পোল্ট্রি খাতের সংকট সমাধান কোন পথে?

এগ্রিলাইফ ডেস্ক: পোল্ট্রি খাতের সংকট সমাধান কোন পথে? ডিবিসি নিউজের সাপ্তাহিক আয়োজন অর্থনীতির সংলাপে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ সাথে আলাপকালে পোল্ট্রি খাদের সংকটের নানা বিষয়গুলি উঠে এসেছে শনিবার (১৭ ডিসেম্বর)-এর এই টকশোতে। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা ।

আলোচনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে ইস্যুটি স্থান পায় তা হলো পোল্ট্রি শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে। বিশেষ করে বর্তমান সময়ে প্রান্তিক খামারীরা ধীরে ধীরে তাদের খামার গুটিয়ে নিচ্ছে যার ফলে আগামীতে চাহিদা ও যোগানের মধ্যে বড় ধরনের একটি ফারাক দেখতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে সবচেয়ে ক্ষতির সম্মুখীন হবেন আপামর ভোক্তারা যদিও বর্তমান সময়ে ভোক্তারা অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে  ডিম ও ব্রয়লার মাংস উপভোগ করতে পারছেন তবে এ অবস্থা বেশিদিন চলতে থাকলে আগামীতে ডিম এবং মুরগির সহজ প্রাপ্যতা আরা থাকবে না এ ধরনের আশঙ্কার কথায় জানালেন এর সাথে জড়িত উদ্যোক্তারা।

সংলাপে অংশ নিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব ড. নাহিদ রশীদ বলেন, করোনার আগে ডিম বা পোল্ট্রির দাম নিয়ে এত শোরগোল হয়নি। করোনা ও ইউক্রেন যুদ্ধের দুর্ঘটনার কারণে এর সমস্যা হয়েছে। এ শিল্পের মানুষদের টিকে রাখার জন্য, করোনার মধ্যেও আমরা ভ্রাম্যমান ট্রাকে করে পণ্যগুলো বিক্রি করেছি। পোল্ট্রি বোর্ড নিয়েও আমরা কাজ করছি। আর এটা আমাদের খুব করেই দরকার, কারণ এর ব্যাপ্তি অনেক বিশাল।

ড. নাহিদ রশীদ বলেন, গত দুই তিন দশকে  প্রোল্ট্রি সেক্টরে যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে সরকারের পোল্ট্রি ডেভেলপমেন্ট পলিসি ২০০৮ এর কারণে। আজকের এই অবস্থানে আসার পিছনে এই নীতিমালাটির ভূমিকা অনেক। করোনা এবং বৈশ্বিক পরিস্থিতির কারণে আমাদের এ শিল্পের মানুষেরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এখাতে প্রান্তিক খামারীদের সংখ্যা প্রায় এক লক্ষাধিক। আর মোট খামারির ৮০ভাগই প্রান্তিক খামারি, আমরা সবসময় তাঁদের কথাই চিন্তা করে কাজ করি।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়র পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর মোঃ আনোয়ারুল হক বেগ বলেন, বর্তমানে খাদ্যের দাম ৭৫ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। হিসাব করে দেখেছি একটি ডিম উৎপাদনের ফিডের খরচই ১০ টাকার অধিক। এক ডজন ডিম উৎপাদনে দুই কেজি খাবার (ফিড)  লাগে। আর দুই কেজি ফিডের দাম ১২০ টাকা। তাহলে কেবল খাবারের পিছনেই ১টি ডিম উৎপাদনে খরচ দশ টাকার বেশি লেগে গেল। কেবল খাবারই না এছাড়াও অনেক বিষয় জড়িত, সেগুলোতে অর্থের প্রয়োজন। বর্তমানে যে অবস্থা চলছে এই অবস্থা বেশিদিন চলতে থাকলে এ শিল্পের টিকে থাকাটা দুর্বিষহ হয়ে যাবে। আমরা যারা এই শিল্পের সাথে জড়িত আমরা প্রত্যেকেই এটা নিয়ে শঙ্কিত।

