সমীরন বিশ্বাস:আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) যাকে বাংলায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বলা হয় যা হল কম্পিউটার বিজ্ঞানের একটি শাখা । সৌভাগ্যবশত কৃষি এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উভয়ই বেশ বিস্তর ক্ষেত্র। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অনেক শাখা প্রশাখা আছে। তার মধ্যে আজকাল দুইটা শাখায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহারিক কাজ হচ্ছে বলে আমার মনে হয়। একটা হল কম্পিউটার ভিশন, বাংলায় যান্ত্রিক দৃষ্টি বলতে পারি। আরেকটা হল প্রেডিকশন বা পূর্বাভাস। আমি আলোচনা যান্ত্রিক দৃষ্টিতে সীমাবদ্ধ রাখব। কৃষির অনেক শাখা আছে, আমি উদ্ভিজ্জ ফসলে সীমাবদ্ধ রাখছি।
এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা হয়ে উঠেছে শিক্ষা এবং আধুনিক কৃষি ক্ষেত্রে অপার সম্ভাবনার অংশ। ইতিমধ্যে কৃষিতেও আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার শুরু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ইতিমধ্যে কৃষিতে AI প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশে প্রথমবারেরমত মদিনা টেক লিমিটেড (১৩ মার্চ২০২২) এর সিইও মদিনা আলীর নেতৃত্বে একদল তরুন আইটি ইঞ্জিনিয়ার ও কৃষিবিদগন যুগান্তকারী "ডা.চাষী" মোবাইল এ্যাপ প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে গুগল প্লে-ষ্টোরে রিলিজ করেছেন। এ এ্যাপ দিয়ে এখনই আপনি ছাদ-বাগান এবং মাঠ ফসলের রোগ ও পোকামাকড়ের সঠিক তথ্য ও সমাধান জানতে পারেন। এ এ্যাপ দিয়ে ফসলের আক্রান্ত স্থানের ছবি তুলুন, তা হলেই "ডা.চাষী" বলে দিবে আপনার ফসলের সমস্যা ও সমাধান। ইতিমধ্যে "ডা.চাষী" এ্যাপ তৈরীর জন্য বেসিস এর আইসিটি চ্যম্পিয়ন এ্যাওয়ার্ড ২০২২ লাভ করেছেন মদিনা টেক লিমিটেড-এর সিইও মদিনা আলী।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে (ব্রি) ধানের রোগবালাই চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে ‘রাইস সল্যুশন’ (সেন্সরভিত্তিক ধানের বালাই ব্যবস্থাপনা) নামক একটি মোবাইল অ্যাপস উদ্বোধন করা হয়েছে। যা, ধানের ক্ষেত থেকেই আক্রান্ত ধান গাছের ছবি দেখে রোগ চিহ্নিত করতে সক্ষম। সোমবার (২ জানুয়ারী ২০২৩) কৃষিমন্ত্রী ড. মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক এমপি গাজীপুরে ব্রিতে অনুষ্ঠিত ছয় দিনব্যাপী বার্ষিক গবেষণা পর্যালোচনা কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ মোবাইল অ্যাপসটি উদ্বোধন করেন।
দেশের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ড্রোন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে বলে জানা যায়। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিরক্ষা ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, নেদারল্যান্ডসের টুয়েন্ট বিশ্ববিদ্যালয় এবং আন্তর্জাতিক ভুট্টা ও গম উন্নয়ন কেন্দ্র যৌথভাবে ‘স্টারস’ প্রকল্পের আওতায় দেশের কৃষি গবেষণায় আধুনিক, উন্নত ও কার্যকর প্রযুক্তি হিসেবে ড্রোন ব্যবহার করা হচ্ছে।
কৃষিতে AI প্রযুক্তি সম্বলিত ড্রোন অর্থাৎ ড্রোনের সঙ্গে AI কাস্টমাইজ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ইন্টিগ্রেট করলে ড্রোন একবার ফসলের খেতের উপর দিয়ে উড়ে গেলে ঐ এলাকার যে সার্বিক অবস্থা জানান দিতে আগামীতে সক্ষম তা হলোঃ ফসলের মাঠের আদ্রতা পরিমাপ করা, ফসলে উপাদানের উপস্থিতি নির্ধারন করা৩, শস্য রোপন ডিজাইন করা, বীজ রোপন করা , পোকার আক্রমন জানা (ইমেজ প্রযুক্তি), কীটনাশক স্প্রে করা, সেচ মনিটরিং করা, ফসলের উৎপাদন জানা, ফসলের সর্বিক মনিটরিং করা, মাটির নিউট্রেন্ট, আদ্রতা, তাপমাত্রা, পিএইচ, লবনাক্ততা জানা, ফসলের নিউট্রেন্ট এর অভাব জানা, ফসলের রোগ ও পোকামাকড় জানা উপস্থিতি জানা, কৃষি ওয়েদার ফোরকাস্টিং এন্ড আগাম এলার্মিং দেয়া , ফসলের আগাম সম্ভাব্য ফলনের পূর্ভাবাস দেয়া ইত্যাদি।
স্মার্ট ফারমিং /কৃষিতে ডিজিটালাইজেশন, আগামীতে কৃষিতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI প্রযুক্তি) সম্প্রসারন ঘটিয়ে ; কৃষিকে সাশ্রয়ী, টেকসই, বুদ্ধদীপ্ত প্রযুক্তি ভিত্তিক স্মার্ট দেশ গড়ার এখনই সময়।
লেখক: সমীরন বিশ্বাস, লিড-এগ্রিকালচারিস্ট, মদিনা টেক লিমিটেড, ঢাকা।