সমীরন বিশ্বাস:আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যাকে বাংলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলা হয় যা হল কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা যেখানে মানুষের মস্তিস্ককে কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ বা অনুকৃত করা হয়। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে মানুষের চিন্তা শক্তি ও বুদ্ধিমত্তাকে কম্পিউটার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। বর্তমান সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা হচ্ছে শিক্ষা ক্ষেত্রে। যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে সফটওয়্যার তৈরি করা হচ্ছে এবং রোবট নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। বুদ্ধিমত্তা বলতে মানুষের চিন্তা শক্তি ও বুদ্ধিমত্তাকে কৃতিম উপায় অবলম্বন করে প্রযুক্তি নির্ভর করে গড়ে তোলার বাস্তবায়নকে বোঝায়। অনেকে মনে করেন আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স অর্থ রোবট জাতীয় কিছু একটা হবে। অনেকের ধারনা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে রোবটকে মানুষের মত সবকিছু বুঝতে সক্ষম করে তুলতে পারে। এ ধারনা ঠিক আছে কিন্তু এটি একটি উদাহরন মাত্র।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হলো কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত বা মেশিন দ্বারা প্রদর্শিত বুদ্ধি। আন্দ্রেয়ার কাপলান ও মাইকেল হেনলিন বলেন এটি একটি সিস্টেমের বাহিরের তথ্যকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা রাখে আর এই ক্ষমতাকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলা হয়।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর জনক কে ?
জনক মার্ভিন মিনস্কি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর জনক বলা হয়। তিনি ১৯৫৮ সালে মার্ভিন ম্যাসাচুসেট্স ইন্স্টিটিউট অব টেকনোলজিতে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন এবং তাঁর পূর্বে ১৯৫৭ সালে একটি অনুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার যার বর্তমান নাম “কনফোকাল মাইক্রোস্কোপ” । এই ” কনফোকাল মাইক্রোস্কোপ ” আবিষ্কার করার লক্ষ্য ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নতি সাধন করা।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এর প্রকারভেদঃ আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
১. আর্টিফিশিয়াল ন্যারো ইন্টেলিজেন্স (Artificial Narrow Intelligence-ANI )
২. আর্টিফিশিয়াল জেনারেল ইন্টেলিজেন্স (Artificial General Intelligence-AGI )
৩. আর্টিফিশিয়াল সুপার ইন্টেলিজেন্স (Artificial Super Intelligence -ASI)
প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে মানুষ প্রতিনিয়ত নতুন কিছু আবিষ্কারের পিছনে ছুটছে তারই ফল স্বরূপ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। ধারণা করা হয় একসময় পৃথিবীটিকে অনেক অংশে বদলে দিবে এবং মানুষের চিন্তা শক্তিকে বৃদ্ধি করবে এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। ধারণা করা হয় ২০৬০ সালের মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে কাজে লাগিয়ে পাইলট ছাড়া প্লেন চালানো যাবে। আপনি বর্তমান সময়ের দিকে লক্ষ করলে দেখতে পারবেন ড্রাইভার ছাড়া গাড়ি চলছে। এসব ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স। যেখানে যন্ত্রের মধ্যে মানুষের সব চিন্তা শক্তি ও জ্ঞানকে অ্যাপলিকেশন বা সফটওয়্যার দ্বারা সংযুক্ত করা হচ্ছে।
একজন মানুষ যেভাবে কাজ করে একটি যন্ত্র ঠিক সেভাবেই কাজ করে। আপনি বিভিন্ন ভিডিওতে রোবট এর কার্যক্রম দেখতে পারবেন আর এসবই তৈরি করা হয়েছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে।
বাংলাদেশ কৃষিতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স :
ইতিমধ্যে কৃষিতেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যে কৃষিতে AI প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারেরমত মদিনা টেক লিমিটেড এর সিইও মদিনা আলীর নেতৃত্ব একদল তরুন আইটি ইঞ্জিনিয়ার ও কৃষিবিদগন যুগন্তকারী "ডা.চাষী" এ্যাপ তৈরী করেছেন। এ এ্যাপ দিয়ে এখনই আপনি ছাদ-বাগান এবং মাঠ ফসলের রোগ ও পোকামাকড়ের সঠিক তথ্য ও সমাধান নিতে পারেন। এ এ্যাপ দিয়ে ফসলের আক্রান্ত স্থানের ছবি তুলুন, তা হলেই "ডা.চাষী" বলে দিবে আপনার ফসলের সমস্যা ও সমাধান।
দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে বশেমুরকৃবি সর্বপ্রথম এ প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে বলে তিনি দাবি করেন। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, নেদারল্যান্ডসের টুয়েন্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্র যৌথভাবে ‘স্টারস’ প্রকল্পের আওতায় দেশের কৃষি গবেষণায় আধুনিক, উন্নত ও কার্যকর প্রযুক্তি হিসেবে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে।
কৃষিতে AI প্রযুক্তি সম্বলিত ড্রোন অর্থাৎ ড্রোনের সঙ্গে AI কাস্টমাইজ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ইন্টিগ্রেট করলে ড্রোন একবার ফসলের খেতের উপর দিয়ে উড়ে গেলে ঐ এলাকার যে সার্বিক অবস্থা জানান দিতে আগামীতে সক্ষম তা হলোঃ
১, ফসলের মাঠের আদ্রতা পরিমাপ
২, ফসলে উপাদানের উপস্থিতি
৩, শস্য রোপন ডিজাইন
৪, বীজ রোপন
৫, পোকার আক্রমন ( ইমেজ প্রযুক্তি)
৬, কীটনাশক স্প্রে
৭, সেচ মনিটরিং
৮, ফসলের উৎপাদন
৯, ফসলের সর্বিক মনিটরিং
স্মার্ট ফারমিং /কৃষিতে ডিজিটালাইজেশন। আগামীতে কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI প্রযুক্তি) সম্প্রসারন ঘটিয়ে ; কৃষিকে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধদীপ্ত প্রযুক্তি ভিত্তিক দেশগড়ার এখনই সময়।
লেখক: সমীরন বিশ্বাস, লিড-এগ্রিকালচারিস্ট, মদিনা টেক লিমিটেড, ঢাকা।