এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: সরকার কর্তৃক সাম্প্রতিক ডিমের মূল্য নির্ধারণ ও ডিম আমদানি একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। যেখানে সরকার পন্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানির জন্য ক্রমাগত উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন সেখানে এ ধরনের সিদ্ধান্তে দেশের লক্ষ লক্ষ খামারি সর্বস্বান্ত হওয়ার আতংকের মধ্যে আছেন। বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পের স্টেকহোল্ডারদের মতামত গ্রহন না করে এ ধরনের এক তরফা সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন (বি পি আই এ)।
আজ ১৯ সেপ্টেম্বর রোজ মঙ্গলবার বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের (বি পি আই এ) ৫ম কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এ প্রতিবাদ জানানো হয়। সংগঠনের কার্য্যালয়ে আয়োজিত এ সভায় সভাপতিত্ব করেন B.P.I.A সভাপতি জনাব শাহ হাবিবুল হক। সভায় সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় B.P.I.A সদস্যরা বলেন, দেশের সকল ডিম উৎপাদনকারী খামারিদের অস্তিত্ব সরকারের নির্ধারণ করা ডিমের মূল্যের কারনে হুমকির মুখে পড়েছে, অন্যদিকে গতকাল বানিজ্য মন্ত্রনালয় কর্তৃক বিদেশ থেকে ৪ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়ায় দেশের লক্ষ লক্ষ খামারি সর্বস্বান্ত হওয়ার আতংকের মধ্যে আছেন।
প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয় সরকার কর্তৃক নির্ধারিত প্রতিটি ডিমের উৎপাদনকারীর মূল্য ১০.৫০ টাকা, যা বর্তমানে প্রতিটি ডিমের উৎপাদন খরচ থেকে অনেক কম, ছোট বড় মাঝারি সকল ডিম উৎপাদনকারী খুব কম সময়ের মধ্যে ব্যবসা থেকে অনেকেই ঝরে পড়বেন। খামার বন্ধ হলে সরকারের এ সিদ্ধান্ত দেশের চাহিদার সাথে ডিমের যোগানের মধ্যে ঘাটতি সৃষ্টি করবে। যার প্রভাবে দেশে ডিমের বাজার অস্থিতিশীল হবে, খামার বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারনে লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার হবে, গ্রামীণ অর্থনীতিতে অর্থের প্রবাহ হ্রাস পাবে। ভোক্তা বঞ্চিত হবেন প্রতিযোগিতামুলক দামে ডিম প্রাপ্তিতে।
সভায় আরো জানানো হয় ,সরকারের ডিম আমদানি কার্য্যকর হলে দেশে বার্ডফ্লু সহ অন্যান্য ভাইরাস জনিত রোগ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি থাকবে। অন্যদিকে বাংলাদেশে মুরগীর খাদ্যে এন্টিবায়োটিক ও মিট এন্ড বোন মিল (শুকরের মাংস থেকে উৎপাদিত হয়) ব্যবহার নিষিদ্ধ এবং প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়, অধিদপ্তর, স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ কঠোর ভাবে বিষয়টি নিয়ন্ত্রন করেন। পক্ষান্তরে বাইরের দেশ থেকে ডিম আসলে উপরোক্ত বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রনে রাখা কঠিন হবে বলে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন মনে করে।
প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের পোল্ট্রি পন্যের মূল্য নির্ধারণের জন্য একটি কমিটি কার্যকরী আছে, যা পোল্ট্রি খাদ্যের দাম, বাচ্চা ও অন্যান্য উৎপাদন খরচ বিশ্লেষণ করে প্রতিমাসে পোল্ট্রি পন্যের ( ডিম মুরগী বাচ্চা) দাম স্থির করার বিধান থাকলেও তার প্রতি নূন্যতম গুরুত্ব না দিয়ে, পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজের স্টেক হোল্ডারদের মতামত না নিয়ে ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ একটি উৎপাদনকারী দেশ থেকে ডিম আমদানির দেশে পরিনত হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন ( বি পি আই এ) । যেখানে সরকার পন্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে বিদেশে রপ্তানির জন্য ক্রমাগত উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন সেখানে ডিম আমদানি হবে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত ।
বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশনের সদস্যরা বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প ২০৪১ সালকে সামনে রেখে কাজ করে যাচ্ছে দেশের পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি । আগামী ২০৩১ সালের মধ্যে ডিম রপ্তানির লক্ষ্যে সকল সক্ষমতা অর্জনে দেশের পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রি অনেক দূর এগিয়েছে। তাই অবিলম্বে ডিম আমদানির অনুমতি বাতিলের পাশাপাশি খামারিদের উৎপাদন খরচ বিবেচনায় ডিমের যৌক্তিক দাম পূনরায় নির্ধারণের আহবান জানিয়েছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন (বি পি আই এ)।