কৃষিবিদ দীন মোহাম্মদ দীনু:‘বাংলাদেশে কৃষির রূপান্তর: উপযুক্ত পরিমাপে যান্ত্রিকীকরণ ও ফসল কর্তন পরবর্তী ক্ষতি কমানোর উদ্ভাবনসমূহ’ শীর্ষক দুইদিন ব্যাপি আয়োজিত আন্তর্জাতিক সিম্পোজিয়ামের সমাপনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে ঢাকার লেকশোর হোটেলের সম্মেলন কক্ষে এপ্রোপ্রিয়েট স্কেল মেকানাইজেশন ইনোভেশন হাব (আসমি) বাংলাদেশ ও পোস্ট-হারভেস্ট লস রিডাকশন ইনোভেশন ল্যাব (ফিলিল) বাংলাদেশ ফেজ-২ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের আয়োজনে ওই সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়।
বাকৃবির কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. মো. নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে সিম্পোজিয়ামের সমাপনী অনুষ্ঠানে আমেরিকার কানসাস স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিড দি ফিউচার ইনোভেশন ল্যাব ফর দি রিডাকশন অফ পোস্টহারভেস্ট লস প্রোগ্রামের ডিরেক্টর ড. জেগার হার্ভে, ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ের এপ্রোপ্রিয়েট স্কেল মেকানাইজেশন কনসোর্টিয়ামের (এএসএমসি) ডিরেক্টর ড. প্রশান্ত কে. কালিতা, ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও চীফ এক্সিকিউটিভ অফিসার আবুল কাশেম শিরিণ, সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশ সরকারের নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রাক্তন সচিব মো. আব্দুস সামাদ এবং পল্লী উন্নয়ন একাডেমীর প্রাক্তন মহাপরিচালক ড. এম এ মতিন উপস্থিত ছিলেন।
“ট্রান্সফর্মেশন ইন এগ্রিকালচার থ্রু পোস্টহারভেস্ট লস রিডাকশন ইনোভেশনস” শীর্ষক টেকনিক্যাল পর্বে আলোচনা করেন আমেরিকার কানসাস স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিড দি ফিউচার ইনোভেশন ল্যাব ফর দি রিডাকশন অফ পোস্টহারভেস্ট লস প্রোগ্রামের পরিচালক ড. জেগার হার্ভে, ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ের এডিএম ইনস্টিটিউটের জেন্ডার ও ইয়োথ কো-অর্ডিনেটর ও সহযোগী পরিচালক মারিয়া জোনস্, ইউনিভার্সিটি অফ ইলিনয়ের এডুকেশন পলিসি এন্ড লিডারশীপ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. সামান্থা লিন্ডগ্রেন, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রোস্তম আলী, ইফরি-বাংলাদেশের সিনিয়র রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর ড. সৌমি মুস্তাফা এবং আমেরিকার টাফস্ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিড দি ফিউচার ইনোভেশন ল্যাব ফর নিউট্রিশনের রিজিয়নাল কো-অর্ডিনেটর ড. রবিন শ্রেষ্ঠ।
এসময় বক্তারা বলেন, বর্তমানে আমরা যথেষ্ট উপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছি। তবে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে উৎপাদনের বড় একটি অংশ ক্ষতির সম্মুখে পড়তে হয়। এই ক্ষতি কমাতে বিভিন্ন প্রযুক্তি ও নারী পুরুষের সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ প্রয়োজন। বিশেষ করে আমাদের তরুণদেরকে এ বিষয়ে এগিয়ে আসতে হবে। নারীদের এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা এবং সেগুলো উত্তরণের প্রযুক্তিগত দিক থেকে বাউ এসটিআর ড্রায়ার, রিসারকুলেটিং ড্রায়ার, সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন আধুনিক সংরক্ষণ ব্যবস্থা যা কর্তন পরবর্র্তী ক্ষতি কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করবে। এ জন্যে সরকার এবং যেসব কোম্পানি যান্ত্রিকীকরণ নিয়ে কাজ করছে তাদের কৃষি যন্ত্র সম্প্রসারণের গুরুত্বও তুলে ধরেন তারা।
