আবুল বাশার মিরাজ: বর্তমানে বাজারে সচরাচর যে সকল সরিষার তেল পাওয়া যায় তার অধিকাংশই প্রচলিত ইলেক্ট্রিক প্রেসের মাধ্যমে ভাঙ্গানো। এই পদ্ধতিতে ভাঙ্গানোর সময় উচ্চতাপে তেলের স্বাদ ও গুণগত মান উভয়েরই ক্রমাগত হ্রাস ঘটে। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) একদল গবেষক সরিষার তেলের গুনগত মান অক্ষুন্ন রেখে তেল নিষ্কাশনের কোল্ড প্রেসড পদ্ধতি উদ্ভাবনে সফলতা পেয়েছেন। এটি প্রচলিত স্ক্রু প্রেস (Screw Press) পদ্ধতির পরিবর্তিত রূপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড টেকনোলজি এবং গ্রামীণ শিল্প বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গুলজারুল আজীজের নেতৃত্বে এই সাফল্য এসেছে।
গবেষকরা জানায়, বিভিন্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণের সময় দুটি প্রেসিং কৌশল- ঘানি এবং এক্সপেলারের মাধ্যমে উৎপাদিত সরিষার তেলের গুণমান তুলনা করা হয়। প্রথমে, আলোচিত উভয় পদ্ধতি ব্যবহার করে সরিষার বীজকে চাপ দেওয়া হয়। এ চাপে নিষ্কাশিত তেল ১২ সপ্তাহের জন্য বিভিন্ন তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীতে ওই তেলের অ্যাসিড ও পার-অক্সাইডের মান বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, সকল তাপমাত্রায় আবিষ্কৃত পদ্ধতিতে নিষ্কাশিত তেলের অ্যাসিড এবং পার-অক্সাইডের পরিমাণ বেশি থাকে। তবে কক্ষ তাপমাত্রায় ঘানি নিষ্কাশিত তেলে পার-অক্সাইডের পরিমাণ কম থাকে।
গবেষণাটির প্রধান গবেষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ গুলজারুল আজিজ বলেন, 'কোল্ড প্রেসড অয়েল এক্সট্রাকশন মেশিনের বিভিন্ন স্থানে থার্মোকল ব্যবহার করে তাপমাত্রার একটি অসম বন্টন দেখা যায়, যা তেল উন্মুক্ত হওয়ার স্থানে সর্বোচ্চ থাকে। আমরা দেখিছি সরিষার দানাগুলো মেশিনে প্রতি চাপেই তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি তেলের গুণমান হ্রাস পায়, যা ওই তেলে উপস্থিত মুক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড, পার-অক্সাইডের পরিমাণ এবং তেলের রঙ গাঢ়তর হওয়া দেখে নিশ্চিত করা যায়। এতে প্রমাণিত হয়, অতিরিক্ত পেষণে সরিষার তেলের গুণমান নষ্ট হয়। কিন্তু কোল্ড প্রেসড নিষ্কাশন পদ্ধতিতে তেলের গুণগত মান ঠিক থাকে বলে স্বাস্থ্যের জন্য এটি উপকারী। উচ্চ তাপ নিষ্কাশন পদ্ধতি থেকে এ পদ্ধতি তুলনামূলক মান সম্মত। গবেষণায় আরও দেখা যায়, কোল্ড প্রেসড সরিষার তেলে ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিডের একটি সুষম অনুপাত রয়েছে, যা খারাপ কোলেস্টেরলের (এলডিএল) মাত্রা কমিয়ে এবং ভালো কোলেস্টেরলের (এইচডিএল) পরিমাণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এতে কার্ডিওভাস্কুলার সিস্টেম সুস্থ থাকে। কোল্ড প্রেসড সরিষার তেলে উপস্থিত অ্যান্টি- অক্সিডেন্ট, যেমন: ভিটামিন ই এবং অন্যান্য ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট, অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে এবং সামগ্রিক কোষের স্বাস্থ্য ও ইমিউন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।'