দুধে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও দেশ মাছ, মাংস ও ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণ -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার বিশাল ভূমিকা রয়েছে। দুধে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও দেশে মাছ, মাংস ও ডিমে স্বয়ংসম্পূর্ণতাই শুধু না কোন কোন ক্ষেত্রে উদ্বৃত্ত উৎপাদন হচ্ছে। এক সময় আমাদের লক্ষ্য ছিল উন্নয়ন বৃদ্ধি করা, এখন আমাদের লক্ষ্য শুধু উন্নয়ন নয়, টেকসই উন্নয়ন। মাংস,ডিম, মাছ, দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিই শুধু নয়, এ খাতে গুণগত পরিপূর্ণতা আনা আমাদের লক্ষ্য। যেটা টেকসই উন্নয়নের একটা অংশে পরিণত হবে।

মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) সাভারে বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) মিলনায়তনে ইনস্টিটিউটের বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালা ও প্রযুক্তি হস্তান্তর ২০২২ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম এমপি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটানো, খাবারের চাহিদা পূরণ, অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা আনয়ন, বেকারত্ব দূর করা ও উদ্যেক্তা তৈরিতে প্রাণিসম্পদ খাতের বিশাল ভূমিকা রয়েছে। বর্তমানে কৃষিজ জিডিপিতে এ খাতের অবদান ১৬ দশমিক ৫২ শতাংশ। ১৯৭২ সালে দেশে জনপ্রতি দুধের প্রাপ্যতা ছিল ১৭ মিলিলিটার, বর্তমানে জনপ্রতি প্রাপ্যতা প্রায় ২০৮ দশমিক ৬১ মিলিলিটার। জনপ্রতি মাংসের প্রাপ্যতা ছিল ৪ দশমিক ৯৭ গ্রাম, যা বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ১৪৭ দশমিক ৮৪  গ্রাম। জনপ্রতি বছরে ডিমের প্রাপ্যতা ছিল মাত্র ৪ টি, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩৬ দশমিক ১ টিতে। এভাবে এ খাতে অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। এ উন্নয়নে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ গবেষণাধর্মী কাজ। এর মাধ্যমে এ খাতের পরিসর বৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে।

প্রধান অতিথি আরও যোগ করেন, প্রাণিসম্পদ খাতের বিকাশে গবেষণা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও এ প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী ও গবেষকরা এক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। গবেষণার ফল প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যম সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। এভাবেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তাই এ খাতের গবেষণা আরও গতিময় করতে হবে, গবেষণার গভীরে যেতে হবে। গতানুগতিক গবেষণা পরিহার করে গবেষণার সৃষ্টি যত দ্রুত সামনে আনা যায়, সেটা নিয়ে কাজ করতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে দেশে ও দেশের বাইরে আমাদের প্রতিভাবান মানুষদের প্রতিভার উন্মোচন করতে হবে।

যে গবেষণার সৃষ্টি মানুষের কাজে লাগবে সে গবেষণায় প্রাধান্য দিতে হবে উল্লেখ করে মন্ত্রী এসময় আরও বলেন, সময়োপযোগী ও প্রয়োজনের নিরিখে গবেষণা করতে হবে। যে গবেষণা মানুষের কোন কাজে আসবে না তার দরকার নেই। গবেষণা হতে হবে বাস্তবমুখী। গবেষণার মাধ্যমে যেন রাষ্ট্র উপকৃত হয়, জাতি সমৃদ্ধ হয় সেটা লক্ষ্য রাখতে হবে।

বিএলআরআই উদ্ভাবিত বিএলআরআই মিট চিকেন-১ সুবর্ণ এবং লবণসহিষ্ণু বিএলআরআই ঘাস-৫ প্রযুক্তি দুটি সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, দেশে মাংসের চাহিদা অভাবনীয়ভাবে বেড়েছে। এ জন্য আমরা গবেষণাগার গুরুত্ব দিচ্ছি। বিএলআরআই মিট চিকেন-১ সুবর্ণ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের নতুন সৃষ্টি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এটি আমাদের বড় ধরনের সাফল্য। এ জাত দ্রুত বর্ধনশীল ও দেখতে অনেকটাই দেশি মুরগির মতো বিভিন্ন রংয়ের। এটি দেশি আবহাওয়ায় পালন উপযোগী ও অধিক মাংস উৎপাদনশীল একটি জাত। এর মাংস অত্যন্ত সুস্বাদু। এ জাত সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। এটি দেশীয় মুরগির চাহিদা মেটাতে পারবে। অপরদিকে লবণাক্ত ও উপকূলীয় অঞ্চলে লবণসহিষ্ণু বিএলআরআই ঘাস-৫ চাষের মাধ্যমে এসব অঞ্চলের প্রাণিসম্পদের জন্য খাদ্যের যোগান সহজ হবে।

বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ। সম্মানীয় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ টি এম মোস্তফা কামাল ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মনজুর মোহাম্মদ শাহজাদা। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বিএলআরআই-এর পরিচালক (গবেষণা) ড. নাসরিন সুলতানা।

অনুষ্ঠানে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব বলেন, ২০৪১ সালের উন্নত দেশে দক্ষতা অর্জন করতে মাছ, মাংস, দুধ, ডিমের বিকল্প নেই। দেশীয় জাত সংরক্ষণে বিএলআরআইকে অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি নিজস্ব অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবন করতে হবে।

দুই দিনব্যাপী এ কর্মশালায় ২০২১-২২ অর্থবছরে বিএলআরআই এর মোট ৭৩ টি গবেষণা কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হবে। এছাড়া অনুষ্ঠানে বিএলআরআই উদ্ভাবিত দেশি আবহাওয়ায় পালন উপযোগী ও অধিক মাংস উৎপাদনশীল বিএলআরআই মিট চিকেন-১ (সুবর্ণ) এবং লবণসহিষ্ণু বিএলআরআই ঘাস-৫ জাত দুটি প্রযুক্তি আকারে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের নিকট আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হয়।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিএলআরআই-এর সাবেক মহাপরিচালকগণ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ, প্রাণিসম্পদ খাতে সম্পৃক্ত বিশেষজ্ঞ ও বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিবৃন্দ এবং বিএলআরআই-এর বিভিন্ন পর্যায়ের বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।