সেন্ট্রাল আলবার্টা (কানাডা) ৯ ফেব্রুয়ারি : কানাডার আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা "স্টেপ টু হিউম্যানিটি অ্যাসোসিয়েশন" আজ সন্ধ্যায় বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্কের কোস্টাল১৯ গ্রুপের সহযোগে ও স্থানীয় কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স, কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স ভেলু চেইন গ্রুপ-এর অংশ গ্রহণে উপকূলের পাঁচ কিলোমিটার জায়গা জুড়ে এ মাসের শেষ সপ্তাহে সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত প্লাস্টিক ও বর্জ্য পরিষ্কারের জন্য একটি অনুপ্রেরণাদায়ক ও স্বেচ্ছামূলক কর্মসূচি পালন করবে।
এ লক্ষে "সমুদ্র বাঁচাও, বাংলাদেশকে বাঁচাও: সামুদ্রিক ও উপকূলীয় দূষণমুক্ত পরিবেশে নীল অর্থনীতির দেশ গড়ো" শিরোনামে এক ভার্চুয়াল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন কানাডা প্রবাসী লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক, স্টেপ টু হিউম্যানিটি অ্যাসোসিয়েশনের স্পেশাল প্রজেক্ট কমিটির চেয়ারপারসন ও বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার জাহিদ। মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সংগঠনের অন্যতম সংগঠক ও ডেপুটি চিফ রিপোর্টার, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা-(বাসস ) সাজ্জাদ হোসেন।
সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও শিক্ষানুরাগী কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এর সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী। প্রধান আলোচক ছিলেন "স্টেপ টু হিউম্যানিটি অ্যাসোসিয়েশন" এর সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ মোয়াজ্জেম হোসেন ।
অনুষ্ঠানে মূল্যবান বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এর পরিচালক আবেদ আহসান সাগর। ওই কেন কক্সবাজারের অন্যতম সংগঠক ও যুব উদ্যোক্তা ওমর ফারুক জয়, মশিউর রহমান, সিনিয়র স্কুল শিক্ষিকা শিরিন ফেরদোসী, সাংবাদিক শামসুল হাবিব এবং অংশ গ্রহণ করেন হাটবোল্ট আইটি সল্যুশন কো-ফাউন্ডআর মিজানুর রহমান, দৈনিক ভোরের সূর্যোদয় সম্পাদক ফিরোজ মিয়া, এশরার জাহিদ খুসরু, সাকির আলম, তামিম হোসাইন শান্তা সাইফুর হাসান, আব্দুল মালেক নইম প্রমুখ।
উদ্বোধনী বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার জাহিদ বলেন বাংলাদেশ এখন চতুর্থ বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে, দেশের অর্থনৈতিক সুরক্ষায় সমূদ্র অর্থনীতির সদ্ব্যবহার করা জরুরি হয়ে পড়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস যথার্থই বলেছেন যে বিশ্বমঞ্চে নেতা হিসাবে স্থান করে নিতে স্মার্ট বাংলাদেশের জন্য এখন বৃহত্তর অর্থনৈতিক সংযোগ প্রয়োজন। তিনি বাংলাদেশকে বৈশ্বিক অর্থনীতির সাথে আরও বেশি সংযুক্ত হওয়ার পরামর্শ এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যবসায়িক পরিবেশ গড়ে তুলতে বলেছেন। বাংলাদেশ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাবের শিকার একটি দেশ, যে দেশের ১৯টি উপকূলীয় জেলার সমগ্র অঞ্চল ও অধিবাসীদের খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সেনিটেশন ও দক্ষতা বৃদ্ধি সহ কর্মসংস্থানের যুগোপোযুগী কৌশলগত পরিকল্পনা নেই। রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের সাথে যোগ দিয়ে বলবো শুধু অর্থনৈতিক কারণে সংযোগ নয় বরং দেশের রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে সংযোগ প্রয়োজন, প্রয়োজন সরকারের সামর্থকে আরো শক্তিশালী ও বেগবান করতে স্বেচ্ছাশ্রমের মতো আন্দোলন এবং স্বেচ্ছাশ্রমকে কানাডার মতো শিক্ষায় একীভূত করে ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এর স্বীকৃতি প্রয়োজন।
গত সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল করিম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে কানাডার হাইকমিশনার ড. লিলি নিকোলস বাংলাদেশের সাথে দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু সম্ভাবনা ও সংযোগের কথা বলেছেন। তিনি বলেন ‘কানাডা শিক্ষাক্ষেত্রে বিশ্বে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের মাধ্যমে চট্টগ্রামকে সমৃদ্ধ করতে পারে কানাডা। এ ছাড়া চট্টগ্রামে ওষুধশিল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী কানাডার অনেক শিল্পগ্রুপ। এ ছাড়া বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিশ্বসেরা প্রযুক্তি সরবরাহের মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরীকে একটি পরিচ্ছন্ন ও স্বাস্থ্যকর নগরীতে পরিণত করার বিষয়ে অবদান রাখতে পারে কানাডা। কানাডা সৌরবিদ্যুৎ বিকাশে সহায়তার মাধ্যমে সবুজ জ্বালানির ক্ষেত্রে ও বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে পারে।’
