রাজধানী প্রতিবেদক: জিঙ্কসমৃদ্ধ চালের মাধ্যমেই জিঙ্কের ঘাটতি মেটানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন কৃষিবিজ্ঞানী ও গবেষকরা। আজ বুধবার (৩০ নভেম্বর ২০২২) রাজধানীর গিয়াস উদ্দিন মিল্কী অডিটরিয়ামে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও গেইন এর যৌথ উদ্যোগে 'Strategic Plan to Extension and Promotion of Biofortified Zinc Rice in Bangladesh' শীর্ষক কর্মশালায় প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় বক্তারা এসব কথা বলেন। কর্মশালায় জিঙ্কের অভাব দূরীকরণে জিঙ্ক সমৃদ্ধ ধানের জাতের উৎপাদন বাড়াতে করণীয়, সুপারিশ, ও জিঙ্ক সমৃদ্ধ চালের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রচার কাজ জোরদার করার কথা বলেন।
কর্মশালায় "Present Status of Biofortified Crops including Biofortified Zn Rice Cultivation in Bangladesh and Future Plan" এর উপর বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (প্লানিং) ড. সুরজিৎ সাহা রায়। এসময় তিনি বলেন, মানবদেহের জন্য জিঙ্ক খুব প্রয়োজনীয় একটি খনিজ উপাদান। মানবদেহের ৩০০টি এনজাইমের সাথে জিঙ্ক সরাসরি অংশগ্রহণ করে যেগুলো দেহের অনেক বিপাকীয় কাজে অংশ নেয়। জিঙ্কের অভাবে মুখের রুচি নষ্ট হয়, স্বাদ ও গন্ধ নষ্ট হয়, ওজন কমে যায় অথবা মুটিয়ে যায়, চুল পড়ে যায়, হজমে সমস্যা হয়, জটিল ধরনের অবসাদগ্রস্ততা দেখা দেয়, বন্ধ্যাত্ব দেখা দেয়, হরমোনের সমস্যা হয়, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, মনোযোগ ও স্মরণশক্তি কমে যায়, ত্বকের ক্ষত সারতে দেরি হয় এবং স্নায়ুবিক দুর্বলতা দেখা দেয়। মানব শরীর জিঙ্ক সংরক্ষণ করে রাখতে পারে না বিধায় প্রতিদিনই একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের ১১ মিলিগ্রাম এবং নারীদের ৮ মিলিগ্রাম জিঙ্ক গ্রহণ করতে হয়। গর্ভবর্তী মায়েদের দৈনিক ১১ মিলিগ্রাম, দুগ্ধদানকারী মায়েদের ১২ মিলিগ্রাম জিঙ্ক প্রয়োজন এবং শিশুদের দৈনিক চাহিদা ৩-৫ মিলিগ্রাম জিঙ্ক। জিঙ্কসমৃদ্ধ জাতগুলোতে প্রতি কেজি চালে ২২ থেকে ২৭ মিলিগ্রাম জিঙ্ক থাকে যেখানে সাধারণ চালে থাকে মাত্র ১৫ মিলিগ্রাম জিঙ্ক। প্রতিদিন ৪০০ গ্রাম জিঙ্কসমৃদ্ধ চালের ভাত খেলে একজন ভোক্তা প্রতিদিন ৯-১০ যিলিগ্রাম জিঙ্ক পেতে পারে, যা দৈনিক চাহিদার প্রায় সমান।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. রুহুল আমিন তালুকদার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক (আইসিটি উইং) মোহাম্মদ এমদাদুল হক (পিএইচডি), কর্মশালার আলোচ্য বিষয়ের উপর বক্তব্য দেন গেইন এর পোর্টফোলিও লিড ড. আশেক মাহফুজ। এসময় তিনি তার বক্তব্যে বলেন, গেইন কৃষি ও পুষ্টির বিষয়টি জনগণের কাছে পৌঁছানোর কাজটি করছে। জিঙ্কের ঘাটতি বিবেচনা করে আমরা ২০১৯ সাল থেকে কাজ শুরু করি। জিঙ্কসমৃদ্ধ ধান ও চালের জন্য ইতিমধ্যে দুইটি লোগো উম্মোচন করা হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে আরো বৃহৎ আকারে আমাদের এ কার্যক্রম শুরু হবে বলেও জানান তিনি।
কর্মশালায় "Biofortified Zn Rice Procurement Status and Future Plan"-এর উপর বক্তব্য দেন খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রকিওরমেন্ট) মো. রায়হানুল কবির, "Zinc for Health: Intervention Strategies and the Way Forward"-এর উপর বক্তব্য দেন ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফুড নিউট্রেশন ও ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভিজিটিং প্রফেসর ড. সবুক্তগীন রহমান (পিএইচডি), "Role of Private Sector to make available Biofortified Zinc Rice in the market as a Brand"-এর উপর বক্তব্য দেন প্রাণ এগ্রো বিজনেস লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক জনাব নেসার আহমেদ। এছাড়াও বক্তব্য রাখেন গেইন এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. রুদাবা খন্দকার।
অনান্যদের মধ্যে আরো উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট মৃত্তিকা বিজ্ঞানী মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তা কৃষিবিদ রবিউল আলম মজুমদার, ডিডি (ভোলা) উপপরিচালক মো. হাসান ওয়ারিসুল কবীর, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আলী সিদ্দীকী, এসিআই সীডের বিজনেস ডিরেক্টর মিধ সুধীর চৌধুরী, গেইন এর কনসালট্যান্ট কৃষিবিদ ড. মো. মনির উদ্দিনসহ বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের শতাধিক উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
কর্মশালার শেষ পর্যায়ে জিঙ্কসমৃদ্ধ চালের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির জন্য একটি উন্মুক্ত আলোচনার আয়োজন করা হয়। এ পর্বটি পরিচালনা করেন কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী টেয়ারম্যান ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার। এখানে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারকরা, ধান বিজ্ঞানী, পুষ্টিবিদ, গবেষক, খ্যাতনামা বীজ উদ্যোক্তা, বিএডিসির কর্মকতা, সাংবাদিক, সংশ্লিষ্ট স্টেক হোল্ডারবৃন্দসহ কর্মশালার উপস্থিত অংশগ্রহণকারীরা অংশ নেন।