আজ ১২ ডিসেম্বর! একজন মমতাময়ী মাকে হারানোর দিন! বিয়োগান্তির দিন! বেদনা-ক্লিষ্ট-বিমূঢ় বিধুরে ভারাক্রান্ত দিন! কষ্টের মূর্ছনা-যন্ত্রণার দিন! এক অনুভূতি জানিয়ে ড. মু. তোফাজ্জল হোসেন তার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জানান, মায়ের গর্ভে জন্ম লাভ করেছি আমি/আপনি সকলে। তাঁর তুলনা তিনি নিজেই। তিনি এক স্বর্গীয় বিস্ময়কর প্রতিষ্ঠান। তিনি সম্মানের শীর্ষে মহান সিংহাসনে অধিষ্ঠিত। পৃথিবীর সবচেয়ে প্রিয় ও মমতামাখা শব্দ ‘মা’।
মা’ শব্দটি উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মানসপটে ভেসে ওঠে অসীম, চিরন্তন আত্মত্যাগ, এক মমতাময়ী অসীম শ্রদ্ধার্ঘ ভালবাসা। মা’ মানেই মহাবিশ্বের গরীয়সী, লালন-পালনকারী বর্ণনাতীত অনন্যা একজন মহীয়সী নারী। জীবনের প্রতিটি স্তরে তাঁর কীর্তির কীর্তন অসাধারণ।
ড. মু. তোফাজ্জল হোসেন জানান, ২০১৮ সালের এই দিনে (বুধবার সকাল ১০ টায়) তাঁর মমতাময়ী মা “তারা বানু” (মাতব্বরবাড়ী, পশ্চিমগাঁও, রূপগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ) শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করে কবরের অতিথি হয়েছেন। মৃত্যুকালে তিনি ড. হোসেনসহ তাঁর তিন ছেলে-এক মেয়ে, অনেক আত্বীয়-স্বজন, গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুবার্ষিকীকে ঘিরে পরিবারের পক্ষ হতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এই মহীয়সী নারী প্রাতিষ্ঠানিক কোন লেখাপড়া না শিখেও তাঁর সন্তানদেরকে আল্লাহর রহমতে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। আজ প্রতিজ্ঞা করার দিন। সকল মায়ের প্রতি ভালোবাসা-শ্রদ্ধা-দোয়া স্থায়ী হোক বছরজুড়ে।
জন্ম লাভের পর মমতাময়ী মা হচ্ছেন শিশুর ভবিষ্যতের বুনিয়াদ, শিশুর সর্বোৎকৃষ্ট বিদ্যাপীঠ। তিনিতো সৃষ্টিকর্তার অসীম দান। আমাদের সকলের প্রথম স্পর্শ মা, প্রথম পাওয়া মা, প্রথম শব্দ মা, প্রথম দেখা মা, আমাদের স্বর্গ মা। আমি/আপনি বোকা হতে পারি, অনেক খারাপ ছাত্র হতে পারি, দেখতে অনেক কালো হতে পারি, কিন্তু আমার মায়ের কাছে আমি/আপনিই শ্রেষ্ঠ সন্তান। সবচেয়ে টেকসই শক্তি মায়ের ভালবাসা। তাঁর একাগ্রতা, মমতা আর বুদ্ধিমত্তা আমাদেরকে মননশীল, দায়িত্বশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে ।
মা হল পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক, যেখানে আমরা আমাদের সব দুঃখ, কষ্ট জমা রাখি এবং বিনিময়ে নেই অকৃত্রিম ভালোবাসা। পৃথিবীটা অনেক কঠিন, সবাই সবাইকে ছেড়ে যায়, সবাই সবাইকে ভুলে যাই, শুধু একজন ছেড়ে যায় না, ভুলেও যায়না যিনি সারা জীবন থাকবে। সে মানুষটি হচ্ছে আমার/আপনার মা। আর তাইতো মাকে নিয়ে কবিতা, উপন্যাস, গান রচনা হয়েছে অসংখ্য ।
