানের অংশ হিসেবে এরকম কর্মসূচি গুলো খুবই গুরত্বপূর্ণ।
আইএসডিই, পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক-প্রান এবং খাদ্য নিরাপত্তা নেটওয়ার্ক-খানি এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই নাগরিক সমাবেশ ও আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন, চকরিয়া উপজেলা সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ধনঞ্জয় পাল, বদরখালী জব্বার নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এর প্রধান শিক্ষক রুহুল কাদের, ভূক্তভোগী জনসাধারনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন জেসমিন কাউসার, জালাল উদ্দিন, ইমা্ম হোসেন বাবু, মোঃ আবু মুছা, মোবারকা জন্নাত, তৌহিদুল ইসলাম, গিয়াস উদ্দিন, মনোয়ারা বেগম প্রমুখ।
র্যালি, গণসমাবেশ ও আলোচনা সভায় চকরিয়া উপজেলার বদরখালী এলাকার উপকুলীয় এলাকার শতাধিক ভুক্তভোগী লোকজন উপস্থিত ছিলেন।