সকালের নাস্তা করে অফিসে যাব বলে তৈরী হচ্ছি। হঠাৎ দেখি আমার রোটারির পরীক্ষিত বন্ধু শাহীনের টেলিফোন, আমার নাস্তায় মনোযোগ নষ্ট হয়, ফোন তুলে সেই চির চেনা সুরে আরিফ ভাই ইন্ডিয়ার বন্ধুগন আসবে, তাদের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এখানে বলে রাখা ভাল যে- রোটারি ক্লাব অব রাজশাহী সেন্ট্রালের ৩য় অভিষেক উপলক্ষে কোলকাতার রোটারি ক্লাব অব সানসিটি, রোটারি ক্লাব অব কবিতার্থ কোলকাতা, রোটারি ক্লাব অব মধ্যমগ্রাম মেট্রোপলিটন এর প্রায় ৭/৮ জন সদস্য অংশগ্রহনের জন্য রাজশাহীতে আসছেন।
তবে তাদের মধ্যে একজন আছেন, যিনি পেশায় অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ হলেও রোটারি থ্যালাসেমিয়ার আর্ন্তজাতিক বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত। তিনি রোটারি ইন্টারন্যাসনালের জেলা-৩২৯১ এর ২০২৫-২৬ সালে গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, রাজশাহীতে তিনি থ্যালাসেমিয়ার উপর একটি জনসচেতনতা মুলক সেমিনারে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পঠিত ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে একটি ট্রেনিং সেশানে ট্রেনিং দিতে আগ্রহী। আমি একে একে আমার সকল পরিচিত স্থানে বিশেষ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ভেটেরিনারি এন্ড এনিমেল সায়েন্সেস অনুষদের অধিকর্তা প্রফেসর ড. মো: জালাল উদ্দিন সরদার, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. বিধান চন্দ্র দাস, পুলিশ লাইন স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. মো: গোলাম মাওলা এবং রাজশাহী মডেল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষের সাথে কথা বলে প্রায় একাধিক সেমিনারের আয়োজন করলাম। সব কিছু ভালই চলছিল। কিন্তু হঠাৎ বাঁধ সাধল ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটি। টানা ৩ দিনের ছুটিতে ছাত্র-ছাত্রী পাওয়া দুষ্কর হবে। ফলে বিকল্প হিসেবে আমি আমাদের ক্লাবের রোটারি কমিউনিটি ক্রপস পুকুরিয়া হোপে- স্থানীয় গন্যমান্য ব্যাক্তি বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটির কর্মী বাহিনীদের নিয়ে পুকুরিয়া হোপ এর সভাপতি মিসেস সেলিনা বেগমকে দায়িত্ব প্রদান করলাম।
অত:পর ২৮ সেপ্টেম্বর বিশ্ব জলাতংক দিবসে রোটারি ইন্টারন্যাসনালের জেলা-৩২৯১ এর পাষ্ট ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর ঝুলান বসু, পাষ্ট ডিস্ট্রিক্ট সেক্রেটারি কল্যান কুমার বোস, ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর নমিনি ডা. রামেন্দু হোমচৌধুরী, দিবাকর শাহী, রাখাল রায়, সুপর্না মিত্র ও আমিনুল ইসলাম শাহীনকে সঙ্গে নিয়ে ভেন্যুতে পৌছালাম। এছাড়া আমাদের ক্লাবের অফিসিয়াল চাটার্ড প্রেসিডেন্ট হাসিবুল হাসান নান্নু, ডাইরেক্টর শিউলি হাসান, সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান, সেক্রেটারি চৌধুরী মুখলেসুর রহমান সুমন, মো: আতিকুর রহমান ও অন্যান্য রোটারিঅ্যাক্টর নিয়ে যথারীতি অনুষ্ঠান শুরু করলাম।
ডা. রামেন্দু হোম চৌধুরী যখন তার বক্তব্য ও তথ্য উপাত্ত উপাস্থাপন করলেন আমরা সকল শ্রোতা-দর্শক একেবারে পিন-পয়েন্ট নিরবতার মধ্যে তার বক্তব্য শুনছিলাম। কখন যে ২ ঘন্টা পার হয়ে গিয়েছে আমরা বুঝতেই পারি নাই। হোম চৌধুরী এমন একজন প্রেজেন্টার যার বক্তব্য আমাদের সকলকে এমনভাবে আকৃষ্ট করে যে, আমারা সকলে থ্যালাসেমিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করি। একে-একে দুই দেশের রোটারিয়ান বন্ধুদের মাঝে থ্যালাসেমিয়া অ্যাম্বাসেডর হিসেবে মেডেল, পিন, ক্যাপ ও ক্লাবের পতাকা ও টোকেন উপহার আদান-প্রদান হয়। অনুষ্ঠানটি এমনই এক অবস্থানে গিয়ে দাড়ায় যে, মনে হয় আমরা একে অপরের সাথে বহুযুগ ধরে পরিচিত। আজ তাদের চলে যাওয়া প্রায় তিন দিন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আত্মার মিলনের বিচ্ছেদের বেদনা এখনও আমাদের সকলের মধ্যে রয়ে গিয়েছে।
থ্যালাসেমিয়ার যৌথ উদ্দোগের মাধ্যমে আমাদের মাঝে একটি আন্ত-দেশীয় আন্ত ক্লাব যোগ সুত্রের নতুন দ্বার উন্মোচিত হল। এর আহবান- থ্যালাসেমিয়া ছোয়াচে বা জীবানু ঘটিত রোগ নয়। এর প্রধান উপায় প্রতিকার। যা কেবল রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে থ্যালাসেমিয়ার বাহক নন এমন মানুষে-মানুষে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে, বিশ্ব- হতে থ্যালাসেমিয়া নির্মুল সম্ভব।
ড. মো; হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ
প্রেসিডেন্ট, রোটারি ক্লাব অব রাজশাহী সেন্ট্রাল, রাজশাহী।