সমীরন বিশ্বাস:শশা এক রকমের ফল । এটা দেখতে সবুজ রঙের লম্বা আকারের হয়ে থাকে। এই ফলে ক্যালোরির পরিমাণ কম থাকে এবং জলের পরিমাণ বেশি থাকে। খোসা সহ একটি কাঁচা শশা'র প্রতি ১০০ গ্রামে ক্যালরীর পরিমাণ ২০ কিলো ক্যালরী। পরিচিত ফল গুলির মধ্যে শসা (Cucumber) সবথেকে জনপ্রিয়। বছরের সবসময় বাজারে শসা পাওয়া যায়। শশার কার্যকারিতা অনেক।
শশায় ভিটামিন:
এর মধ্যে উপস্থিত ভিটামিন বি, থিয়ামিন (বি১), রাইবোফ্লাবিন (বি২), নিয়াসিন (বি৪) সহ একাধিক উপাদান আমাদের শরীরের খেয়াল রাখে। কিন্তু বাজার চলতি শশা নয় বরং নিজের বাড়িতে চাষ করা শসা খেতে বেশি উপযোগী।
শশায় উপকারিতা:ডাক্তাররা শরীরের বিভিন্ন উপকারের জন্য শসা খেতে বলেন। এটি দেহের পানিশূন্যতা দূর করে; দেহের ভেতর-বাইরের তাপ শোষক; বিষাক্ততা দূর করে; প্রাত্যহিক ভিটামিনের শূন্যতা পূরণ করে; ত্বকবান্ধব খনিজের সরবরাহকারী; হজম এবং ওজন হ্রাসে সহায়ক; চোখের জ্যোতি বাড়ায়; ক্যানসার প্রতিরোধে কাজ করে; ডায়াবেটিস থেকে মুক্তি দেয়; কোলস্টেরল কমায়; রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে; মুখ পরিষ্কার রাখে; চুল ও নখকে সতেজ ও শক্তিশালী করে; গেঁটেবাতের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়; মাথাধরা থেকে নিষ্কৃতি দেয়; কিডনির পাথর প্রতিরোধ করে এবং কিডনি সুস্থ ও সতেজ রাখে; দেহের রুপ-সৌন্দয্য এর নেয়ামক হিসাবে কাজ করে
শশার অপকারিতা :শশা হচ্ছে, একটি লো ক্যালরি বা খুব কম ক্যালরিযুক্ত একটি খাবার। শশার মধ্যে পানির পরিমাণ অনেক। ১০০ গ্রাম শসাতে পানির পরিমাণ ৯৪.৯ গ্রাম এবং ক্যালরি ২২ কিলো ক্যালরি এছাড়াও শশা একটি ভাল মানের এন্টিঅক্সিডেন্ট জাতীয় খাবার। শশাতে কিছু পরিমাণ ভিটামিন,মিনারেলস এবং আঁশ থাকে।কিন্তু ভাল একটি খাবার শশাও মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হয়ে যায় যখন কেউ মনে করে শুধুমাত্র শশা খেয়ে ওজন কমানো যায়। শশাকে ওজন কমানোর একমাত্র ওষুধ মনে করে। আমরা ডায়টেশিয়ানরা ডয়েট চার্টে শসাটা রাখি। কিন্তু শুধু শশা খেয়ে আমরা ওজন কমাতে বলি না। কিন্তু অনেকেই ওজন কমানোর জন্য শশাকে ওষুধ হিসবে ধরে নিয়ে সারাদিন ধরে শশা খেতে থাকে। যখনই ক্ষুধা লাগে শশা খেতে শুরু করে।
যেহেতু শশা একটি কম ক্যালরিযুক্ত খাবার তাই শশা কেন অন্য যেকোন কম ক্যালরি যুক্ত খাবার একনাগারে খেতে থাকলে ওজন কমে যাবে। কিন্তু সেই সঙ্গে আপনার শরীরে দেখা দেবে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদনের ঘাটতি। অন্য খাবার কম খেয়ে সারাদিন বা অতিরিক্ত পরিমানে শশা খেতে থাকলে বা ক্ষুধা লাগলেই শশা খেলে বদহজম, গ্যাসের সমস্যাসহ পেট ফাঁপা, পেট ব্যাথা, বমি বমি ভাব ইত্যাদি দেখা দেয়। প্রায় এক মাস ধরে ওজন কমাতে সারাক্ষণ শশা খেলেই ঘটবে নানা বিপত্তি। শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাবে শরীর ভীষণ দুর্বল হয়ে যাবে। কাজ করার শক্তি পাবেন না। রক্ত কমে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। এছাড়াও রক্তে গ্লুকোজের অভাবে মাথা ঘুরে পরে যাওয়ার মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও ঘটতে পারে
বস্তায় শসায় চাষ পদ্ধতি:
যে কারণে আমরা আপনাদের জন্য এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানাবো বাড়িতে জমি ছাড়াই এই শসা বস্তার মধ্যে কিভাবে সহজেই করতে পারবেন। তাহলে চলুন চাষের পদ্ধতি দেখে নেওয়া যাক-
১) সিমেন্টের বস্তা নিয়ে প্রথমেই তার মধ্যে পরিমান মতো উপযোগী মাটি ভরে নিতে হবে। শসা চাষের জন্য দোয়াশ মাটি ও গোবর সার মিশিয়ে এই শসা গাছের মাটি মিহিয়ে তৈরী করে নিতে পারবেন।
২) মাটিকে ভালো করে ভিজিয়ে নিয়ে বাজার থেকে কিনে আনা শসার বীজ গুলি পুঁতে দিতে হবে। বীজ গুলি যেন মাটির বেশী গভীরে না থাকে সেই ব্যাপারটি লক্ষ্য রাখবেন।
৩) সাত থেকে আট দিন পরেই শসার বীজ থেকে চারা বেরিয়ে আসবে।
৪) চারা বেরোনোর ১৫-২০ পর্যন্ত সূর্যের আলো, জল ও মাটি খুব ভালো করে দিতে হবে। কারণ এই সময়েই গাছের দরকার উপযুক্ত খাদ্য ও বাতাসের।
৫) এবার আপনার গাছে দেবেন প্রয়োজনীয় জৈব সার। বাজার থেকে জৈব সার কিনে আনবেন যার মধ্যে থাকবে জিঙ্ক, কপার, সালফেট, অ্যামনিয়া, সীসা, ফসফরাস সহ আরও প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান।
৬) গাছ বড়ো হয়ে গেলে মাচার মধ্যে সুতো ও বাঁশের সাহায্যে সম্পূর্ণ গাছটা বেঁধে দিন। শসা গাছ বেশি লতালে খুব ভালো হয়।
৭) প্রায় ৫০ দিন পরেই দেখবেন এই গাছ ভর্তি শশা এসেছে। তারপরে আসতে আসতে সেই শসা গাছ থেকে ছিঁড়ে নিয়ে অনায়েসেই খেতে পারবেন।
লেখক: সমীরন বিশ্বাস, লিড-এগ্রিকালচারিস্ট, মদিনা টেক লিমিটেড, ঢাকা।