এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, বঙ্গবন্ধু পরবর্তী সরকারে মানবাধিকারের সুরক্ষা একমাত্র শেখ হাসিনাই করেছেন। সাংবিধানিকভাবে যার যে আইনের অধিকার সেটা তিনি নিশ্চিত করেছেন। অন্যরা মানবাধিকারের লঙ্ঘন যারা করেছে তার বিচার করা যাবে না এই আইন করেছে। বঙ্গবন্ধুর পরবর্তী বাংলাদেশে মানবাধিকারের সুরক্ষা একমাত্র শেখ হাসিনার সময়ে হয়েছে। শেখ হাসিনার হাতেই বাংলাদেশের মানবাধিকারের সুরক্ষা।
আজ সোমবার (২৯ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম আয়োজিত 'রক্তাক্ত আগস্ট ও মায়ের কান্না' শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
এ সময় মন্ত্রী আরও বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু মানবাধিকারের ফেরিওয়ালা মাঠে নেমেছেন। তারা বলেন, মানবাধিকার সাংঘাতিকভাবে লঙ্ঘন হচ্ছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছিল ১৯৭১ সালে। ত্রিশ লক্ষ মানুষকে হত্যা করা, দুই লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রম নেয়া, জোর করে ধর্মান্তরিত করা, দেশ ত্যাগে বাধ্য করা সেখানে ছিল মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় লঙ্ঘন। সেই লঙ্ঘনকারীদের বিচারের জন্য ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন করেছেন বঙ্গবন্ধু। বঙ্গবন্ধুর সময়ে দালাল আইনে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের কিছু বিচার হয়েছিল। সে সময় কারও সাজা হয়েছিল, কারও বিচার চলছিল এবং কারও তদন্ত চলছিল। এরপর সবচেয়ে বড় মানবাধিকারের লঙ্ঘন হয়েছিল ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার মাধ্যমে।
বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সবচেয়ে বড় বিচার শেখ হাসিনার হাতে হয়েছে উল্লেখ করে শ ম রেজাউল করিম আরও যোগ করেন, ১৯৭১ সালে যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন করে জঘন্য অপরাধ করেছে তাদের বিচার শেখ হাসিনা করেছেন। দেশের রাষ্ট্রপতি, তার স্ত্রী, শিশু পুত্র ও অন্তঃসত্ত্বা নারীসহ অন্যান্যদের হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে এদেশে দ্বিতীয়বার মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছিল। সে সময় যে মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছিল, সেটার বিচার শেখ হাসিনার হাতে হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের ঘটনার বিচার শেখ হাসিনার হাতে হয়েছে। বিডিআর হত্যাকাণ্ডের অপরাধীদের বিচার শেখ হাসিনার হাতে হয়েছে। দেশে যত বড় বড় রাজনৈতিক অপরাধের ঘটনা ঘটেছে, তার বিচার শেখ হাসিনার হতে হয়েছে। শেখ হাসিনা বিচার করেছেন, তাঁর বাবা আইন করে দিয়ে গেছেন। আর যারা অপারেশন ক্লিন হার্টের নামে ৫৮ জন মানুষকে হত্যা করেছিল, তাদের দায়মুক্তি দেয়ার জন্য আইন করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করা যাবে না এ আইন করেছিল জিয়াউর রহমান, আর ৫৮ জন মানুষকে হত্যার দায়মুক্তি আইন করেছিল খালেদা জিয়া। এটা পাশাপাশি বিচার করতে হবে।
১৯৭৯ সালে যেদিন পার্লামেন্টে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করা যাবে না এই আইন পাস করা হয়েছিল সেদিন মানবাধিকারের ফেরিওয়ালাদের ভূমিকা কি ছিল? শেখ হাসিনাকে দেশে আসতে দেওয়া হবে না যেদিন এই সিদ্ধান্ত সরকার নিয়েছিল সেদিন এদেশে মানবাধিকারের কথিত ফেরিওয়ালাদের ভূমিকা কি ছিল? যখন এদেশে সংবিধান পরিপন্থী কাজ হয়েছিল তখন অনেকেই কেন অর্পিত দায়িত্ব পালন করেনি?- প্রশ্ন রাখেন মন্ত্রী।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সত্য উদঘাটনের ধারাবাহিক যোগসূত্রে দেখা যায় জিয়াউর রহমান পূর্বাপর সবকিছুর সাথে জড়িত। বঙ্গবন্ধু হত্যার বেনিফিশিয়ারিও তিনি। তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের দেশের বাইরে ১২টি হাইকমিশনে চাকরি দিয়েছেন। খুনিদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য ইনডেমনেটি অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করেছেন। এভাবে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের পথ রুদ্ধ করার আইন করেছিলেন জিয়াউর রহমান।
মন্ত্রী আরও বলেন, '৭১ সালে যারা পরাজিত হয়েছিল, তারা প্রতিশোধ নিতে দেশে ও দেশের বাইরে একত্রিত হয়ে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে। এটা বিপদগামী কয়েকজন সেনা সদস্যের দ্বারা সৃষ্ট কোন ঘটনা নয়। এই ঘটনার কুশীলবদের সবার বিচার হয়নি। এই ঘটনার যারা বেনিফিশিয়ারি তাদের বিচার হয়নি। বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার দায়িত্বে সেদিন যারা ছিল তাদের বিচার করা হয়নি। তাই বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পূর্ণাঙ্গ বিচার হয়নি। ফৌজদারী কার্যবিধি অনুযায়ী এখনও চার্জশিট হতে পারে অথবা একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিশন করে তাদের স্বরূপ উন্মোচন করতে হবে।
বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরামের সভাপতি কবীর চৌধুরী তন্ময়ের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আপীল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক স্বদেশ রায়, লেখক ও গবেষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতীক, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য মো. নবী নেওয়াজ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য মনিরুজ্জামান মনির এবং লেখক ও গবেষক নিঝুম মজুমদার।