আফতাব বহুমুখী ফার্মস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু লুৎফে ফজলে রহিম খান বলেন, ভোক্তারা সব সময় কম দামে খেতে চান। কিন্তু পোল্ট্রি খাতে শুধু ভোক্তারা না এর সাথে সংশ্লিষ্ট ভ্যালু চেইনে খামারি উদ্যোক্তা থেকে অনেকে জড়িত। ভ্যালু চেইনের প্রত্যেকে যদি লাভ করতে না পারে তবে এই ইন্ডাস্ট্রির সমন্বয় থাকবে না। এই মুহূর্তে ভোক্তারা সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছেন। কারণ এখন দাম কিছুটা স্থিতিশীল। এখন খামারি পর্যায় ৭ টাকা ৩০ পয়সায় ডিম বিক্রি হচ্ছে। বাজারে নয় টাকার কাছাকাছি দামে ডিম বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু একটি ডিম উৎপাদনের খরচ সাড়ে দশ টাকার বেশি। খাদ্যের দাম বাড়ার কারণে খামারীদের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ভূট্টা এবং সয়াবিন মিলের দাম বাড়ার কারণে উৎপাদন খরচ অনেক গুণ বেড়ে গেছে। ডলারের দাম বাড়ার কারণেও খাদ্যের দাম বেড়ে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে উৎপাদকরা এখাত থেকে চলে যাবে এবং প্রান্তিক খামারীরা একেবারে নিঃস্ব হয়ে যাবে।

সেক্টরের সাথে জড়িত উদ্যোক্তারা সরকারের কাছে আর্থিক প্রণোদনার কথা উল্লেখ করে বলেন, ছোট-বড় সবার জন্যই আর্থিক প্রণোদনা জরুরী। তবে আর্থিক প্রণোদনাটি সর্বপ্রথম যাওয়া উচিত একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে এমনটাই বললেন ফজলে রহিম খান। করোনার সময় প্রান্তিক খামারীরা প্রণোদনা পেয়েছিলেন কিনা সে প্রশ্নটি রাখেন তিনি। প্রান্তিক খামারিরা যাতে ব্যাংক থেকে ঋণ সুবিধা পান সে বিষয়ের প্রতিও তিনি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। ঋণের ভারে জর্জরিত খামারীদেরকে আগে উদ্ধার করতে হবে তা না তারা এ সেক্টরের কেহই টিকে থাকতে না পারবে না এটি হলো নির্মম বাস্তবতা।

তবে প্রাণিসম্পদ সচিব শোনালেন আশার কথা। তিনি বললেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে তাদের আলোচনা চলছে ডেইরিতে যেমন ২০১৫ সালে ২০০ কোটি টাবার পুণ:অর্থায়ন করা হয়েছে পোল্ট্রি সেক্টরে তেমনি করা সম্ভব বলে মনে করেন ডঃ রশিদ। আমাদের অতি দ্রুত এ ব্যাপারে কর্ম পরিকল্পনা নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সাথে আলাপ আলোচনা করে প্রান্তিক পর্যায়ের জন্য আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থা করা জরুরি বলে মত প্রকাশ করেন প্রাণিসম্পদ সচিব। প্রান্তিক খামারীরা যাতে সহজ শর্তে স্বল্প সুদে ঋণ পায় সেই ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তিনি পদক্ষেপ নিবেন বলে সংলাপে আশ্বস্ত করেন।

পোল্ট্রি শিল্পে দিন দিন তলানীর দিকে চলে যাচ্ছে। এটি এমন একটি শিল্প যেখানে পুষ্টি উন্নয়ন থেকে আরম্ভ করে কর্মসংস্থানের একটি বড় খাত। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য এই শিল্পের প্রতি যেন কারো মাথাব্যথা নেই। অচিরেই এই শিল্পটিকে নিয়ে না ভাবলে আমাদের দেশ জাতি এবং পুষ্টি সব ক্ষেত্রে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন পোল্ট্রি সাথে জড়িত সুধীজনরা। তারা অতি দ্রুত সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে খামারি থেকে শুরু করে এর সাথে জড়িত সকল ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসে আশু সমাধানের জোর দাবি জানান।