এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: হাওর অঞ্চলে দেশীয় মাছ রক্ষায় সম্মিলিতভাবে কাজ করার বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম।
বৃহস্পতিবার (১৫ জুন) দুপুরে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলে হাওর অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতে করণীয় শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য প্রদানকালে মন্ত্রী একথা জানান। মৎস্য অধিদপ্তর এ কর্মশালা আয়োজন করে।
এ সময় মন্ত্রী আরও বলেন, হাওর অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করতে না পারলে সামগ্রিকভাবে আমরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবো। হাওরের মৎস্যসম্পদ রক্ষায় জনপ্রতিনিধি, মৎস্যজীবী প্রতিনিধি, মৎস্য চাষী, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সম্মিলিতভাবে কাজ করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষের সামগ্রিক স্বার্থে হাওর অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির মাছ রক্ষাসহ মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। দেশের সব মানুষের জন্য যেটা প্রয়োজন ও অনিবার্য সে মাছ যত্নের সঙ্গে বেড়ে উঠার সুযোগ দিতে হবে।এজন্য হাওরে দেশীয় মাছ রক্ষায় নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হবে। মৎস্য খামারিরা পোনা মাছের প্রতি, ছোট মাছের প্রতি যত্নশীল হতে হবে। বেপরোয়াভাবে পোনা মাছ ধরা যাবে না। মাছ বেড়ে ওঠার জন্য অভয়াশ্রম দিতে হবে। প্রজনন মৌসুমে মা মাছ নিধন করা যাবে না। হাওড়ে এমন কোন নিষিদ্ধ জাল ব্যবহার করা যাবে না, যে জাল দিয়ে পোনা মাছ নিধন হয়। অপরদিকে হাওরে কোন বিষাক্ত রাসায়নিক বা কীটনাশক যাতে ব্যবহার না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
মন্ত্রী যোগ করেন, হাওর অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণে স্থানীয় প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতে হবে। মৎস্যসম্পদ রক্ষায় জনগণকে বোঝাতে হবে, সচেতন করতে হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। সরকার দেশে মৎস্য আইন যুগপোযোগী করেছে। মৎস্য আইনের পরিপন্থী কাজ যে করবে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে কাউকে ন্যূনতম ছাড় দেওয়ার সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ভাতে মাছের বাঙালির ঐতিহ্য এক সময় প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। একটা সময় বলা হতো মাছের আকাল। এমনকি ইলিশ মাছও বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পথে ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুপরিকল্পিত নির্দেশনা ও রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় ইলিশের উৎপাদন সব রেকর্ড অতিক্রম করে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশের ইলিশ জিআই সনদ পেয়েছে। সারাবিশ্বের মোট ইলিশের প্রায় ৮০ভাগ বাংলাদেশে উৎপাদন হয়। দেশীয় ৬৪ প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের অব্যাহত প্রচেষ্টায় ৩৯ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় দেশীয় মাছ ফিরিয়ে আনা হয়েছে। দেশীয় মাছ যাতে বিলুপ্ত না হয় সেজন্য ময়মনসিংহে লাইভ জিন ব্যাংক করা হয়েছে। যে অঞ্চলে কোন মাছ বিলুপ্ত হবে, লাইভ জিন ব্যাংক থেকে সে অঞ্চলে মাছের পোনা সরবরাহ করা হবে। যাতে সে অঞ্চলে নতুন করে দেশীয় মাছের বিস্তার হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, খাবারের বড় যোগান দেয় মাছ। মানুষের প্রাণিজ আমিষের চাহিদার ৬০ ভাগ যোগান দেয় মাছ। মেধার বিকাশে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, শিশুর পরিপূর্ণ পুষ্টির জন্য, বয়স্কদের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে মাছ ও মাছ জাতীয় খাবারের কোন বিকল্প নেই। এজন্য মাছ রক্ষায় সবার ভূমিকা রাখতে হবে।
মন্ত্রী আরও যোগ করেন, মৎস্য আহরণ বন্ধকালে মৎস্যজীবীদের ভিজিএফ বিতরণসহ বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন উপকরণ সহায়তা দেয়া হচ্ছে। নির্ধারিত সময়ে মাছ ধরা বন্ধ থাকলে মৎস্যজীবীরাই লাভবান হবেন। পোনা মাছ না ধরলে মাছ বড় হওয়ারর সুযোগ পাবে। মৎস্যজীবীদের লাভের জন্যই সরকার কাজ করছে। হাওড় অঞ্চলের মাছ বড় হতে না দিলে এই অঞ্চলের মৎস্যজীবীরা কিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সেটা সবার কাছে জানাতে হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৌলভীবাজার-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ। কর্মশালায় মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুল কাইয়ূম। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেট বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার জাকারিয়া এবং সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক এম এ জলিল। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খ. মাহবুবুল হক। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৎস্য অধিদপ্তরের উপপরিচালক অলক কুমার সাহা। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার এস এম মুরাদ আলি, সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহ্সান শাহ্, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ভানু লাল রায়, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের কর্মকর্তাগণ এবং স্থানীয় মৎস্যজীবী ও মৎস্য খাত সংশ্লিষ্ট অন্যান্য অংশীজনরা এসময় উপস্থিত ছিলেন ।