কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ: গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরে ঘরে একটি-দুটি নয়, শত শত মৌ মাছির চাক। আর সেই চাক থেকে নিজ চোখে দেখে খাঁটি মধু সংগ্রহ করছেন ক্রেতারা। এমনই একটি গ্রাম নওগাঁর মান্দা উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের ফেটগ্রাম । মানুষের কাছে গ্রামটি মধুর গ্রাম নামেই পরিচিত।
মৌমাছির দল আবাসস্থল গড়ে তুলেছে গ্রামের প্রতিটি ঘরের দেওয়ালে, ছাদের কার্নিশে, ঘরের ভিতরের কক্ষগুলোয়, গাছের ডালসহ বাড়ির আনাচে-কানাচে। গ্রামের মানুষদের বসবাস এখন মৌচাক পুরীর মধুর গ্রামে। মধু বিক্রি করে গ্রামবাসীর জীবন এখন পাল্টে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, গত ২০ বছর তাঁরা এই মৌচাকগুলো দেখে আসছেন। বছরের প্রায় ৬ মাস এমনভাবে মৌচাকের সঙ্গে জীবন-যাপন করেন তাঁরা। তাদের কোনো অসুবিধা বা মৌমাছি কামড়ানোর ঘটনাও কোনোদিন ঘটেনি। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে প্রায় ৬০-৭০ টি মৌচাক রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার মৌচাকের সঙ্গে বসবাস করেন তাঁরা। প্রতিটি মৌচাক থেকে ৪-৫ কেজি পর্যন্ত মধু সংগ্রহ করে থাকেন। যা তাঁরা প্রতি কেজি ৫০০-৬০০ টাকা করে বিক্রি করেন। প্রাকৃতিকভাবে মধু সংগ্রহ করা দেখে মৌচাক বাড়ি থেকেই ক্রেতারা মধু সংগ্রহ করেন অতি উৎসাহের সঙ্গে।
জেলা কৃষি বিভাগ বলছেন, বর্তমানে মৌমাছি থেকে মধু আহরোন একটি উৎপাদনশীল ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রাকৃতিক এই সকল মধু উৎপাদনে আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। এই মৌচাক থেকে গ্রামবাসী উপার্জনের পথটি ধরে রেখেছেন।
ক্রেতারা জানান, অনেকে গ্রামের ভিতরে গিয়ে প্রাকৃতিক মধু চাক সংগ্রহ করে থাকেন। এছাড়া অনেক চাকরিজীবী ছুটির দিনে বেড়াতে এসে মধু সংগ্রহ করেন। পাইকারি মধু ব্যবসায়ীরাও ছুটে আসেন প্রাকৃতিক মধু সংগ্রহ করে তা বাজারজাত করার জন্য।
এদিকে মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহে গ্রামের মানুষেরা অভিজ্ঞদের সঙ্গে চুক্তি করেন এবং দক্ষতায় কোনো প্রকার মৌমাছির আক্রমণ ছাড়াই বিচক্ষণতার সঙ্গে মধু সংগ্রহ করে দেন। এ পেশায় চুক্তিকৃত ব্যক্তি মধু এবং টাকা পেয়ে তারা সংসার চালান।
মৌচাক মধু কোম্পানীর প্রোপ্রাইটর আব্দুর রহিম বলেন, আমাদের দেশেও যে খাঁটি পণ্য উৎপাদিত হয় সেই বিষয়টি তুলে ধরতে আমি দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মধুপ্রেমীদের একটি প্যাকেজের মাধ্যমে এই মধুর গ্রামে নিয়ে এসেছি যেন তারা নিজ চোখে দেখেন, যে আমার কোম্পানি প্রাকৃতিক ভাবে মধু আহরন করে তা সঠিক ভাবে প্রক্রিয়া করে বাজারজাত করে আসছে। আমি আশাবাদি একদিন নওগাঁয় উৎপাদিত মধু তার সুনাম দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশের মাটিতে ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা একেএম মনজুরে মাওলা বলেন, ঘনবসতি হওয়ার কারণে ধীরে ধীরে এখন এসকল প্রাকৃতিক মৌচাকের মধুর ঐতিহ্য শেষের পথে। মান্দার ফেটগ্রামের মানুষেরা এর ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এটি সৃষ্টিকর্তার নিদর্শন বলে মনে করেন তিনি। সৃষ্টিকর্তার এমন মহিমায় একদিকে যেমন এই মৌচাকগুলো ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক এবং অপরদিকে সংগ্রহকৃত মধু বিক্রি করে ফিরেছে গ্রামবাসীর ভাগ্য।