বিশেষ প্রতিবেদক:বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে একজন মানুষের প্রতিদিন ২৫০ মিলিলিটার দুধ পান করা দরকার। দেশের বর্তমান প্রাণিসম্পদের হিসাব মতে জনপ্রতি দুধের প্রাপ্যতা মাত্র ১৭৫ মিলি লিটার। একদিকে যেমন চাহিদা অনুযায়ী দুধের উৎপাদন কম হচ্ছে অন্যদিকে দুধের দামের কারণে সাধারণ মানুষেরা চাহিদা অনুযায়ী দুধ গ্রহণে বঞ্চিত হচ্ছে। তবে আশার কথা হচ্ছে আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই এই ঘাটতি মোকাবেলা করে দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে বাংলাদেশ। সেজন্য উন্নত জাতের দুধ উৎপাদনক্ষম গাভীর প্রয়োজন। আর জাত উন্নয়ন এবং খামারী পর্যায়ে সম্প্রসারণের মাধ্যমে ঠিক সে কাজটিই করে যাচ্ছে এসিআই এনিমেল জেনেটিক্স।
সোমবার (২ জানুয়ারী) ময়মনসিংহ সদরের ASPADA Training Academy হল রুমে লাইভস্টক এসিস্ট্যান্ট (এলএ) কনফারেন্স-এ “কৃত্রিম প্রজনন সম্প্রসারণ ও ব্যবস্থাপনা” শীর্ষক এক কর্মশালায় এসব কথা বললেন আমন্ত্রিত অতিথি এবং বিশেষজ্ঞ বক্তারা। এসিআই এনিমেল জেনেটিক্স-এর আয়োজনে এতে ময়মনসিংহ জেলার ২১০ জন লাইভস্টক এসিস্ট্যান্ট অংশগ্রহন করেন।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন ড. মোঃ আবু সাঈদ সরকার, উপপরিচালক, জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র, ময়মনসিংহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে কৃষিবিদ সুমারী খাতুন, জেলা প্রাণি সম্পদ কর্তাকর্তা (অতিঃ দায়িত্ব), সদর, ময়মনসিংহ, ড. রাহেলা পারভীন ঝুমা, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, সদর, ময়মনসিংহ, জনাব মাহবুবুল হক, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, জেলা কৃত্রিম প্রজনন কেন্দ্র, ময়মনসিংহ উপস্থিত ছিলেন। সভাপতিত্ব করেন মোঃ মোজাফফর উদ্দিন আহমেদ, বিজনেস ডাইরেক্টর, এসিআই এনিমেল জেনেটিক্স।
বিশেষজ্ঞ হিসেবে বক্তব্য রাখেন এসিআই এনিমেল জেনেটিক্সের এডভাইজার ডা. হীরেশ রঞ্জন ভৌমিক, এসিআই এনিমেল হেলথ-এর চীফ টেকনিক্যাল এডভাইজার ডা. এম এ ছালেক। এসিআই এনিমেল জেনেটিক্সের এসিস্ট্যান্ট মার্কেটিং ম্যানেজার ডা. মনিরুজ্জামান প্রমুখ।
সম্মেলনে বক্তারা বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে খামারিদের মাঝে উন্নত জাতের গরু লালন পালনে করণীয় সম্পর্কে অবহিত করতে হলে লাইভস্টক অ্যাসিস্ট্যান্টদের দক্ষ এবং তথ্যসমৃদ্ধ করে গড়ে তোলা প্রয়োজন। আজকের এ সম্মেলনে এসিআই এনিমেল জেনেটিক্স লাইভস্টক অ্যাসিস্ট্যান্টদের কারিগরি জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমে আরো দক্ষ করে গড়ে তুলছে। আজকের এই সম্মেলন থেকে অর্জিত জ্ঞানগুলি খামারী পর্যায়ে বিস্তৃত করতে লাইভস্টক অ্যাসিস্ট্যান্টরা তাদের কার্যক্রমকে আরও বেগবান করবেন বলে আশা করেন অতিথিবৃন্দরা।
বক্তারা বলেন, দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে এসিআই এনিমেল জেনেটিক্স কর্মসংস্থান তৈরিতে একটি মাইলফলক তৈরি করেছে। সম্মেলনে আগত নালিতাবাড়ির এআই কর্মী এনামূল কবির এগ্রিলাইফকে বলেন, তিনি একটি এনজিও তে চাকরি করতেন, করোনা মহামারীর সময় চাকরি হারিয়ে অত্যন্ত হতাশাগ্রস্থ হয়ে পড়েছিলেন। ঠিক এমন সময়ে তার সাথে পরিচয় হয় এসিআই এনিমেল জেনেটিকসের ডিলারের সাথে। তাদের মাধ্যমে প্রশিক্ষিত হয়ে তিনি আজ আত্মপ্রত্যয়ী এক লাইভস্টক অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে এলাকায় সুপরিচিতি পেয়েছেন। প্রতিমাসে ৫০ হাজার টাকার উপর আয়-রোজগারে খামারির পাশাপাশি নিজের এবং পরিবারের মুখে তিনি হাসি ফুটিয়েছেন।
লাইভস্টক সম্মেলনে আগত ২১০ জন কৃত্রিম প্রজনন কর্মী চোখে-মুখে কম-বেশি ছিল তৃপ্তির হাসি। খামারির পাশাপাশি দেশ গঠনে প্রাণিসম্পদের উন্নয়নের কাজ করতে পেরে তারা অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত। এজন্য তারা এসিআই এনিমেল জেনেটিক্সের সকলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছন।
সম্মেলনে মোজাফফর উদ্দিন বলেন, উন্নত জাতের গাভী একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ের খামারি থেকে শুরু করে বড় বড় খামারি সব জায়গায় লালন পালন করে দেশকে দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে হবে। একটি গরু থেকে সর্বোচ্চ উৎপাদন (দুধ ও মাংস) পেতে যা যা করণীয় সরকারের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সে কাজটি করছে এসিআই এনিমেল জেনেটিক্স। সেই কাজের একটি অংশ হচ্ছে জাত উন্নয়ন যার মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে লাইভস্টক অ্যাসিস্ট্যান্ট এর মাধ্যমে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে সর্বোচ্চ মানের সিমেন। যার গর্ভধারণ ক্ষমতা সর্বোচ্চ এবং তাদের উৎপাদিত সিমেন ব্যবহার করে খামারি যেমন সর্বোচ্চ উৎপাদন নিশ্চিত করছে তেমনি কর্মসংস্থানের মাধ্যমে লাইভস্টক অ্যাসিস্ট্যান্টরাও তাদের জীবন মানের উন্নয়ন ঘটাচ্ছে।