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপক সাজ্জাদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে কিছু আইন ও প্রবিধান রয়েছে, যা সমুদ্র সুরক্ষার জন্য বিশ্বব্যাপী চাহিদার সাথে সঙ্গতি রেখে পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও সংশোধন করতে হবে। আমাদের লক্ষ্য হলো পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণে জাতীয় জনমত গঠন করা ও আইনি শাসনের পাশাপাশি দেশীয় স্টেকহোল্ডারদের হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাওয়া ভূমি ভিত্তিক থেকে সামুদ্রিক পরিবেশ রক্ষা, বাংলাদেশের সমুদ্র ও উপকূলকে দূষণমুক্ত করা, বাংলাদেশের মানব স্বাস্থ্য ও জীববৈচিত্র্যের জন্য প্রধান হুমকি মোকাবিলা করা।
গবেষণার তথ্য হচ্ছে, বছরে ২৫০ মিলিয়ন টন বর্জ্য নিক্ষিপ্ত হচ্ছে সমুদ্রে। এই বিপুল পরিমাণ বর্জ্যে ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়ে সমুদ্র বিপন্ন হচ্ছে। এ কারণে পানি ও প্রাকৃতিক পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতির পাশাপাশি বহু সামুদ্রিক প্রাণীর বিলুপ্তি ঘটছে। হুমকির মুখে পতিত হচ্ছে ‘সুনীল অর্থনীতি’। প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায় যে, অব্যবস্থাপিত প্লাস্টিক বর্জ্যের মাত্রার নিরিখে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের অবস্থান দশমে। বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণের ওপর আলোচনা, পর্যালোচনা ও অধ্যয়ন খুবই সীমিত এবং সামগ্রিক পর্যবেক্ষণ/স্ন্যাপশট প্রতি তা তির্যক। ২০০৬ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত প্লাস্টিক দূষণ নিয়ে ২৪টির মতো গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। ৯টির প্রতিবেদনে সামুদ্রিক পরিবেশে প্লাস্টিক দূষণের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে, এছাড়াও ৮টি প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে এবং শুধু একটি সুস্বাদু পানির পরিবেশের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। বাংলাদেশে প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলার লক্ষ্যে জাতীয় কোন কার্যকর ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রণয়ন হয়নি। এ নিয়ে গবেষণার ও অভাব রয়েছে। নদীর প্লাস্টিক পরিবহন নিরীক্ষণ ও মডেল এবং জলজ জীবের জন্য প্রভাব পরীক্ষা করায় আরও কাজের প্রয়োজন রয়েছে।
সম্মানিত অতিথি আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন উপকুলে পাস্টিক ও বর্জ্য পরিষ্কারের জন্য অনুপ্রেরণাদায়ক ও স্বেচ্ছামূলক এ কর্মসূচি পালন করতে সর্বাত্মক সহায়তা করবে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স, তিনি স্থানীয় প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, হোটেল, মোটেল, হ্যাচারী এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের সংগঠিত করার ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া এবং স্টেপ টু হিউম্যানিটি ও বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্কের কর্মকান্ডে সকল প্রকার সহায়তার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এর পরিচালক আবেদ আহসান সাগর বলেন, বাংলাদেশ সমুদ্র দূষণ ভয়াবহ আকার ধারণ করছে এবং মাছের প্রজনন থেকে শুরু করে জীববৈচিত্রের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। এর প্রতিকারে ইনস্টিটিউশনাল সাপোর্ট প্রয়োজন।
কৃষিবিদ মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, উপকূলীয় ১৯ জেলায় শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও দক্ষতা উন্নয়নে প্রকল্প নিতে আগ্রহী "স্টেপ টু হিউম্যানিটি অ্যাসোসিয়েশন"। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় যে সকল উদ্যোগ নেয়া হয়েছে সমুদ্র অর্থনীতির লক্ষ্য অর্জনসহ দারিদ্র বিমোচন, অশিক্ষা দূর ও চিকিৎসা সুবিধা দানে স্পেশাল প্রজেক্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সভার সভাপতি দেলোয়ার জাহিদ বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে বাংলাদেশের ১৯টি উপকূলে ক্ষুধা, দারিদ্র, অশিক্ষা, স্বাস্থ্যহানি ও নীরব ক্যান্সারের শিকার অগুনিত অধিবাসী, সুপেয় পানির অভাবে আধুনিক কারবালায় তিলে তিলে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশে গত ৮ ফেব্রুয়ারি বেলজিয়ামের রানি মাতিলদ মেরি ক্রিস্টিন জিলেইন, জাতিসংঘ মহাসচিবের এসডিজি বিষয়ক বিশেষ দূত উপদ্রুতদের দেখতে এসেছেন। বাংলাদেশের ১৯টি উপকূলের অধিবাসীদের জীবনসংগ্রাম ও কষ্টগাঁথার মুলে রয়েছে রাষ্ট্র ও অর্থনীতির সাথে তাদের সংযোগহীনতা রয়েছে সমস্যা সঙ্কটের পাশাপাশি সমুদ্র অর্থনীতির এক অপার সম্ভাবনা যা আমাদের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে মোকাবেলা করতে হবে। শুধু সরকার নয় বরং স্বেচ্ছাশ্রমে দুর্গতদের সেবা করা প্রয়োজন।