‘গত ৩০ বছরে বয়লার ব্যবসার উত্থান-পতনে মালিকদের উন্নতি হলেও চাতাল শ্রমিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি’

কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ:বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি রাগিব আহসান মুন্না বলেছেন, ‘গত ৩০ বছরে বয়লার ব্যবসার উত্থান-পতনে মালিকদের উন্নতি হলেও চাতাল শ্রমিকদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। সরকার বলছে দেশের মানুষের গড় মাথাপিছু আয় ২৮০০ ডলার ছাড়িয়ে গেছে। অথচ চাতাল শ্রমিকদের কোনো খাদ্য নিরাপত্তা নেই। শিক্ষা ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা নেই। যেই চাতাল শ্রমিকের রক্ত-ঘাম ঝড়ানো পরিশ্রমে স্যুট-টাই পরা মানুষ সুদ্ধ-পরিশদ্ধ চালের ভাত খান। সেই চাতাল শ্রমিক ও তাঁদের সন্তানেরা খুদ খেয়ে জীবন ধারণ করেন। দ্রব্যমূল্যের বর্তমান বাজারে একজন মানুষের দৈনিক মজুরি ১৫০-২০০ টাকা মজুরি অমানবিক। এই মজুরি কমপক্ষে ৫০০ টাকা হওয়া উচিত।’ 

সোমবার(২৯ আগষ্ট) দুপুরে নওগাঁ জেলা ধান্য বয়লার ও অটো সাটার শ্রমিক ইউনিয়নের আয়োজনে নূন্যতম মজুরি ঘোষণার দাবিতে শহরের মুক্তির মোড় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।  

নওগাঁ জেলা ধান্য বয়লার ও অটো সাটার শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মোজাফফর হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) নওগাঁ জেলা কমিটির সভাপতি মোহসীন রেজা ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন নওগাঁ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আইজুল হক, সহ-সাধারণ সম্পাদক আনসার আলী, শ্রমিক নেতা শিমুল রহমান, রেশমা খাতুন, মেরিনা আখতার, সিপিবি নেতা আলীমুর রেজা রানা, এ্যাড.মোমিনুল ইসলাম স্বপন প্রমুখ।
 
সমাবেশে বক্তারা বলেন, নূন্যতম মজুরি নির্ধারণ করা না থাকায় একেক চালকলে একেক রকম মজুরি ঠিক আছে। কোথাও একজন শ্রমিক দিন প্রতি ১৫০ টাকা, কোথাও ২০০ টাকা, কোথাও বা ২৫০ টাকা মজুরি পেয়ে থাকেন। এর সঙ্গে একটি পরিবারের তিন বেলার খাবার হিসেবে কোথাও এক কেজি, আবার কোথাও দুই কেজি করে চালের খুদ (ভাঙা চাল) দেওয়া হয়। বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে এই মজুরি দিয়ে সংসার চালাতে গিয়ে মানবেতন পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। সরকারের মধ্যস্ততায় মালিকপক্ষ ও শ্রমিকদের মধ্যে আলোচনা ভিত্তিতে জীবন ধারণের জন্য চালকল কারখানার শ্রমিকদের নূন্যতম মজুরি নির্ধারণের দাবি জানান তাঁরা।

শ্রমিক নেতা মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘শ্রম আইন অনুযায়ী এবং শ্রমিক ও চালকল মালিক পক্ষের মধ্যকার চুক্তি অনুযায়ী প্রতি তিন বছর পর পর চালকল কারখানার শ্রমিকদের মজুরি সমন্বয় হওয়ার কথা। সর্বশেষ ২০১৫ সালে চালকল কারখানার চাতালে ধান আনলোড, ধান শুকানো, ভেজানো, সেদ্ধ করা, ট্রাকে চাল লোড করা সহ কাজের ১৭টি ধরণের ওপর মজুরি নির্ধারণ করে চাতাল শ্রমিক ইউনিয়ন ও চালকল মালিক পক্ষের মধ্যে চুক্তি হয়। সেই চুক্তির মেয়াদ ২০১৮ সালে শেষ হলেও এখন পর্যন্ত চালকলের শ্রমিকদের মজুরি সমন্বয় করা হয়নি। আট বছর আগের চুক্তি অনুযায়ী একজন চাতাল শ্রমিক প্রতি বস্তা ধান শুকানোর জন্য ১ টাকা, ট্রাকে ধান-চাল লোড-আনলোডের জন্য ৩ টাকা করে পাওয়ার কথা। এই চুক্তিতে কাজ করে একজন শ্রমিক সকাল ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত কাজ করে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা করে উপার্জন করেন। অনেক মালিক সেই চুক্তিও মানে না।’

বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশন নওগাঁ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক আইজুল হক বলেন, ‘নওগাঁ জেলায় বর্তমানে প্রায় ১২০০ চালকল চলমান রয়েছে। এসব চালকলে ৩০ হাজারের ওপর শ্রমিক কাজ করে। এর মধ্যে নারী শ্রমিকের সংখ্যা ৭০ শতাংশের ওপরে। বর্তমানে চালকল শ্রমিকো যে বেতন পান এটা অমানবিক ও অবাস্তব। এটা কোনোভাবেই যৌক্তিক হতে পারে না। আমরা চাই সরকারের মধ্যস্ততায় শ্রম আইন অনুযায়ী মালিক পক্ষ ও শ্রমিকদের মধ্যে আলোচনার ভিত্তিতে চালকল শ্রমিকদের জন্য একটা নূন্যতম মজুরি ঘোষণা করা হোক।’