আবুল বাশার মিরাজ, বাকৃবি: দই বাঙালির কাছে জনপ্রিয় খাবারের একটি। বাঙালির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভারী খাবারের পর দই যেন নিত্য অনুসঙ্গ। আবার দই কেবল একটি খাবারই নয়, এটিকে পথ্যও বলা যায়। কারণ রোগ সাড়াতেও সাহায্য করে থাকে দই। দই উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। দই ক্যান্সারের বিরুদ্ধেও লড়াই করে।
তবে কি সব দই? অবশ্যই না। দই টাকে অবশ্যই মানে গুণে সেরা হতে হবে। হতে হবে পুষ্টিকর।
এবার সেরা আর পুষ্টিকর পণ্য হিসাবে ময়মনসিংহে এখন সুখ্যাতি ছড়িয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উৎপাদিত দই। বিশ্ববিদ্যালয়ের পশুপালন অনুষদের ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের খামারে উৎপাদিত হয় এই সুস্বাদু দই।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডেইরি খামারের গাভী থেকে প্রাপ্ত দুধ দিয়েই তৈরি হয় এই দই। একটা সময় শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য তৈরি করা হতো। কিন্তু বর্তমানে এন সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে পুরো ময়মনসিংহ জুড়ে। শহরের কোন অনুষ্ঠান হলেই দই এর অগ্রিম অর্ডার আসে ডেইরি খামারে। সুরক্ষা বজায় রেখে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি খামারের কারিগররা বানিয়ে থাকেন এই দই। তবে এই দই ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও বর্তমান ছাত্র বিষয়ক বিভাগের উপদেষ্টা ড. মো. হারুন-অর-রশিদের গবেষণার ফসল। তিনি এই দইয়ের ওপর পিএইচডি করেছেন। ২০০৩ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত তিনি দই নিয়ে গবেষণা শেষ করেন। এরপর ২০০৭ সাল থেকেই ক্যাম্পাসের খামারে দই উৎপাদন শুরু হয়।
অধ্যাপক ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, তাঁরা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে দই তৈরি করেন। দুধ সংগ্রহ থেকে শুরু করে সব পর্যায়েই থাকে প্রযুক্তির ছোঁয়া।
আর এ কারণেই বাজারের ভেজাল কিংবা মানহীন দই এর জায়গায় আস্থার জায়গা তৈরি করেছে বাকৃবির উৎপাদিত এই দই। এই দই শুধু গুণ ও মানে নয়, স্বাদেও অপূর্ব।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, দইয়ের ক্রেতা মূলত ক্যাম্পাসে আশেপাশে বসবাসরতরাই। বাইরের লোকজনেরও এ দই নেওয়ার সুযোগ আছে। ক্যাম্পাসের বাইরের ক্রেতারা ফার্মের ইনচার্জের সঙ্গে যোগাযোগ করে আগে থেকে চাহিদা জানালেই দই সরবরাহ করা হয়।
দই তৈরির প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ বলেন, আগুনে তাপ দিয়ে ১৫ থেকে ২০ শতাংশ দুধ শুকানো হয়। অর্থাৎ এক লিটার দুধ তাপ দিয়ে ৮০০ গ্রাম করা হয়। এরপর তাতে দই তৈরির উপাদান (উপকারী ব্যাকটেরিয়া) দিয়ে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা খোলা অবস্থায় রাখা হয়। দই জমে গেলে তা সাধারণ ফ্রিজে রাখা হয়। তবে সেটি মোটেও ডিপ ফ্রিজে নয়, এ দই সাধারণ ফ্রিজে তিন থেকে সাত দিন রাখা যায়।
ময়মনসিংহ শহরের আব্দুর রাজ্জাক নামের এক ক্রেতা বলেন, ভেজালের ভিড়ে বাকৃবির দই একটি আস্থার জায়গা তৈরি করেছে। আমি নিয়মিত আমার পরিবারের জন্য কিনে নিয়ে যাই। বাসায় কোন অনুষ্ঠান থাকলে অগ্রিম অর্ডার দিয়ে রাখি, যাতে সময়মত সেটা নিতে পারি। দই এর স্বাদ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দইয়ের স্বাদ অন্য রকম। দইটি একটু কম মিষ্টি দেওয়া হয় বলে খেতে সুস্বাদু লাগে। তারও চেয়ে বড় কথা, এটি স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে তৈরি করা হয়।
বাকৃবির ডেইরি ফার্মের দায়িত্বে আছেন ডেইরি বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সাদাকাতুল বারী। তিনি জানান, ফার্মে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ লিটারের মতো দুধ উৎপাদন হয়। এই দুধের ১০ থেকে ২০ শতাংশ দই তৈরির জন্য নেওয়া হয়। তবে এই পরিমাণের তারতম্য ঘটে চাহিদার ওপর নির্ভর করে। দুধ ও দই মূলত ক্যাম্পাসেই বিক্রি হয়ে যায়। আমাদের কোনো শোরুম নেই। খামার থেকেই সরাসরি ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে যায় দুধ-দই।
দই নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, যেহেতু দিন দিন এ দইয়ের চাইিদা বেড়ে যাচ্ছে। সে কারণে উৎপাদন আরো বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে আমরা পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছি। আশা করছি দ্রুতই বাকৃবির দই এর স্বাদ সারাদেশেই পৌঁছে যাবে।