নিরাপদ ব্রয়লার উৎপাদনে সফলতার পথে হাঁটছেন বাকৃবির গবেষকরা

দীন মোহাম্মদ দীনু, বাকৃবি: বাংলাদেশে প্রাণী সম্পদ খাতের উপখাত হিসাবে পোল্ট্রি খাত বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলছে। ৯০ এর দশকে দেশে বাণিজ্যিক ভাবে দেশে পোল্ট্রি শিল্প ও ব্রয়লার উৎপাদন শুরু হয়। তবে এ শিল্পে অদক্ষ, অল্পশিক্ষিত এবং অধিক মুনাফালোভী খামারারিদের এন্টিবায়োটিক্স অপব্যবহারের কারণে গত কয়েক বছর ধরে জনমনে ব্রয়লার পণ্য ভীতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এবার সে জায়গায় এন্টিবায়োটিক্স মুক্ত ও এন্টিবায়োটিক্সেরে বিকল্প ব্রয়লার উৎপাদনে সফলতার পথে হাঁটছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম এবং সহযোগী গবেষক মো. আবু রায়হান পারভেজ। র্দীঘ ৫ বছর ধরে এন্টিবায়োটিক্সসের বিকল্প ও মুক্ত ব্রয়লার উৎপাদনে এ গবেষণা কার্যক্রম তারা চালিয়ে যাচ্ছেন।

জানা গেছে, ব্রয়লারের বিভিন্ন পণ্য শিশু এবং বয়স্কদের কাছে জনপ্রিয় এবং সুস্বাদু খাদ্য হওয়ায় বাংলাদেশের সচেতন জনগোষ্ঠীর দাবি এন্টিবায়োটিক্সস মুক্ত এবং এন্টিবায়োটিক্স বিকল্প ব্রয়লার উৎপাদন। তারই ধারাবাহিকতায় ড. মো. শফিকুল ইসলামের নের্তৃত্বে এই গবেষক দল এন্টিবায়োটিক্স মুক্ত এবং এন্টিবায়োটিক্স বিকল্প ব্রয়লার উৎপাদনে নিরলসভাবে গবেষণা করে যাচ্ছেন। গবেষকদল গতানুগতিক ধারাবাহিকতার উর্ধ্বে থেকে পরীক্ষাগারে সক্সলেট পদ্ধতিতে প্লান্ট নির্যাস থেকে সম্পূর্র্ণ নিরাপদ ব্রয়লার উৎপাদনে সফলতা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। গবেষক দল মনে করেন অধিকতর গবেষণার মাধ্যমে নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেল হিসেবে দাঁড়াবে।

গবেষণার বিষয়ে জানতে চাইলে ড. মো. শফিকুল ইসলাম জানান, মানুষ এবং প্রাণীর রোগবালাই নিয়ন্ত্রণে এবং চিকিৎসায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঔষধ এবং এন্টিবায়োটিক্স অত্যাবশ্যকীয়। তবে অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা প্রদানের ফলে রোগ জীবাণু ও এন্টিবায়োটিকের অবশিষ্টাংশ মুরগির শরীরে থেকে যায়, যা খাদ্যের মাধ্যমে মানুষের শরীরে আসে। অপ্রয়োজনীয় এন্টিবায়োটিক ব্যবহার এড়াতে প্রাণী চিকিৎসকের পরামর্শে সঠিক এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করা দরকার। সঠিক মাত্রা ও প্রত্যাহার সময়সীমা মেনে চললে মুরগির মাংসে এন্টিবায়োটিক এবং রেসিডিও সহনশীল মাত্রায় কমে আসে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিমুক্ত। সে বিষয়গুলো মাথায় রেখে আমি ব্রয়লারে বিভিন্ন ধরণের প্লান্টের নির্যাস, হারবাল নির্যাস ব্যবহার করেছি।

গবেষণায় দেখা যায়, এন্টিবায়োটিক্সের চেয়েও সেগুলো ভালো কাজ করেছে। দেশে প্রচলিত ব্যবহৃত এন্টোবায়োটিক্স ও গ্রোথ প্রমোটারের চেয়েও আমাদের পরীক্ষাগারে তৈরি প্লান্টের নির্যাস কিংবা হারবাল নির্যাস সেসবের থেকে ভালো কাজ করেছে। ব্রংলারের ওজন তুলনামূলক বেশি পাওয়া গেছে, রোগবালাই ও মৃত্যুর হার অনেক কম। আমি মনে করি এন্টিবায়োটিক্সস মুক্ত পোলট্রি শিল্প এবং এন্টিবায়োটিক্সস বিকল্প পোলট্রি উৎপাদনে এই গবেষণাটি দেশে একটি নতুন বিপ্লবের সূচনা করবে। তবে এটি নিয়ে আরো গবেষণার প্রয়োজন আছে, সেটি আমরা চালিয়ে যাচ্ছি। সেক্ষেত্রে অধিকতর গবেষণার জন্য সরকারি, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাকে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাচ্ছি।

উল্লেখ্য, গবেষক দলের প্রধান ড. শফিক দীর্ঘজীবন জাপানে গবেষনারত ছিলেন। উচ্চ শিক্ষাজীবনে তিনি ‘দি ইউনিভার্সিটি অফ টোকিও’ থেকে পিএইচডি, পোষ্টডক্টরাল, স্পেশাল আমন্ত্রিত গবেষক এবং ভিজিটিং অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিদেশে অবস্থানকালে নিরাপদ খাদ্য এবং সুস্বাস্থ্য সম্পর্কে কৌতুহলী ড. শফিক পিএচিডি গবেষনায় আইবিডি (ইনফ্লামেটরি বয়েল ডিজিজ) এর উপর কাজ করেছেন। ২০১৭ সালে টোকিও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেশে ফিরে পোলট্রি এন্টিবায়োটইক্স রেসিডিউ নিয়ে গবেষণা শুরু করেন এবং অদ্যাবধি সে গবেষণা চলমান।