মাহফুজুর রহমান: ৩ হিজরির শাওয়াল মাসে ইসলামের দ্বিতীয় যুদ্ধ ওহুদ সংঘটিত হয় এখানে। মদিনার মসজিদে নববি থেকে উত্তরে পাঁচ কিলোমিটার দূরে ওহুদের প্রান্তর। বদর যুদ্ধের ঠিক এক বছর পর ওহুদ যুদ্ধ হয়। মক্কার অমুসলিম ও মদিনার মুসলিমদের মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ওহুদ যুদ্ধে ওহুদের প্রান্তরে ছোট্ট আকারের পাহাড় জাবালে রুমা অর্থাৎ রুমা পাহাড়ে নবীজি ৫০ জন তিরন্দাজ সাহাবিকে নিযুক্ত করে বলেছিলেন, ‘আমাদের জয়-পরাজয় যা-ই হোক, তোমরা এখানে থাকবে।’ রাসুল (সা.) তাঁদের আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.)-এর নেতৃত্বে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যুদ্ধের এক পর্যায়ে শক্রু বাহিনীকে পালাতে দেখে নিজেদের জয় হয়েছে ভেবে তারা নবীজির নির্দেশনার কথা ভুলে যান এবং গনিমতের মাল সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু নবীজির নির্দেশ উপেক্ষা করার মাশুল তাদের দিতে হলো। যখন তিরন্দাজরা গনিমতের মাল সংগ্রহে ব্যস্ত ছিলেন, তখন অমুসলিম বাহিনী গিরিপথ অতিক্রম করে মুসলমানদের পেছন দিক থেকে আক্রমণ করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিল।
অনাকাঙ্খিত এই পরিস্থিতিতে মুসলমানরা দিগি¦দিক ছুটতে লাগলেন। অমুসলিমদের আক্রমণে হজরত মুসআব ইবনে উমায়ের (রা.) ও নবীজির চাচা হজরত হামজা (রা.) শহীদ হন। রাসূল (সঃ) এই যুদ্ধে আহত হন। রাসূল (সঃ) এর দন্ত মোবারক শহীদ হয় এ যুদ্ধে। কিন্তু গুজব ছড়িয়ে পড়ে তিনি নিহত হয়েছেন। বর্বর কুরাইশ যোদ্ধারা নবীজির ওপর সর্বাত্মক আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়ল। নির্মম নির্দয় হামলায় তাঁর জীবন বিপন্নপ্রায়। সাহাবায়ে কিরাম নিজেদের জীবন বাজি রেখে, নিজেদের বুককে ঢাল বানিয়ে নবীজিকে রক্ষার প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকলেন। হযরত হামজা (রাঃ) এর হত্যাকারী ইবনে কামিয়া নবীজিকে তরবারি দ্বারা কঠিন আঘাত করল। তালহা ইবনে উবায়দুল্লাহ হাত দিয়ে ঠেকালে তাঁর আঙুল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে গেল, নবীজির শিরস্ত্রাণ বিদীর্ণ হয়ে দুটি লৌহ কড়া তাঁর কপালে বিঁধে গেল, নবীজি অচেতন হয়ে পড়ে গেলেন। সেই ওহুদের প্রান্তর এটি।
হজরত হামজা (রাঃ) সহ ওহুদে শহীদ হওয়া সাহাবাদের কবর রয়েছে এখানে। আমরা কবর জিয়ারাত করলাম। নূর ভাইয়ের আবেগতাড়িত মুনাজাতে আমরা শরিক হলাম। যেখানে ওহুদ যুদ্ধের শহীদ সহ যুগে যুগে আল্লাহর জমিনে তার দিনকে বাস্তবায়ন করতে যেয়ে যে সকল মুজাহিদরা শহীদ হয়েছে সে সকল শহীদদের জন্য দোয় করা হলো। রাসূল (সঃ) আহত হবার পর যে গিরিখাতে তাকে নিয়ে আশ্রয় দেওয়া হয়েছিলো সেখানেও গেলাম আমরা। ফেরার পথে মদিনার মানুষ যে মেহমানদারীতে জগতবিখ্যাত তার একটি ছোট প্রমাণ আমরা পেলাম। আমরা রওনা হয়ে কিছুদূর আসতেই বোরখা পরিহিত একজন নারী আমাদের ইশারা দিয়ে গাড়ী দাড়াতে বলেন। তার উদ্দেশ্যে আমাদের মেহমানদারী করাবেন। আমরা তার মেহমানদারী গ্রহণ করতেই কিছুদূর থেকে আরএকজন অল্প বয়সী তরুন ছুটে আসলেন আমাদের দিকে। তার উদ্দেশ্যও আমাদের মেহমানদারী করাবেন। আলহামদুল্লিাহ। কি চমৎকার এই দৃশ্য।-চলবে
-লেখক:জেনারেল ম্যানেজার, এগ্রোভেট ফার্মা