ওমরাহ সফর-২০২৩: স্বপ্ন ও স্মৃতি- (৩য় পর্ব): জমজমের পানি পান করতে করতেই মনে পড়ে এর ইতিহাস

মাহফুজুর রহমান: জমজমের পানি পান করতে করতেই মনে পড়ে এর ইতিহাস। হযরত ইবরাহিম (আঃ)-এর ইতিহাসের সাথে জমজম কূপের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। হযরত ইবরাহিম (আঃ) যখন শিশু ইসমাঈল (আঃ)সহ বিবি হাজেরা (আঃ)কে মক্কায় নির্বাসনে পাঠান, তখন থেকেই জমজম কূপের আবির্ভাব হয়। হজরত ইবরাহিম (আঃ) যখন সিরিয়া থেকে মক্কায় পৌঁছেন তখন বিবি হাজেরা (আঃ) এবং দুধের শিশু হজরত ইসমাঈল (আঃ) কে মক্কার মরুভূমিতে রেখে সিরিয়া প্রত্যাবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তখন এক মশক পানি এবং একটি থলের মধ্যে কিছু খেজুর তাদের কাছে রেখে গেলেন। হজরত হাজেরা (আঃ) কয়েকদিন পর্যন্ত সে পানি ও খেজুর খেলেন এবং নিজের কলিজার টুকরা হজরত ইসমাঈলকে দুধ পান করালেন।

কিন্তু এক সময় মশকের পানি ও খেজুর ফুরিয়ে এল। তিনি তখন এক চরম অসহায়তার মধ্যে নিপতিত হলেন। তাঁর শিশু সন্তানটিও ক্ষুধার তাড়নায় ছটফট করতে লাগলো। বিবি হাজেরা তখন সন্তানের দুর্দশায় তাঁর আদরের দুলালকে দুধ পানে সমর্থ হলেন না। এমতাবস্থায় তৃষ্ণাকাতর মা পানির খোঁজে সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে দ্রুতবেগে দৌঁড়াতে লাগলেন।

পরপর সাতবার দৌড়ানোর পরও কোনো পানি না পেয়ে মহান আল্লাহর কাছে সাহায্য চান। আল্লাহ রাববুল আলামীন মা হাজেরার দোয়া কবুল করেন। তখন পুত্রের কাছে গিয়ে দেখলেন আল্লাহর কুদরতে তার দুই পায়ের নিচে একটি পানির ফোয়ারা জেগে উঠেছে এবং তা ক্রমশ উথলে উঠছে ও প্রবাহিত হতে চাচ্ছে। হজরত বিবি হাজেরা তখন অত্যন্ত আনন্দিত হলেন এবং চারদিকে পাড় বেঁধে পানি থামানোর চেষ্টা করলেন। তিনি পানিকে থামার নির্দেশ দিয়ে উচ্চস্বরে বলছিলেন ‘জমজম’ অর্থাৎ থেমে যাও। হযরত হাজেরার উচ্চারিত সে শব্দেই পৃথিবীর সবচাইতে পবিত্র এ কূপের নাম হয়ে যায় ‘জমজম’। যে কুপ থেকে আজও প্রতিদিন দেড় থেকে দুই লক্ষ লিটার পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। যাকে বলা হয় পৃথিবীর সর্বোৎকৃষ্ট পানি।

আমরা বাংলাদেশ থেকে ইহরাম বেধে এসেছি সে জন্য আমরা সিদ্ধান্ত নেই ওমরাহ এর কাজ সমাপ্ত করার। সেখান থেকে বের হয়ে এসে সকালের নাস্তা সেরে আমরা চলে যাই ওমরাহ এর মূল কাজে। ওমরাহ এর মূল কাজ মূলত চারটি। ১. ইহরাম বাঁধা ২. কাবা শরিফ সাতবার তাওয়াফ করা ৩. সাফা-মারওয়া সাতবার সাঈ করা এবং ৪. মাথা মুন্ডন করা অথবা মাথার চুল ছাটা।

আমরা নিয়ম অনুযায়ী সর্বপ্রথম তাওয়াফ শুরু করি। আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করছি। আর আল্লাহর শিখিয়ে দেওয়া দোয়া করছি। সুবহানাল্লাহ। এই সময়কার মনের অনুভ’তি আসলে লিখে বুঝাতে পারবোনা।
১.রাব্বানা আ’তিনা ফিদ্দুনিয়া হাছানাতাঁও ওয়াফিল আখিরাতি হাছানাতাঁও ওয়াক্বিনা আজাবান্নার।
[অর্থঃ হে আল্লাহ্ তুমি আমাকে ইহকালীন যাবতীয় সুখ-শান্তি ও পরকালীন যাবতীয় সুখ-শান্তি প্রদান কর। আর দোজখের আগুন থেকে আমাকে রক্ষা কর।]
২.রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাঈয়ানী সাগিরা।
[অর্থঃ হে আল্লাহ্ আমার মাতা-পিতার প্রতি আপনি সেই ভাবে সদয় হউন, তাঁরা শৈশবে আমাকে যেমন স্নেহ-মমতা দিয়ে লালন-পালন করেছেন।] . (সূরা বণী ইসরাইল, আয়াতঃ ২৩-২৫)
৩.রাব্বানা হাবলানা মিন আযওয়াাজিনা ওয়া যুররিইয়াতিনা কুররাতা আইইনিও ওয়াজ আলনা লিল মুত্তাক্বিনা ইমামা।
[অর্থঃ হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদিগকে আমাদের স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিগণ হতে নয়নের তৃপ্তি দান কর এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানাও।] . (সূরা আল ফুরকান, আয়াতঃ ৭৪)

চিন্তা করে দেখুন আপনার মনের এই দোয়াগুলো আল্লাহর শিখিয়ে দেওয়া ভাষায় করছেন এমন একটি জায়গাতে যেখানে দোয়া কবুলের সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে।। আল্লাহু আকবার।এভাবে তাওয়াফ শেষ করে আমরা আবারও জমজমের পানি পান করি এবং মা’কামে ইবরাহিমের সামনে দু’রাকাত নামাজ আদায় করি। অতঃপর আমরা পরবর্তি ধাপ সাফা-মারওয়া সায়ী করার জন্য সাফা পাহাড়ের উপরে উঠি। -চলবে
লেখক:জেনারেল ম্যানেজার, এগ্রোভেট ফার্মা