সমীরন বিশ্বাস: টমেটো বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সবজি। তরকারি, সালাদ, স্যুপ, চাটনি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তাছাড়াও টমেটো বিভিন্নভাবে সংরক্ষণ ও বোতলজাত করা হয়। টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি এবং যথেষ্ট বি ও ভিটামিন এ এবং খনিজ পদার্থ আছে। কিন্তু টমেটো উৎপাদনে রোগবালাই একটি প্রধান প্রতিবন্ধক। এ রোগগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ফলন অনেক বাড়বে।
নাবি ধ্বসা রোগ এটি একটি ছত্রাকজনিত রোগ। গাছের আক্রান্ত অংশ, বীজ, মাটি ও পানি দ্বারা এ রোগ বিস্তার লাভ করে। বৈরী আবহাওয়ার কারণে টমেটো গাছে লেট ব্লাইট (নাবিধসা রোগ) দেখা দেয়। এই রোগটি টমেটো গাছের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এই রোগটি রাতারাতি এক গাছ থেকে অন্য গাছে ছড়ায়।
পূর্ব-প্রস্তুতি : রোগ প্রতিরোধ জাতের চাষ করা, বীজ শোধন করা।
ক্ষতির ধরণ :
১) রোগের শুরুতে পাতায় বাদামি রঙের দাগ হয়।
২) মেঘলা আবহাওয়ায় দাগগুলো আকারে বৃদ্ধি পায়।
৩) ক্রমেই দাগগুলো পাতার কিনারার দিক থেকে ভেতরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে।
৪) অবশেষে আক্রান্ত পাতা মরে যায় এবং এই দাগ ডাঁটা ও কান্ডে ছড়িয়ে পড়ে।
৫) পাতার উপর ফ্যাকাশে অথবা ফিকে সবুজ রঙের গোলাকার অথবা এলোমেলো পানি ভেজা দাগ পড়ে।
৬) কুয়াশাছন্ন মেঘলা আবহাওয়ায় দাগ সংখ্যা ও আকার দ্রুত বাড়তে থাকে।
৭) গাছের পাতা ও কাণ্ড বাদামী থেকে কালচে আকার ধরণ করে।
৮) আক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে গাছের কাণ্ড ও সবুজ ফলেও রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায়।
৯) রোগের লক্ষণ দেখা দেবার ৩-৪ দিনের মধ্যে গাছ ঝলসে যায় ও দ্রুত মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে।
১০) এ রোগের আক্রমণে টমেটোর চারা মরে যায় এবং পাতা ও ফল ঝরে পড়ে।
সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনা:
১. ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২. নীরোগ বীজ ব্যবহার করতে হবে।
৩. শস্য পর্যায় অনুসরণ করতে হবে।
৪. যেখানে এ রোগ নিয়মিত ও বেশী হয় সেখানে রোপন সময় পরিবর্তন করে সম্ভব হলে শুষ্ক মৌসুমে এই ফসল চাষ করা।
৫. রোগমুক্ত গাছ বা উৎস থেকে সংগৃহীত বীজ ব্যবহার করা।
৬. পাতা বেশী সময় ধরে ভেজা থাকলে এ রোগের জীবাণু বৃদ্ধি পায়। তাই ঝরনা সেচ না দেয়া।
রাসায়নিক ব্যবস্থাপনা :
১)শুরুতেই ম্যানকোজেব জাতীয় ছত্রাকনাশক যেমন (জেনেজেব ৮০ডব্লিউপি,২০ গ্রাম) ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭ দিন পরপর স্প্রে করা। স্প্রে করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করতে হয়।
২) রোগের প্রকোপ বেশি হলে উপরের ছত্রাকনাশকগুলোর সাথে কার্বেন্ডাজিম যেমন- একবেন ৫০%এফ মিশাতে হবে।
লেখক: লিড-এগ্রিকালচারিস্ট, মদিনা টেক লিমিটেড, ঢাকা।