ধানের ব্লাস্ট রোগের লক্ষণ ও তার প্রতিকার

সমীরন বিশ্বাস:ধানের ব্লাস্ট একটি ছত্রাজনিত মারাত্মক ক্ষতিকারক রোগ। বোরো ও আমন মৌসুমে সাধারণত ব্লাস্ট রোগ হয়ে থাকে। অনুকূল আবহাওয়া এ রোগের আক্রমণে ফলন শতভাগ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। চারা অবস্থা থেকে শুরু করে ধান পাকা পর্যন্ত যেকোনো সময় রোগটি দেখা দিতে পারে। এটি ধানের পাতা, গিট এবং নেক বা শীষে আক্রমণ করে থাকে। সে অনুযায়ী রোগটি পাতা ব্লাস্ট, গীট ব্লাস্ট ও নেক ব্লাস্ট নামে পরিচিত।

রোগের অনুকূল অবস্থা:
দিনের বেলায় গরম (২৫-২৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ) ও রাতে ঠান্ডা (২০-২২ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড ), শিশিরে ভেজা দীর্ঘ সকাল, অতি আদ্রতা (৮৫% বা তার অধিক), মেঘাচ্ছন্ন আকাশ, ঝড়ো আবহমান এবং গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি এ রোগের আক্রমণের জন্য খুবই অনুকূল।

 লিফ বা পাতা ব্লাস্ট
১.পাতায় ছোট ছোট ডিম্বাকৃতির সাদা বা বাদামি দাগ দেখা দেয়।
২. পর্যায়ক্রমে সমস্ত পাতা ও ক্ষেতে ছড়িয়ে পড়ে।
৩. আক্রমণ বেশি হলে ক্ষেতের বিভিন্ন স্থানে রোদে পুড়ে যাওয়ার মতো দেখা যায়।
৪. আক্রান্ত ক্ষেতে অনেক সময় পাতা ও খোলের সংযোগস্থলে কালো দাগ দেখা দেয় যা পরবর্তীতে পচে পাতা ভেঙে পড়ে ফলন বিনষ্ট হয়।
৫. দাগগুলো একটু লম্বাটে হয় এবং দেখতে অনেকটা চোখের মত।
৬. আস্তে আস্তে পাতার দাগগুলো বড় হয়ে, একাধিক দাগ মিশে গিয়ে শেষ পর্যন্ত পুরো পাতাটি শুকিয়ে মারা যেতে পারে

নোট বা গীট ব্লাস্ট
১.ধানের থোড় বা গর্ভবতী অবস্থায় এরোগ হলে গীটে কালো  দাগের সৃষ্টি হয়।
২. ধান গাছ গিট দুর্বল হয়।
 ৩. ধান গাছ গিট থেকে খসে পরে।
(৩) নেক বা শীষ ব্লাস্ট
 ১.শীষ অবস্থায় এ রোগ হলে শীষের গোড়া কালো হয়ে যায়।
 ২. আক্রমণ বেশি হলে শীষের গোড়া ভেঙ্গে যায়।
 ৩. ধান চিটা হয়।

সমন্বিত ব্যবস্থাপনা:
১. প্রথমত এ রোগ প্রতিরোধী জাত চাষ করা।
২. আক্রান্ত ক্ষেতের খড়কুটো আগুনে পুড়িয়ে মাটিতে মিশিয়ে দেয়া।
৩. সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগের মাধ্যমে ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধ করা যায়।
৪. রোগের আক্রমণ হলে ইউরিয়া সারের উপরি প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে।
৫. বিঘা প্রতি ৫-৭ কেজি এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে অথবা ৫ গ্রাম/ লিটার স্প্রে করা যেতে পারে।
৬. রোগমুক্ত জমি থেকে বীজ সংগ্রহ করা।
৭. রোগের প্রাথমিক অবস্থায় ১ থেকে ২ ইঞ্চি পানি জমিতে পানি রাখা। ক্ষেতে পানি সংরক্ষণ করতে হবে।
৮. ব্লাস্ট প্রতিরোধক জাতের ধান চাষ করা

রাসায়নিক দমন ব্যবস্থা:
ট্রাইসাইক্লাজোল গ্রুপের  @ ০.৭৫ গ্রাম/ লিটার অথবা ট্রাইসাইক্লাজোল+ প্রোপিকোনাজল (এগবেন ৫০%) @ ২মিঃলিঃ/ লিটার অথবা থায়োপেনেট মিথাইল @ ২ গ্রাম/ লিটার/অথবা  টেবুকোনাজল+ ট্রাইফ্লক্সিস্ট্রবিন @ ০. ৫০ গ্রাম/ লিটার, অথবা এজোক্সিস্ট্রবিন+ ডাইফেনোকোনাজল (আর্নিলিন ৮০%) @ ১মিঃলিঃ/লিটার পানিতে মিশে ১০-১৫ দিন পর পর দুইবার স্প্রে করা যেতে পারে।

লেখক: সমীরন বিশ্বাস, লিড-এগ্রিকালচারিস্ট, মদিনা টেক লিমিটেড, ঢাকা।