এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:মাটির টেকসই ব্যবস্থাপনায় বিজ্ঞানীদেরকে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, আমাদের দেশের মূল সম্পদ হলো মাটি ও পানি। ছোট দেশে বেশি জনসংখ্যার জন্য খাদ্য এই মাটি থেকে উৎপাদন হয়। অধিক ফসলের জন্য সার ব্যবহার করা হচ্ছে, সেটার জন্য মাটির স্বাস্থ্যের ক্ষতি হচ্ছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হচ্ছে, মাটির স্বাস্থ্য ঠিক না থাকলে সেগুলো ভালো ফল দেবে না। আবার ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সারও লাগবে। সবকিছু ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেজন্য, মাটির টেকসই ব্যবহার করতে হবে। এখানে বিজ্ঞানীরা দুর্বল ভূমিকা রাখছে। বিজ্ঞানীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে শুরু করে কর্মজীবনেও হাতেকলমে বা মাঠের শিক্ষা নিতে হবে।
আজ সোমবার সকালে ঢাকায় খামারবাড়িতে কেআইবি মিলনায়তনে বিশ্ব মৃত্তিকা দিবসের আলোচনা সভায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউট এবং খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) সহযোগিতায় কৃষি মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
মন্ত্রী বলেন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কারিকুলামের সঙ্গে মাঠের সম্পর্ক খুবই কম উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদেরকে হাতে-কলমে মাঠপর্যায়ে গিয়ে শেখাতে হবে। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা আধুনিক ডেইরি ফার্ম নেই, পোল্ট্রি ফার্ম নেই। তারা শিখবে কোথা থাকে। অথচ অনেক প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে আধুনিক ফার্ম আছে। আমরা শিক্ষার্থীদের কীভাবে শিখাচ্ছি সেটা গুরুত্বপূর্ণ। সব সরকারি সংস্থাকে এগিয়ে আসতে হবে। মন্ত্রী কৃষিগবেষণা সংশ্লিষ্টদের তাগিদ দিয়ে বলেন, প্রয়োজনে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর নিয়ে বসেন। কারিকুলাম প্রণয়নে পরামর্শ দেন, কারিকুলাম আপডেট করেন।
মন্ত্রী বলেন, অনেকেই চায় অর্গানিক এগ্রিকালচার করতে। কিন্তু এটা দিয়ে কি এত মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব কি না? আমাদের প্রয়োজন এক বিঘায় ৩০ মণ ধান উৎপাদন করা। কিন্তু শুধু জৈব সার দিয়ে তো এত উৎপাদন হবে না।
অনুষ্ঠানে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো: রুহুল আমিন তালুকদারের সভাপতিত্বে ভূমিসচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বেনজীর আলম, মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক মো. কামারুজ্জামান, এফএওর বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট ডি. সিম্পসন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ মো: বখতিয়ার। প্রবন্ধে তিনি জানান, দেশের শতকরা ৩৩ ভাগ জমি অবক্ষয়িত। টেকসই মৃত্তিকা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে শতকরা ৫৮ ভাগ বেশি ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। তিনি জানান, ২০৫০ সালের খাদ্য চাহিদা মিটাতে হলে বর্তমানের চেয়ে শতকরা ৬০ ভাগ বেশি ফসল উৎপাদন করতে হবে।
পরে কৃষিমন্ত্রী ‘ল্যান্ড ডিগ্রেডেশন ইন বাংলাদেশ’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন এবং সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড ও বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পুরস্কার প্রদান করেন। এবছর সয়েল কেয়ার অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এসএম ইমামুল হক, মৃত্তিকা বিজ্ঞানী এমএ সাত্তার ও কৃষক গোলাম রব্বানী। বিশ্ব মৃত্তিকা দিবস পুরস্কার পেয়েছেন মৃত্তিকা সম্পদ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী ছাব্বির হোসেন, উপজেলা কৃষি অফিসার আদনান বাবু ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা করুণা মণ্ডল।