পল হ্যারিস হতে রোটারি ক্লাব অব রাজশাহী সেন্ট্রাল

রোটারিয়ান ড. মো; হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর অ্যাটর্নি পল হ্যারিস রোটারি সংগঠনটির স্বপ্ন দেখেন। এরই ফলশ্রুতিতে তিনি বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের পেশাদার ব্যক্তি এবং যাদের বিশ্বজুড়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় দীর্ঘ ট্র্যাক রেকর্ড রয়েছে এমন ব্যক্তিদের নিয়ে রোটারি সংগঠনটি সৃষ্টির লক্ষে ১৯০৫ সালের ২৩ শে ফেব্রুয়ারী তার তিনজন বন্ধু-এগুস্তাভ লোহার, সিলভেস্টার শিয়েল, হিরাম ই শোরে দের নিয়ে শিকাগোর ডাউনটাউনে ডিয়ারবর্ন স্ট্রিটের ইউনিটি বিল্ডিংয়ে এক বৈঠকে মিলিত হন। এই ইউনিটি বিল্ডিংটি আজ বিশ্বে মানবতার ইতিহাসের স্বাক্ষী হয়ে আছে। প্রথম দিকে এই সংগঠনের উদ্দেশ্য ছিল পরস্পরের সাথে কুশল বিনিময়সহ অর্থবহ আজীবন বন্ধুত্ব তৈরী করা যা পরবর্তীতে সময়ের সাথে সাথে মানবসেবায় সম্প্রসারিত হয়। প্রথমদিকে তারা সাপ্তাহিক ক্লাব মিটিংগুলো একে অপরের অফিসে চক্রাকারে করতেন, যার কারনে তারা সংগঠনটির নাম রোটারি রেখেছিলেন। কিন্তু এক বছরের মাথায় ক্লাবটি এত বড় হয়ে ওঠে যে এর জন্য একটি নিয়মিত সভাস্থলের প্রয়োজন হয়ে পড়ে।

আমেরিকার ন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব রোটারি ক্লাব ১৯১০ সালে গঠিত হয়েছিল। একই সালের ৩রা নভেম্বর কানাডার উইনিপেগে রোটারি ক্লাবের একটি মিটিংয়ে একে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা হিসেবে ঘোষনা করা হয়। উত্তর আমেরিকার বাইরে ১৯১১ সালের ফেব্রæয়ারীতে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিনে প্রথম রোটারি ক্লাব ডাবলিন প্রতিষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৯১২ সালের এপ্রিলে রোটারি উইনপেগ ক্লাবকে চাটার্ড করে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে একটি ক্লাবের সংযোজনের ফলে ১৯১২ সালে রোটারি ক্লাব পরিবর্তিত হয়ে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব রোটারিতে পরিণত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনে রোটারি ক্লাবের সংখ্যা ৯ থেকে ২২ এ উন্নীত হয় এবং অন্যান্য দেশেও এর ব্যাপ্তি লাভ করে। ১৯১৬ সালে কিউবায়, ১৯১৯ সালে ফিলিপাইনে এবং ১৯২০ সালে ভারতে তথা এই উপমহাদেশে রোটারির যাত্রা শুরু হয়।

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব রোটারি ১৯২২ সালে নাম পরিবর্তিত হয়ে রোটারি ইন্টারন্যাশনাল হয়। ১৯২৩ হতে ১৯২৮, এই সময়ের মধ্যে অ্যাটওয়েল প্রিন্টিং অ্যান্ড বাইন্ডিং কোম্পানির দ্বারা দ্যা রোটারিয়ান মাসিক ম্যাগাজিনটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল। ১৯২৫ সাল নাগাদ রোটারি ক্লাবে ২০০ হতে ২০০০০ এরও বেশি সদস্যের সংস্থায় পরিণত হয়।

প্রেসিডেন্ট (১৯৪৯-৫০) পার্সি সি হজসনকে রোটারির ঐতিহ্য থিম তৈরির অনুরোধে ১৯৪৯ সালে আন্তর্জাতিক সমাবেশে ভাষণে বলেন "glorious opportunity to impart knowledgeÓ and that Òlack of Rotary knowledge can be a deterrent to the successful operation of a Rotary club" যা নেতাদের মধ্যে আশা সঞ্চারিত করে। প্রেসিডেন্ট পার্সি সি হজসনের ৮৩ শব্দের এই থিম আজকের থিমগুলির তুলনায় দীর্ঘ হলেও এর ভিতর চারটি উদ্দেশ্য নিহিত ছিল যা এখনও রোটারির উদ্দেশ্য এবং আশাকে ধরে রেখেছে। পরবর্তী দশকগুলিতে প্রেসিডেন্টরা থিম লোগো, ল্যাপেল পিন, টাই এবং স্কার্ফ প্রবর্তন করেছিলেন। এই যাত্রার হাত ধরে স্যার জেমস ও হার্বাট ব্রায়ান্ট ঢাক সফর করেন এবং এইচআর উইলকিনসন, এসজেই কুমারী, অধ্যাপক রমেশ চন্দ্র মজুমদার এবং আলতাফ হোসেনের মতো নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিদের সাথে দেখা করেন। অবিভক্ত বাংলাদেশে প্রথম ডিস্ট্রিক্ট এর অধীনে রোটারি ক্লাব অব কোলকাতার পৃষ্ঠপোষকতায় ১৯৩৭ সালের ২২ শে মার্চ চার্টাড প্রাপ্ত হয়।

তৎকালীন (২০২০-২১) রোটারি গভর্ণর ব্যারিষ্টার মুতাসিম বিল্লাহ ফারুকি মাধ্যমে রাজশাহীর বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব রোটারিয়ান হাসিবুল হাসান নান্নুর নেতৃত্বে রোটারিয়ান মোঃ রফিকুল ইসলাম রিপন, রোটারিয়ান প্রফেসর ড. মোঃ জালাল উদ্দিন সরদার, রোটারিয়ান খাজা খালেদ লিজার, রোটারিয়ান মোঃ মিজানুর রহমান ও রোটারিয়ান ড. মোঃ হেমায়েতুল ইসলাম আরিফের সম্মিলিত পরিকল্পনায় রাজশাহীর অঙ্গনে রোটারির নতুন যুগের সুচনা হয় “রোটারি ক্লাব অফ রাজশাহী সন্ট্রোল “। রোটারিতে আগমনের জন্য রাজশাহীর রোটারির অঙ্গনের সর্বজনীন গৃহীত ব্যক্তিত্ব রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য রোটারিয়ান প্রফেসর ড. মোঃ আলতাফ হোসেনকে এই লেখক কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০ শে মে ২০২২ রোটারি ক্লাব অব রাজশাহী সেন্ট্রালের দ্বারা রোটারি উত্তরবঙ্গ তথা রাজশাহী অঞ্চলে নতুন সূর্যের আগমন এবং যুগের সুচনা হল ।

-লেখক: প্রেসিডেন্ট, রোটারি ক্লাব অব রাজশাহী সেন্ট্রাল, রাজশাহী।