এগ্রিলাইফ ডেস্ক: নিয়ম শৃংখলাবিহীন, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা কর্মকান্ড যেমন একটা সময় বিশাল অনিয়মের পাহাড়ে পরিনত হয়। আজকে যারা ব্যাংক লুট করছে, দুর্নীতিতে জড়িয়ে আছে, তারা ছোট ছোট অনিয়ম ও নিয়মশৃংখলাবিহীন কর্মকান্ড করে শেষ পর্যায়ে বড় অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। ঠিক একই ভাবে একটা সময় চিনি, সয়াবিন তেল এ কিছু ব্যবসায়ী কারসাজি করতো। যখন তাদের বিরুদ্ধে সরকার কোন ব্যবস্থার পরিবর্তে পুরস্কৃত করছে, তখন পুরো দেশের ছোট বড় সর্বস্তরের ব্যবসায়ীরা কারসাজি ও অতিমুনাফায় লিপ্ত হয়েছে। যার কারনে কোভিড, ইউক্রেন রাশিয়ার যুদ্ধ ও কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির অজুহাতে ১০ টাকার সাবান ১৫ টাকা, ৫০ টাকার টুথপেস্ট ১০০ টাকায়, ৩০ টাকার পেয়াঁজ বিনা কারনে ১০০ টাকায় বিক্রি করছে। আর এভাবে সব খাদ্য পণ্যে অতি মুনাফা যেন জাতীয় মহামারী রোগে পরিনত হয়েছে।
দাম বাড়ার তালিকায় নেই এমন পণ্য মেলা ভার এবং সর্বশেষ কাগজ-কলমও সেখানে যুক্ত হলো। আর দেশের ১৮ কোটি মানুষ এসমস্ত অন্যায়, অবিচারকে নিরবে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে অসাধু ব্যবসায়ীসহ মূল্য সন্ত্রাসীরা আরও বেপরোয় হয়ে যাচ্ছে। আবার সরকার তাদেরকে মন্ত্রী, এমপি ও ক্ষমতাসীন দলের নেতা বানিয়ে পুরস্কৃত করছে। তাই এখন সময় এসেছে এসমস্ত অনিয়ম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা। তা না হলে এ সংক্রামক ব্যাধি পুরো রাস্ট্র, সমাজ, পারিবারিক বন্ধনসহ সবকিছুকে চুুর্ন বিচুর্ন করে দিবে। আর এই আন্দোলনে যুব সমাজকে সংগঠিত হয়ে নেতৃত্ব প্রদান করতে হবে।
২৪ জুন ২০২৩ইং নগরীর একটি রেষ্টুরেন্ট এ কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগরের এর উদ্যোগে আয়োজিত পরিকল্পনা সভায় বিভিন্ন বক্তাগন উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
ক্যাব যুব গ্রুপের চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি আবু হানিফ নোমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত পরিকল্পনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন। অতিথি আলোচক ছিলেন ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট সাংবাদিক এম নাসিরুল হক, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারন সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু।
আলোচনায় অংশনেন ক্যাব সদরঘাটের সভাপতি শাহীন চৌধুরী, ক্যাব চান্দগাঁও থানা সভাপতি জানে আলম, সাধারন সম্পাদক অধ্যক্ষ ইসমাইল ফারুকী, ক্যাব পশ্চিম ষোলশহর ওয়ার্ড সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক একেএম হুমায়ুন কবির, ক্যাব যুব গ্রুপের যুগ্ন সম্পাদক আমজাদুল হক আয়াজ, সহ-সাংগঠনিক মহাম্মদ মিশকাত, সহ-অর্থ সম্পাদক ইব্রাহিম ফারুক, আইন সম্পাদক মিনা আকতার, প্রচার সম্পাদক এমদাদুল ইসলাম, মোহাম্মদ করিমুল ইসলাম, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাব যুব গ্রুপের ফজলে রাব্বি তৌহিদ, তুষার চৌধুরী, ক্যাব যুব গ্রæপের সদস্য ওমর করিম, মুহাম্মদ রায়হান, তানিয়া সুলতানা প্রমুখ।
সভায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয় কিছু করপোরেট গ্রুপ গুলো করপোরেট সোস্যাল রেসপনসিবিলিটির (সিএসআর) নামে নানা ভাবে লোক দেখানো ও পত্রিকা-মিডিয়ায় ফলাও করে প্রচার করে দান খয়রাত করলেও আবার ভোক্তার পকেট কেটে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে নিচ্ছেন। বিজ্ঞাপন ও অনুষ্ঠান পৃষ্ঠপোষকতার অস্ত্র ব্যবহার করে করপোরেট গ্রুপগুলো গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ করে নানা অপকর্ম করে যাচ্ছেন। সমাজের অপরাধ, অনিয়ম ও সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজীতে যুক্তরা সুসংগঠিত আর তথাকথিত ভালো মানুষগুলো অসংগঠিত। আর এ সুযোগে গুটিকয়েক দুষ্ট লোক পুরো সমাজকে কুলষিত ও নিয়ন্ত্রণ করছে। তাদের হাতে এখন সমাজ, রাজনীতি ও ব্যবসা বানিজ্যসহ সকল ক্ষমতার কাঠামো। মেধাবীরা অবমূল্যায়িত হয়ে দেশ বিমুখ হয়ে দেশের পেশার পেশা ছেড়ে বিদেশ পাড়ি দিচ্ছে।
বক্তাগন আরও বলেন, একটা সময় খাদ্যে ভেজাল, মানহীন খাবার বিক্রি হতো, এখন জীবনরক্ষাকারী ওষুধ থেকে শুরু করে সব ধরণের খাদ্য-পণ্যও ভেজালের সংখ্যা বাড়ছে। খাদ্য-পণ্যের দাম বাড়লে একটা সময় রাজনৈতিক দলগুলো এগিয়ে আসতেন, এখন ভোটের মাঠে ছাড়া অন্য জায়গায় রাজনৈতিক নেতাদের দেখা পাওয়া যায় না। একদিকে খাদ্য-পণ্যে ভেজাল, বাজারে মানহীন পণ্যের ছড়াছড়ি, অন্যদিকে মজুতদারি ও সিন্ডিকেট করে প্রতিটি খাদ্য-পণ্যের বাজারে আগুন দিয়ে মানুষের পকেট কাটছে একশ্রেণীর মূল্য সন্ত্রাসী। ফলে মানুষ জীবন জীবিকা মারাত্মক প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন। আয়ের বৈষম্য চরমভাবে বেড়েছে, সংসার চালাতে না পেরে অনৈতিক পন্থার অবলম্বন যেন নিয়তিতে পরিনত হয়েছে। এ অবস্থা চলমান থাকলে সমাজে অস্থিরতা, অসন্তোষ ও সহিংষতার প্রকোপ বাড়তে পারে যা পুরো সমাজ ব্যবস্থায় চরম বিশৃংখলা তৈরী করতে পারে।
সভায় ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগরের কার্যক্রম বাড়ানো, সমাজ পরিবর্তনে আগ্রহী যুবদের সম্পৃক্ত করতে নানাবিধ উদ্যোগ গ্রহন, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে কমিটি গঠনসহ নানা সিদ্ধান্ত গৃহিত হয়।