কাজী কামাল হোসেন ,নওগাঁ:ছেলে মারা যাবার পর এখন নিজের ঘর থেকে বিতাড়িত বৃদ্ধা মেহেরজান (৮৫)। ছেলের বৌ এবং নাতনিরা বৃদ্ধা মেহেরজানকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন সদর দরজায়। মেহেরজান এখন না পারছেন নিজের ঘরে থাকতে, না পারছেন নিজের বিছানায় ঘুমাতে। আমি এই ঘরেই মরতে চাই এবং আমার লাশ যেন এই ঘর থেকেই বের হয় বলে নিজ ঘরে ফেরার আকুতি জানান বৃদ্ধা মেহেরজান। এদিকে ঝগড়া বিবাদ এবং অপশক্তির ভয়ে বৃদ্ধার এই অসহায়ত্ব দেখা ছাড়া কিছু করার নাই বলে জানান স্থানীয়রা।
জানা যায়, নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার হাতুর ইউনিয়নের মহিষবাথান গ্রামের মেহেরজান সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়ে জীবন যাপন করেন। তিন ছেলের মধ্যে মেজো ছেলে ময়েজঊদ্দিন প্রামানিক বছর পাঁচেক আগে মারা যান। ময়েজঊদ্দিন মায়ের সবটুকু সম্পত্তি ডাক্তার দেখানোর নাম করে লিখে নিয়ে তার দুই মেয়ে মোহসিনা এবং মৌমির নামে লিখে দেন। ছেলে মারা যাবার পর মেহেরজানকে ছেলের বৌ ও নাতনিরা বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে বাড়িতে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। বৃদ্ধা মেহেরজান এখন বারবার নিজ বাড়ির সদর দরজায় গিয়ে বসে থাকেন। দরজায় তালা দেখে সেখানেই বসে কান্নাকাটি করেন নিজের বাড়িতে প্রবেশ করার জন্য।
বৃদ্ধা মেহেরজান জানান, মৌমি ও তার মা হাসিনা বেগম আগে এমনটা ছিলেন না । তাদের সুখের একটা সংসার ছিলো। হঠাৎ কুরবানী ঈদের ৮দিন পর থেকে তার উপর এমন অত্যাচার শুরু করেন। তাকে মারধোর করে বারবার বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার কথা তিনি জানান। ছেলে এমন ভাবে জমিসহ বাড়ি ভিটা লিখে নেওয়ায় বাকি দুই ছেলের কাছেও তিনি যেতে পারেন না। তাকে হাতে পিঠে আঘাতের পর হাত ধরে টেনে হিচড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়ার কথা জানান তিনি।
তিনি বলেন, আমি আমার ঘরে থাকবো, আমি এখানেই মরবো। আমার নানা আমার নামে বাড়ি ভিটা লিখে দিয়েছিলো। মেজো ছেলে আমার কাছ থেকে টিপসই নিয়ে এই বাড়ি লিখে নিয়েছে। আগে যদি জানতাম তবে জমি রেখে আমার বাড়ি তিন ছেলেদের নামে লিখে দিতাম। এই বাড়িতে এখন বেশ কয়েকদিন থেকে তালা দিয়ে ছেলের বউ কোথায় চলে গিয়েছে বলে যায়নি।
এলাকাবাসি মৌমি ও তার মায়ের ভয়ে মুখ খুলতে চান না। বৃদ্ধ বয়সে এসে মেহেরজানকে এমন অবস্থায় দেখতে হবে বলে কল্পনাও করেননি কেউ। বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে দরজায় তালা ঝুলানোয় এলাকাবাসি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
অপরদিকে বৌমা হাসিনা বেগমের মায়ের বাড়ি একই এলাকার পাশের গ্রামে হওয়ায় সেখানে তার খোঁজ নিতে গিয়ে দেখা যায় সেখানেও তিনি নেই। মৌমি’র এক খালা জানান, গতকাল পর্যন্ত এখানে হাসিনা বেগম ছিলেন। কিন্তু সকাল থেকে তাকে আর দেখা যায়নি। হাসিনা বেগমের শাশুড়ি মেহেরজানকে তার ঘর থেকে বের করে দেওয়ার কথা জানতে চাওয়ায় তারা এই বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।
মহাদেবপুর অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ জানান, খবর পেয়ে তিনি মেহেরজান বিবির কাছে যান। ঘরে তালা দেখে প্রাথমিক অবস্থায় বড় ছেলের কাছে তাকে রাখার নির্দেশ দেন তিনি। আর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে অতি দ্রুত এর সমাধান করে বৃদ্ধাকে তার নিজ ঘরে তুলে দেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।তবে এই বিষয়ে থানায় লিখিত কোন অভিযোগ হলে এর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের কথা জানান ওসি।