তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি এক্সপো শুরু
খামারিরা উৎপাদন বন্ধ করলে সমস্যা আরও বাড়বে- মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ সচিব
আমাদের দেশের মানুষ পর্যাপ্ত পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার খায়না বলে তারা কম মেধাবি হয় এবং উদ্ভাবনী শক্তিতে পিছিয়ে থাকে। আমরা এ অবস্থার পরিবর্তন করতে চাই। বর্তমান সরকার পুষ্টিকর খাদ্যে বাংলাদেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে চায়। আওয়ামী লীগ সরকার সবার জন্য পুষ্টি নিশ্চিত করতে চায়- এ কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মোঃ আব্দুর রাজ্জাক। আজ আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স এসোসিয়েশন- বাংলাদেশ শাখা (ওয়াপসা-বিবি) এবং বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) আয়োজিত তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি এক্সপো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রী একথা বলেন।
ড. রাজ্জাক বলেন, পত্রিকায় খবর হয়েছে ব্রয়লার মুরগির বাজার অস্থিতিশীল। আমাদের দেখতে হবে কী কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। মুরগির খাদ্য উপকরণ- ভুট্টা, সয়াবিন, প্রোটিনের দাম অস্বাভাবিক বেড়েছে। দীর্ঘদিন পোল্ট্রি খামারিরা লোকসান করেছে। অনেক খামার বন্ধ হয়ে গেছে। বিগত ৩-৪ বছরে মুরগির বাচ্চা ৫-৭টাকাতেও বিক্রি হয়েছে। ফলে উৎপাদন কমেছে, দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, আমি খাদ্যমন্ত্রী ছিলাম, বর্তমানে কৃষিমন্ত্রী। আমি দেখেছি- খাদ্যের বাজার সব সময় ডিমান্ড-সাপ্লাই দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। উৎপাদন স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে আরও কয়েক মাস অপেক্ষা করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। কৃষিমন্ত্রী বলেন, ভোক্তাদের মাঝে একটা ধারণা আছে যে- পোল্ট্রিতে যত্রতত্রভাবে এন্টিবায়োটিক ও ট্যানারির বর্জ্য ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ধারণা ঠিক নয়।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, পোল্ট্রি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রাণিজ আমিষ। রমজানে এর দাম যেন না বাড়ে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। সরকার এ বিষয়ে উদাসীন থাকতে পারেনা। পোল্ট্রি ফিডের দাম কমাতে সরকার প্রয়োজনে ফিডে ভর্তুকী দেয়ার কথা চিন্তা করতে পারে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ বলেন, কোভিড মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে পোল্ট্রি শিল্পকে মূল্য দিতে হয়েছে। সকল প্রকার কাঁচামালে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। সচিব বলেন, খামারিরা উৎপাদন বন্ধ করলে সমস্যা আরও বাড়বে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ডিম ও পোল্ট্রি’র মাংস, ফিড উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। “সারাবিশ^কে আমরা দেখাতে চাই যে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য, পোল্ট্রি মাংস ও ডিম উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছে”। ড. নাহিদ বলেন, ল্যাব পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছে পোল্ট্রি ডিম ও মাংস নিরাপদ। ২০২৫ সালের মধ্যে পোল্ট্রি মাংস রপ্তানি হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে সচিব বলেন, এজন্য বিপিআইসিসি নিরলস কাজ করছে, সরকার সব ধরনের সহাযোগিতা প্রদান করবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার বলেন, পোল্ট্রি বোর্ড গঠন করা হলে পোল্ট্রি উৎপাদনে বাংলাদেশ উপমহাদেশে বড় জায়গা করে নিতে সক্ষম হবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী পোল্ট্রি খামারিদের খবরাখবর বিষদভাবে রাখেন বলেই তিনি সংবাদ সম্মেলনে পোল্ট্রি’র উৎপাদন ও দাম বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে যৌক্তিক বক্তব্য দিতে পেরেছেন বলে মন্তব্য করেন ওয়াপসা-বাংলাদেশ শাখার সভাপতি মসিউর রহমান। তিনি বলেন, ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম উঠানামা নিয়ে যে জটিলতা চলছে তা নিরসন করতে হলে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। একটি কমিটি গঠন করতে হবে যারা যৌক্তিক উৎপাদন খরচ ও বিক্রয়মূল্য প্রতি মাসে ঘোষণা করবেন। মসিউর বলেন, আমদানিকৃত পণ্য ভিন্ন এইচএস কোডে মূল্যায়ন করা হচ্ছে, ২০০% পেনাল্ট্রি করা হচ্ছে। জাহাজ ভাড়া অনেক বেশি। ল্যাব টেস্টিং-এ প্রচুর সময় চলে যাচ্ছে ফলে বিলম্ব মাশুল গুনতে হচ্ছে। এ সমস্যাগুলোর সমাধান করলে উৎপাদন ব্যয় কমবে। তিনি বলেন, গতবছর সয়াবিন মিলের দাম প্রায় ৩৪ টাকা ছিল, এখন ৮২ টাকা। দাম কিভাবে কমানো যায় সেজন্য মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে হবে।
ওয়াপসা-বিবি’র সাধারন সম্পাদক মো. মাহাবুব হাসান বলেন, ১২তম আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো ও সেমিনারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে- টেস্টি এন্ড হেলদি প্রোটিন ফর অল”। সবার জন্য মজাদার ও স্বাস্থ্যসম্মত প্রাণিজ আমিষ নিশ্চিত করতে খামারি ও উদ্যোক্তাদের সহায়তা প্রদান করাই এবারের আয়োজনের মূল্য উদ্দেশ্য। মাহাবুব বলেন, পোল্ট্রিখাত-সংশ্লিষ্ট গবেষণা কার্যক্রমকে উৎসাহ দিতে এ বছর থেকেই “ওয়াপসা-বিবি রিসার্চ গ্রান্ট” চালু করা হচ্ছে। প্রতি বছর ৮টি বিশ^বিদ্যালয়ের ১০জন পোষ্ট-গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীকে এক লক্ষ টাকা করে গবেষণা সহায়তা প্রদান করা হবে। ৩ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পোল্ট্রি শো’তে বিশ্বের ২০টি দেশের ১৬৯টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে, স্টলের সংখ্যা ৬০০টি। অনুষ্ঠানে “পোল্ট্রি খামার বিচিত্রা’র প্রধান সম্পাদক জনাব কামাল আহমেদ কে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করা হয়।