আসমি-বাংলাদেশ ও ফিলিল-বাংলাদেশ ফেজ-২ প্রকল্পের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ড. চয়ন কুমার সাহা বলেন, আসমি প্রজেক্টের মাঠ পর্যায়ে সম্প্রসারিত প্রযুক্তিগুলো হলো ধান কাটা, মাড়াই ও প্যাকেজিং যন্ত্র কম্বাইন হার্ভেস্টর, ধান কাটার যন্ত্র রাইস রিপার, ধানের বীজ বপন করার যন্ত্র রাইস সিডার, চারা লাগানোর যন্ত্র রাইস ট্রান্সপ্লান্টার। এছাড়া ফসল সংগ্রহের পর ফসলকে নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচানোর জন্য বাউ ড্রায়ার, বায়ুরোধী হারমেটিক ব্যাগ ও হারমেটিক কোকুন।
পরে “চ্যালেঞ্জেস এন্ড পলিসি ইস্যুজ ফর সাসটেইনেবল এগ্রিকালচারাল মেকানাইজেশন” শীর্ষক প্যানেল ডিসকাশনে অংশগ্রহণ করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. দেবাশিস সরকার, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. শাহজাহান কবীর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের সদস্য পরিচালক (লাইভস্টক) ও মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (কৃষি প্রকৌশল) ড. নাজমুন নাহার করিম, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এর সদস্য পরিচালক (বীজ ও উদ্যান) মো. মুস্তাফিজুর রহমান এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এডিশনাল কমিশনার প্রমিলা সরকার।
সমাপনী পর্বে “এগ্রিকালচারাল ট্রান্সফর্মেশন অফ বাংলাদেশ: ওয়ে ফরওয়ার্ড ইন এপ্রোপ্রিয়েট স্কেল মেকানাইজেশন এন্ড পোস্টহারভেস্ট লস রিডাকশন ইনোভেশনস” বিষয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি শক্তি ও যন্ত্র বিভাগের অধ্যাপক এবং আসমি-বাংলাদেশ ও ফিলিল-বাংলাদেশ ফেজ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও প্রিন্সিপাল ইনভেস্টিগেটর ড. মো মঞ্জুরুল আলম।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনকালে অধ্যাপক ড. মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, বাংলাদেশের কৃষি মানুষের জীবিকা থেকে আধা-বাণিজ্যিক কৃষিতে রুপান্তরিত হচ্ছে যেখানে কৃষির যান্ত্রিকীকরণই এই পরিবর্তনের অন্যতম চালিকা। সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে সঠিক স্কেলের মেশিনের মাধ্যমে কৃষিতে সময়, খরচ ও শ্রম সাশ্রয়ী এবং পোস্টহারভেস্ট লস কমানো সংক্রান্ত কাজে অধিক পরিমাণে যান্ত্রিকীকরণ করা প্রয়োজন যা কৃষিপণ্যে মূল্য সংযোজন করবে। স্থানীয় উৎপাদনের মাধ্যমে বাংলাদেশে কৃষি যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশের ক্রমবর্ধমান বাজার দখল করা সম্ভব। এক্ষেত্রে অনুকূল ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরীর জন্য বিভিন্ন সাব-সেক্টরসমূহের হস্তক্ষেপ জরুরী। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কৃষি উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণ ব্যবস্থাকে সর্বোত্তম ও দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে বিশেষত: স্মার্ট ফার্মি, প্রিসিশন এগ্রিকালচার (মেশিন ভিশন, ড্রোন, ন্যানো টেকনোলজি ইত্যাদি), নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে কৃষি, ড্রাই ও কোল্ড চেইন, নবায়নযোগ্য বায়োগ্যাস ইত্যাদি ক্ষেত্রে এবং সোলার নেক্সড স্মার্ট মাইক্রো গ্রেড ইত্যাদি। টেকসই উন্নয়নের জন্য স্মার্ট ও ডিজিটালাইজ্ড কৃষি উদ্ভাবনে পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) উৎসাহিত করতে হবে। গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়াগ এবং কৃষি উদ্ভাবন হাব প্রতিষ্ঠাকে উৎসাহিত করতে হবে। উদীয়মান ৪জি প্রযুক্তি স্থাপনের জন্য জাতীয় নীতি, কৌশল ও কাঠামো প্রণয়ন প্রয়োজন।