পবিত্র কোর-আনসহ বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থ মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার জোর নির্দেশনা রয়েছে। একটি হাদীসে আমাদের প্রীয় নবী মুহাম্মদ সঃ বলেছেন, মাতার পদতলে সন্তানের বেহেশত। তাই অনুকম্পায় তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাভরে বিনয়াবনত থাকতে হবে। ওহ!আহ! উচ্চস্বরে কথা বলা যাবেনা (কুরান-১৭:২৪)।
মমমতাময়ী মা আপনার/আমার অস্তিত্ব জুড়ে জীবনোপায় জীবনোচ্ছ্বাসের জীনম (Genome) কোডের ORF code (Open reading frame, যা ডিএনএ-এর অন্যত একটি অংশ)। জৈব সংরক্ষিত অঞ্চলে (Conserved region) তাঁর সাথে অসাধারন মিল। তাঁর জীবনবাহী অণু (coding) বহন করে চলছি, চলবো আমি/ আপনি আমরণ। পুরোটাই mRNA (Messenger RNA), বায়োলজিক্যাল জৈব প্রতিলিপি (Transcription) কিংবা অনুবাদ (Translation) সব প্রক্রিয়াতেই মিলের সাদৃশ্য অসাধারণ। তাঁর কোন দায়িত্বই অবেহেলিত নয়; এটি যেন সৃষ্টিকর্তার এক অপরূপ গুণী প্রদীপের আলোকিত কীর্তন। লেখাপড়া না জানা “মা”ও সন্তানের আদর্শ শিক্ষক হিসেবে হৃদয়ে প্রথম শক্তিগড় সূচনা করেন।
আমার “মা” আমার সবচেয়ে বড় মাস্টার। গ্রামের বন্ধুদের সাথে অহেতুক ঘুরাফেরা রোধকল্পে মা পড়ার ঘরে বসে থাকতেন অতন্দ্র প্রহরীর মতো। প্রাতিষ্ঠানিক কোন প্রতিষ্ঠানে মা লেখা পড়া না শিখেও অমাদের ভাই-বোনদের জন্য মা ছিলেন আদর্শ শিক্ষিকা। আমাকে দেখার জন্য ওনার সব কাজ বন্ধ হলেও গরম দুধ দিতে ভুল করতেননা কখনো। আবার এই মা জননী শত বাধাঁ বিপত্তি পাড়ি দিয়ে আদরের নাড়ী ছেঁড়াকে খঁজে বেড়ায় সব সময়-যে কোন বিপদ-মহামারীতে, হাজির হন সবার আগে। একবার “মা” সাঁতার কেটে আমাকে মৌমাছির আক্রমণ হতে (বন্যা কবলিত এলাকা ছিল), আবার পানিতে পড়ে গেলে মা গভীর খাল হতে আমাকে উদ্ধার করেন।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় বিশ্ব মুক্ত সংবাদপত্র দিবসে (৩ মে ২০০২) দুর্বৃত্তদের ছুড়িকাঘাতে ঢাকাতে আহত হই। সুস্থ হয়ে কিছুদিন পর মার কাছে গেলে তিনি ঘটনা শুনেই অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ভেবে দেখেছেন! সেই মার সাথে আমাদের কি করা উচিত? কিংবা যাঁরা কবর অতিথি হয়েছেন তাঁদের জন্য কতবার অতিরিক্ত নফল আদায় করে রব তুলেছি “রাব্বির হাম-হুমা কামা রাব্বা ইয়ানি ছাগিরা। মা তুমি চলে গেছো সব ছেড়ে বহুদূরে, আজও অনুভব করি, তুমি আছো আমার অস্তিত্ব জুড়ে। আমার সব কিছুর পিছনে তুমি। হে আল্লাহ!! আমার বাবা-মা সহ সকল পিতামাতাকে আপনি মাফ করে দিন এবং দুনিয়া-আখেরাতে সম্মানিত করুন। প্রতিটি মুহুর্তই মাকে খঁজে পেতে চাই।