এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:কৃষিতে জীব প্রযুক্তির কার্যকরী ব্যবহার, এর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং বাংলাদেশের বর্তমান জীব নিরাপত্তা কাঠামোকে কার্যকরী করার জন্য একটি জোট তৈরীর উদ্দেশ্য নিয়ে আজ মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সিক্স সিজন হোটেলে "টেক এগ্রিবায়োটেকনোলজি ফরোয়ার্ড: পলিসি অ্যাডভোকেসি কোয়ালিশন" শীর্ষক একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করে ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ।
বাংলাদেশে টেকসই খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জীব প্রযুক্তিসহ আধুনিক উদ্ভাবনী কৃষি সহজলভ্য করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সংস্থাটি। অনুষ্ঠানটির উদ্দেশ্য ছিল সহযোগী সদস্যদের মধ্যে জোট সম্পর্কে মতিবিনিময় করা এবং পারস্পরিক সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষিতে জীবপ্রযুক্তির সুফল প্রচারণার মাধ্যম হিসাবে কাজ করবে এবং নানা প্রতিবন্ধকতা সমাধানে একজোট হয়ে কাজ করা। প্রস্তাবিত জোটটি বর্তমান নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে এবং বিজ্ঞানের বিকাশের জন্য আরও অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে বিজ্ঞান ও জীবপ্রযুক্তি প্রচারে আগ্রহী বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, ছাত্র এবং বিজ্ঞানীদের সংযোগ এবং প্রচার কর্মকান্ডে জড়িত করতে সহায়তা করবে।
অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ, বিশেষজ্ঞ, বেসরকারি খাতের প্রতিনিধি, বিজ্ঞানী, পরিবেশবিদ এবং আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রধান অতিথি কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ রুহুল আমিন তালুকদার, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহার বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।
প্রধান অতিথি বলেন, “বাংলাদেশের কৃষি সাফল্যকে স্বীকার করা এবং উদযাপন করা উচিত, কিন্তু আমাদের অবশ্যই আরও উচ্চ ফলনশীল, টেকসই ফসলের জাত উদ্ভাবন করতে হবে। উচ্চ ফলনশীল, ঘাত সহনশীল ফসলের জাত নিয়ে আসতে আমাদের জিন এডিটিং এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মতো উদ্ভাবনী প্রযুক্তির গ্রহণ ও ব্যবহারে অগ্রাধিকার দিতে হবে। বাংলাদেশ কৃষি রূপান্তরের তৃতীয় ধাপে রয়েছে। এই উন্নয়নকে আরো তরান্বিত করতে স্পিড ব্রিডিং একটি সময়ের দাবি। কৃষি-জীবপ্রযুক্তি এমন একটি প্রযুক্তি যা আমাদের এসডিজি অর্জনে সহায়তা করতে পারে। এছাড়াও, আমাদের এই ধরণের উদ্যোগে আরও নীতিনির্ধারকদের জড়িত করতে হবে”।
ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশের সিইও ও ইডি মোঃ আরিফ হোসেন বলেন, “বিশ্বে কৃষিতে জীবপ্রযুক্তির ব্যবহার গত কয়েক দশকে কৃষকদের তাদের উৎপাদন খরচ কমাতে সাহায্য করেছে এবং সারা বিশ্বে খাদ্যের পুষ্টি গুন, গুণগত মান ও যোগান বাড়িয়েছে। বাংলাদেশ (ডগা ও ফল ছিদ্রকারী) পোকা-প্রতিরোধী বিটি বেগুন একমাত্র জেনেটিকালি পরিবর্তিত ফসল, যা বাংলাদেশ সরকারসহ কৃষকরা পর্যন্ত গ্রহণ করেছে এবং এর সাফাল্যও খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।”
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব ও ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশের সহযোগী পরিচালক জনাব আনোয়ার ফারুক বলেন, "বাংলাদেশী বিজ্ঞানীদের দ্বারা উদ্ভাবিত বায়োটেক শস্য যেমন বিটি বেগুন, বিটি তুলা, ব্লাইট প্রতিরোধী আলু এবং ভিটামিন এ সমৃদ্ধ গোল্ডেন রাইস গ্রহণের ফলে কৃষক ও ভোক্তারা উপকৃত হতে পারেন। এই ফসল খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে রক্ষা করে পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সহায়ক হবে।"
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মূখ্য বিজ্ঞানী ডাঃ মোঃ আব্দুল কাদের, গোল্ডেন রাইসের বিদ্যমান চ্যালেঞ্জের নানা বিষয় নিয়ে বক্তব্য রাখেন এবং ফার্মিং ফিউচার বাংলাদেশ-এর সিনিয়র ম্যানেজার, ফারুক হাসান, জীবনিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ার বিদ্যমান বিধি-বিধান সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন ।
অংশগ্রহণকারীরা উপযুক্ত নীতিমালা বাস্তবায়নের সাথে কৃষি প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যমান রেগুলেটরি ব্যবস্থার উন্নতির উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। তারা একটি জোট গঠন করতে সম্মত হয়েছেন যা জীবনিরাপত্তা এবং জীবপ্রযুক্তির নিয়ন্ত্রন প্রক্রিয়াকে সহায়তা করবে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক কর্মক্ষমতা বিশেষজ্ঞ পুলের সদস্য ড. হামিদুর রহমান, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজির মহাপরিচালক ড.মো.সলিমুল্লাহ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. মো. রফিকুল ইসলাম মন্ডল, এসিআই এগ্রিবিজনেসেসের প্রেসিডেন্ট ডঃ এফ এইচ আনসারী, আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু লুৎফে ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সাবেক নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. ওয়াইস কবির।