আমেরিকার 'চিয়াসিড' চাষ হচ্ছে নওগাঁয়

কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ: আমেরিকার ঔষধি ও পুষ্টি গুন সম্পন্ন সুপার ফুড হিসেবে খ্যাত সালভিয়া হিসপানিকা যার প্রচলিত নাম 'চিয়াসিড' চাষ হচ্ছে এখন নওগাঁয়। জেলার বদলগাছি উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের খোজাগাড়ি গ্রামে আব্দুর রউফ নামে এক সৌখিন কৃষক ৩৩ শতক জমিতে এ বছর পরীক্ষামুলক ভাবে চিয়া চাষ করে সফলতা পেয়েছেন।

নওগাঁ অঞ্চলের মাটিতে চিয়ার বাম্পার ফলন কৃষকদের মাঝে এক নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। কৃষক রউফের জমিতে চিয়া চাষ এলাকায় ব্যাপক সাড়া পড়েছে। অনেক কৃষক এই চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন বলে জানান রউফ।

আমেরিকা ও মেক্সিকোসহ বিভিন্ন দেশে চিয়া একটি ঔষধি ফসল হিসেবে চাষ হয়। এর বৈজ্ঞনিক নাম সালভিয়া হিসপানিকা। রউফ নিজে থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে চিয়া চাষ শুরু করেন।

জানা যায়, দেহের শক্তি ও কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরো শক্তিশালী, ওজন কমানো, ব্লাড সুগার স্বাভাবিক রাখা, হাড়ের ক্ষয়রোধ, প্রচুর পরিমানে ফাইবার সমৃদ্ধ চিয়া মলাশয় পরিষ্কার রাখে ফলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

কৃষক আব্দুর রউফ জানান, কৃষকের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। চিয়াসিডের প্রতি কেজি বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় এক হাজার টাকা। আসা করছি ৩৩শতকে প্রায় আড়াই থেকে তিন মণ ফলন হবে যার বাজার মূল্য প্রায় একলক্ষ টাকা। আগামীতে আরোও বেশি পরিমানে চাষ করার ইচ্ছে আছে।

বদলগাছি উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জানান, সালভিয়া হিসপানিকা উদ্ভিদের আদি জন্মস্থান সেন্ট্রাল আমেরিকা। সেখানকার প্রাচীন আদিবাসীরা খাদ্য তালিকায় থাকা চিয়া বীজকে অত্যন্ত মূল্যবান মনে করেন। তিনি জানান, ঔষুধি গুন থাকায় চিয়া একটি লাভজনক চাষ। আব্দুর রউফ নওগাঁয় প্রথম এই চাষ শুরু করেছেন। আমাদের দেশের আবহওয়া ও মাটি চিয়া চাষের জন্য উপযোগী।

বদলগাছি উপজেলা কৃষি অফিসার সাবাব ফারহান জানান, সব ধরনের আবহাওয়ায় জন্মানো চিয়া বীজ দেখতে সাদা ও কালো রঙের তিলের মতো ছোট সাইজের হয়ে থাকে। অনেকেই চিয়া বীজকে তোকমা বলে ভুল করে থাকেন। দেখতে প্রায় একই রকম হলেও জন্মস্থান, পুষ্টিগুণ ও স্বাস্থ্যগত দিক থেকে রয়েছে কিছু পার্থক্য। চিয়া সাধারণত তিন মাসের ফসল। অক্টোবর-নভেম্বর মাসে বীজ রোপন করতে হয়। ৩৩ শতকের বিঘায় মাত্র তিন থেকে পাঁচ'শ গ্রাম বীজ লাগে। চাষ পদ্ধতিও খুব সহজ।

বদলগাছি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইউনানী মেডিকেল অফিসার ডা. নূর-ই-আলম জালালী জানান, সুপার ফুড হিসেবে খ্যাত চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, কোয়েরসেটিন, কেম্পফেরল, ক্লোরোজেনিক এবং ক্যাফিক এসিড নামক এন্টিঅক্সিডেন্ট। রয়েছে পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, দ্রবনীয় এবং অদ্রবণীয় আঁশ।

তিনি জানান, এক আউন্স চিয়া বীজে রয়েছে প্রায় ৬ গ্রাম প্রোটিন, ৮.৫ গ্রাম ফ্যাট, ১১ গ্রাম ফাইবার, ১৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট (যার মধ্যে ১১ গ্রাম হল ফাইবার)। দৈনিক এক আউন্স চিয়া বীজ খেলে ১৮% ক্যালশিয়ামের চাহিদা, ২৭% ফসফরাসের চাহিদা এবং ৩০% ম্যাঙ্গানিজের চাহিদা পূরণ হতে পারে। তাই বর্তমানে চিয়া সিড শুধু ওজন কমানোর জন্য বা ডায়েটের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে না। নিরপেক্ষ স্বাদের কারণে চিয়া সিড সব ধরনের খাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ার উপযুক্ত।