আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আযহায় কোরবানির পশুর কোন সংকট হবে না -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-আযহায় কোরবানির পশুর কোন সংকট হবে না এবং কোরবানির পশুর সরবরাহ ও ব্যবস্থাপনায় সরকারের পরিপূর্ণ প্রস্তুতি আছে বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মোঃ আব্দুর রহমান।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে তাঁর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আসন্ন ঈদ-উল-আযহা উপলক্ষ্যে কোরবানির পশুর চাহিদা নিরূপণ, সরবরাহ ও অবাধ পরিবহন নিশ্চিতকরণ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় মন্ত্রী এ কথা জানান।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী ও আওয়ামীলীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা মোঃ আব্দুর রহমান বলেন, অন্যান্য বছরের মত এবারও কোরবানির পশুর চাহিদা নিরুপন করা হয়েছে। কোরবানির চাহিদার চেয়ে ২২ লক্ষ ৭৭ হাজার ৯৭৩ টি অতিরিক্ত গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। এবার কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ১ কোটি ২৯ লক্ষ ৮০ হাজার ৩৬৭টি যা গতবারের চেয়ে ৪ লক্ষ ৪৪ হাজার ৩৪ টি বেশি। ফলে কোরবানির পশু নিয়ে কোনরকম সংশয়, সংকট বা আশঙ্কার কারণ নেই।

আমরা সুন্দরভাবে আসন্ন ঈদ উল আযহা উদযাপন করতে চাই উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ঈদ-উল-আযহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এটি যাতে স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে এবং পরিপূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে উদযাপন করা যায় সে লক্ষ্যে মৎস ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও সরকারের অন্যান্য দপ্তর-সংস্থা কাজ করছে। কোরবানির পশুর জন্য অতীতে পর মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হতো। কিন্তু আমরা এখন দেশে উৎপাদিত পশু দিয়েই কোরবানি সম্পন্ন করতে পারছি বলে তিনি মন্তব্য করেন।

মন্ত্রী বলেন, দেশে অবৈধ উপায়ে গবাদিপশুর অনুপ্রবেশ যেন না ঘটতে পারে সেজন্য সীমান্তবর্তী জেলাসমূহে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে আমাদের প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা, খামারি ও উদ্যোক্তারা সম্মিলিতভাবে কাজ করায় প্রাণিসম্পদ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এ খাতে আমাদের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।

কোরবানির হাটে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার আহবান জানিয়ে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী বলেন, রোগাক্রান্ত পশু হাটে বিক্রি করতে দেওয়া হবে না। ক্রেতা-বিক্রেতা কেউ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখা হবে। হাটে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য পর্যাপ্ত সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।

মন্ত্রী আরও বলেন, বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারও কোন খামারি নিজ বাড়ি থেকে পশু বিক্রি করলে তাকে হাসিল দিতে হবে না। কোন খামারি তার পশু দূরবর্তী হাটে নিতে চাইলে, রাস্তাঘাটে জোর করে নামাতে বাধ্য করা যাবে না। এক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, স্থানীয় সরকারের ইউনিট তথা পৌরসভা, উপজেলা বা ইউনিয়ন পরিষদ, সিটি কর্পোরেশন এ বিষয়টি নিশ্চিত করবে। হাটে আনার পথে কেউ প্রাণী বিক্রি করলে তার কাছ থেকে ইজারা গ্রাহক জোর করে চাঁদা বা হাসিল গ্রহণ করতে পাবে না। এটা আমরা নিশ্চিত করতে চাই। নগদ টাকা বহন না করে যথাসম্ভব বিকল্প উপায়ে স্মার্ট পদ্ধতিতে আর্থিক লেনদেন করার জন্য তিনি খামারিদের পরামর্শ প্রদান করেন।

মন্ত্রী বলেন, গতবছরের ন্যায় এবছরও অনলাইন প্লাটফর্মে সারাদেশে কোরবানির পশু বিক্রয়ের ব্যবস্থা চালু থাকবে। যা ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের জন্য সুখকর অবস্থা তৈরি করবে। তিনি আরও বলেন, লাভের আশায় কোরবানির অনুপযুক্ত পশু বা রোগাক্রান্ত পশু যাতে কেউ বিক্রির চেষ্টা না করে। প্রতিটি নির্ধারিত কোরবানির পশুর হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম থাকবে। কোরবানির পশু নিরাপদ ও কোরবানি উপযোগী কিনা বা তাদের শরীরে দূষিত পদার্থ প্রবেশ করানো হয়েছে কিনা তারা সেবিষয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে বলে মন্ত্রী এসময় জানান।

মন্ত্রী আরও যোগ করেন, মহাসড়কে বা যেখানে হাট বসালে যান চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এমন কিছু যাতে না হয় এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানানো হবে। সড়কে বা সেতুতে কোরবানির পশুবাহী গাড়িকে প্রাধান্য দেওয়া হবে, যাতে রাস্তায় পশু আটকে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি না হয়। এক্ষেত্রে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ (হট লাইন-১৬৩৫৮) চালু থাকবে। পশুর হাটে কোন রকম সমস্য হলে হট নম্বরে কল করলে প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে মন্ত্রী জানান।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাং সেলিম উদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব এ.টি.এম মোস্তফা কামাল এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডাঃ মোহাম্মদ রেয়াজুল হক, মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ, রেলপথ ও নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি প্রমুখ সভায় অংশগ্রহণ করেন।