টাঙ্গাইলে রঙিন ফুলকপি চাষে সফল কৃষক

কে এস রহমান শফি, টাঙ্গাইল: ভূঞাপুর উপজেলায় হলুদ ফুলকপি চাষে আরশেদ আলী নামের এক কৃষক সফলতা পেয়েছেন। ভূঞাপুর পৌরসভার ছাব্বিশা এলাকায় প্রথমবারের মতো পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করে সফল হয়েছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।

আরশেদ আলী জানান, নিজ বাড়ির আঙিনার ৩৩ শতক জমিতে প্রতি বছর নানা ধরনের সবজি চাষাবাদ করেন। এবার সেই জমির অর্ধেকাংশে তিনি পরীক্ষামূলক রঙিন ফুলকপি চাষ করেছেন। তার এ জমিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার না করে শুধু জৈব সার প্রয়োগে রঙিন ফুলকপি চাষ করে দ্বিগুণ লাভবান হয়েছেন। তার এমন সফলতা দেখে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় সবজি চাষিরা। এ ছাড়া তার এই রঙিন ফুলকপির সৌন্দর্য উপভোগ করতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অনেকেই আসেন তার বাড়িতে। কেউ কেউ ক্রয় করে নিয়ে যান। আবার অনেকেই আগ্রহ থেকে পরামর্শ নিচ্ছেন, কেউ রঙিন ফুলকপির সঙ্গে ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণ করছেন। রঙিন ফুলকপির সাফল্যে খুশি স্থানীয় কৃষি বিভাগও।

আরশেদ আরও জানান, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে ও কৃষি অফিস থেকে নতুন জাতের রঙিন ফুলকপির ৪০০ চারা, জৈব সার, পোকাদমন কীটনাশকসহ সব ধরনের সহযোগিতায় পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির পাশে মাত্র ১৫ শতক জমিতে রঙিন ফুলকপির চাষ করেছেন। এতে ৪ রঙের ফুলকপি রয়েছে। চারা রোপণের ৭৫ থেকে ৮০ দিনের মধ্যে জমিতে পূর্ণাঙ্গভাবে ফলন পেয়েছেন। এই কপি বাজারে নেওয়া মাত্রই বিক্রি হয়ে যায়। দামও পাচ্ছেন ভালো ।

রঙিন কপি দেখতে আসা পাশ্ববর্তী কতুবপুর এলাকার ভুট্টাচাষি মাহমুদুল হাসান জানান, রঙিন ফুলকপির নাম অনেক শুনেছেন। কিন্তু স্ব-চোখে দেখতে পারেননি। বিষয়টি জানে পেরে আরশেদ আলীর বাগানে যান রঙিন ফুলকপির চাষ দেখতে। আরশেদেও কাছ থেকে রঙিন ফুলকপি চাষ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনেছে। আগামীতে তিনি এই রঙিন ফুলকপি চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

রঙিন ফুলকপি ক্রেতা রফিকুল ইসলাম রবি ও আব্দুর রহিম মিঞা জানান, উপজেলা কৃষি অফিসার ড. হুমায়ূন কবীরের ফেসবুকে পোস্টে রঙিন ফুলকপির ছবি দেখে কপি ক্ষেতে গিয়ে ৫০ টাকা দরে ফুলকপি কিনেছেন তারা।

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চীনে এ জাতের ফুলকপি সালাদ হিসেবে খাওয়া হয়। সাদা ফুলকপির চেয়ে রঙিন ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ বেশি। দেখতেও খুব সুন্দর। অন্যান্য ফুলকপির চাষের যে পদ্ধতি ওই একই পদ্ধতিতে রঙিন ফুলকপি চাষ করা হয়। খরচ ও সময় একই। পাশাপাশি শুধু জৈব সার ব্যবহার করেই এই ফুলকপি চাষ করা যায়। স্থানীয় হাটবাজার রয়েছে এর ব্যাপক চাহিদা।

উপজেলা কৃষি অফিসার ড. হুমায়ূন কবীর জানান, উপজেলায় এই প্রথম রঙিন ফুলকপি পরীক্ষামূলকভাবে চাষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন কেউ আগ্রহী ছিল না। পরে আরশেদ আলী নামে এক কৃষক আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে কৃষি অফিস থেকে ৪০০ ফুলকপির চারা, জৈব সার, পোকারোধক কীটনাশক ও পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা প্রদান করা হয়। প্রাথমিকভাবে ৪ রঙের ফুলকপি চাষ করা হয়েছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আহসানুল বাসার জানান, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণের লক্ষ্যে জেলার ১২ উপজেলাতে পরীক্ষামূলক রঙিন ফুলকপি চাষের উদ্যোগ নেওয়া হয়। তারমধ্যে সবার আগে ভূঞাপুর উপজেলায় সফলতা পাওয়া গেছে। এ জাতের ফুলকপিতে পুষ্টিগুণ বেশি। ক্যান্সাররোধেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে এ ফুলকপি। চলতি মৌসুমে পরীক্ষামূলক চাষে সফলতা পাওয়ায় অনেক কৃষক আগামী বছরে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।