রাজধানী প্রতিনিধি: পোল্ট্রি শিল্প থেমে নেই বরং সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। আগামী দিনগুলোতে পোল্ট্রি’র ডিমান্ড আরও বাড়বে; এটা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পকে আমরা More Scientific Industry হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাই। এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।
মঙ্গলবার (৮ আগষ্ট) ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার কার্যনির্বাহী পরিষদের অভিষেক অনুষ্ঠানে ওয়াপসা-বিবি’র সভাপতি মসিউর রহমান এসব কথা বলেন।
বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ওয়াপসা-বিবি’র নিজস্ব কার্যালয়ে অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে বাকৃবি'র নব-নিযুক্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. এমদাদুল হক চৌধুরী ও ‘ইউজিসি প্রফেসরশিপ ২০২২’ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়ায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সচ্চিদানন্দ দাস চৌধুরীকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
The U.S. Department of Agriculture (USDA) বলছে- "Poultry Expected To Continue Leading Global Meat Imports as Demand Rises." তাঁদের এ বক্তব্য উদ্ধৃত করে মসিউর রহমান বলেন, রপ্তানী বাজার সম্প্রসারিত হবে কিন্তু আমরা এখনও রপ্তানী বাজারে প্রবেশ করতে পারিনি। মিট বা এগ -এর রপ্তানী বাজারে ঢুকতে হলে প্রচুর কমপ্লায়েন্স দরকার হয়, সেগুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। কমপার্টমেন্টালাইজেশন বা জোনিং -এর জন্যও কাজ করা দরকার। এ কাজটি এখনও শুরু হয়নি। এজন্য এক্সপার্ট, রিসারচার দরকার কাজেই এখানেও আমাদের কাজ করার সুযোগ আছে।
বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্প কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সামনে আরও কঠিন সময় উল্লেখ করে তিনি বলেন ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ডলার সংকট, কাঁচামালের দামের উর্ধ্বগতি, সেই সাথে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি এসব আমাদের ভীষণভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। শুধু বাংলাদেশ নয় সারা পৃথিবী “খাদ্য নিরাপত্তা” এবং সেই সাথে “পুষ্টি নিরাপত্তা” নিয়ে চিন্তিত।
সেলক্ষে নিজস্ব যোগ্যতায় কিভাবে উৎপাদন বাড়ানো যাবে, কিভাবে উৎপাদন খরচ কমানো যাবে, কিভাবে কম দামে ভোক্তাদের ডিম ও মুরগি দেয়া যাবে সেগুলি নিয়ে এখন বেশি বেশি করে কাজ করা প্রয়োজন।
নিরাপদ পোল্ট্রি উৎপাদনে বায়োসিকি্উরিটির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ তবে বর্তমান সময়ে ভ্যাকসিনগুলো ঠিক মতো কাজ করছে না। H5N1, H5N3, H5N4, H5N5, H5N6 or H5N8 এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার এ সাবটাইপগুলো বিভিন্ন দেশে দেখা যাচ্ছে। নতুন কিছু জীবানু Pandemic হয়ে উঠতে পারে- এমন আশংকাও করছেন বিজ্ঞানীরা। কাজেই আমাদের দেশের পোল্ট্রি শিল্পকে কিভাবে সুরক্ষা দেয়া যায় সেজন্যও ভাবতে হবে। বাণিজ্যিক বিবেচনায় দেশীয় জাত উদ্ভাবন করা কথা বলেন মসিউর রহমান।
অনুষ্ঠানে বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক জনাব মাহাবুব হাসান বিগত কমিটির কার্যক্রমগুলি অত্যন্ত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করেন। কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দ, বিএলআরআই-এর বিজ্ঞানী-গবেষকবৃন্দ, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক, বিপিআইসিসি'র সভাপতি জনাব শামসুল আরেফিন খালেদ, আহকাব সভাপতি জনাব সায়েম উল হক, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আফতাব আলম, এসিআই এগ্রিবিজনেসেস-এর প্রেসিডেন্ট ড. এফ এইচ আনসারী, ডিএলএস-উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ, বিভিন্ন পোল্ট্রি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ ওয়াপসা-বিবি’রবিপুল সংখ্যক সাধারণ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই ওয়াপসা-বিবি’র নিজস্ব কার্যালয়ে অত্যন্ত আনন্দঘন পরিবেশে ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার (২০২৩-২৪) মেয়াদের কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতি হিসেবে মসিউর রহমান এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ডাঃ বিপ্লব কুমার প্রামাণিক নির্বাচিত হন।
কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন সিনিয়র সহ-সভাপতি মোঃ সিরাজুল হক, সহ-সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব ও মোহাম্মদ তৌহিদ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাঃ মোঃ নূরুল ইসলাম শাওন এবং কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ ফয়েজুর রহমান (ফয়েজ)।
ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) ক্যাটাগরিতে সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন ডাঃ এ কে এম হুমায়ুন আরেফিন, ডাঃ মোহাম্মদ আল আমিন ও প্রফেসর ডাঃ মোঃ মাহমুদুল হাসান শিকদার। ইন্ডাষ্ট্রি ক্যাটাগরিতে সদস্য নির্বাচিত হন শামসুল আরেফিন খালেদ, শাহ্ ফাহাদ হাবিব এবং মোঃ নাজিম উদ্দিন। এনিমেল হাজবেন্ড্রি ক্যাটাগরি মোঃ নাজমুস সাকিব হামিম, প্রফেসর ড. মোঃ ইলিয়াস হোসাইন ও মোঃ জাকারিয়া ইসলাম নির্বাচিত হন।
ওয়াপসা-বিবি’র সংবিধান অনুযায়ী গবেষণা প্রতিষ্ঠান- বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএলআরআই) হতে একজন ও কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে একজন, মোট দুইজন সহ-সভাপতি এবং প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কিংবা তাঁর মনোনীত একজন প্রতিনিধি নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে নব-নির্বাচিত কার্যনির্বাহী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হবেন।
আগামী দিনে সকলে মিলে দেশের পোল্ট্রি শিল্পকে আরো আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাবেন এমনটাই প্রত্যশা করেন ওয়ার্ল্ড’স পোল্ট্রি সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন-বাংলাদেশ শাখার সকল সদস্যবৃন্দ।