এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: জাতীয় সংসদের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয় সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কক্সবাজার-০১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আলহাজ জাফর আলম, বি (অনার্স) এম এ বলেছেন জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারনে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলার ৩ লক্ষাধিক মানুষ নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। সুপেয় পানির প্রাপ্যতা, লবনাক্ততা বৃদ্ধির কারনে সাধারন মানুষের জীবন-জীবিককার ওপর নেতিবাচক প্রভাব শুরু হলেও এই ক্ষতি থেকে বাঁচাতে সেভাবে কার্যকর উদ্যোগ নেয়া সম্ভব হয়নি।
যদি সরকার উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠন করে তাহলে এই উপকূলের মানুষের সমস্যাগুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা গ্রহন ও বাস্তবায়ন সম্ভব হবে। তাই আগামি জাতীয় সংসদে উপকূলীয় উন্নয়ন বোর্ড গঠনে একটি প্রস্তাব মহান জাতীয় সংসদে আনা হবে। একই সাথে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় অগ্রাধিকার ভাবে জলবায়ু সংক্রান্ত প্রকল্প গ্রহন করা প্রয়োজন। সেজন্য পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগী হতে হবে। না হলে এই জলবায়ু পরিবর্তন জনিক ক্ষয়ক্ষতির প্রভাবে উপকূলে সাধারন মানুষের হাহাকার বাড়বে।
আজ বুধবার (২২ মার্চ) কক্সসবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলা পরিষদ হল রুমে পানি অধিকার প্রচারাভিযান ওয়াটারম্যুভ ক্যাম্পেইনের আওতায় আইএসডিই বাংলাদেশ, পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক-প্রান এবং একশন এইড বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত শুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত মন্তব্য করেন।
ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইএসডিই বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে পানি শুনানীতে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও মাতামুহুরী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক মকসুদুল হক ছু্েট্টা। আলোচনায় অংশনেন বদরখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরে হোছাইন, উপজেলা ্আওয়মীলীগের সাধারন সম্পাদক আবু মুছা, এমপির একান্ত সচিব আমিন চৌধুরী, ভার্চু স্কুল এ্যান্ড কলেজ এর প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মহিউদ্দীন কাদের অদুল, চকরিয়া উপজেলা প্রেসক্লাবের সাধারন সম্পাদক ও দৈনিক কালের কন্ঠের প্রতিনিধি ছোটন কান্তি নাথ, চকরিয়া প্রেস ক্লাবের সদস্য মনজুর আলম, জিয়াউদ্দীন ফারুক। ভুক্তভোগী জনগনের পক্ষে বক্তব্য রাখেন আঞ্জুমান আরা বেগম, মোবারকা বেগম, মাইমুনা খাতুন, আবু বকর সিদ্দিক, ভাচু স্কুল এ্যান্ড কলেজ এর ছাত্র ইমাম হোসেন, ছাত্রী ইশরাত সুলতানা ঈশা এবং আইএসডিই কর্মসুচী সমন্বয়কারী জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১ ইঞ্চি জমিও অনাবাদী রাখার জন্য অনুশাসন দিলেও চকরিয়াতে মিঠা পানির সেচের অভাবে ১৫০০ হেক্টর কৃষি জমি অনাবাদী থেকে গেছে। যা এতদঞ্চলে কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। চকরিয়া-পেকুয়াতে সুপেয় পানির সমস্যা সমাধান করা গেলে লবনাক্ততায় জনজীবনে আরও দুর্দশা নেমে আসবে। সেজন্য জরুরিভাবে উপকুলীয় জনগোষ্ঠির জন্য পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য সরকারের কাছে দৃষ্টি আকর্ষন করবেন।
পানি শুনানিতে পানি সংকটে ক্ষতিগ্রস্থ জনগোষ্ঠীর পক্ষে টেস্টিমনি উপস্থাপন করেন কমিউনিটির নারী ও পুরুষ। সুপেয় পানি সংকট কীভাবে তাদের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করছে এ বিষয়ে তারা তাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। বেঁচে থাকার জন্য দৈনিক প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহে তাদের সংগ্রামের কথা জানান তারা। জলবায়ু পরিবর্তন ও মনুষ্যসৃষ্ট নানা কারণে চকরিয়া-পেুকয়া উপজেলার উপকূলীয় এলাকায় পানীয় জলের সংকট সময়ের সাথে সাথে তীব্র আকার ধারণ করেছে, জনজীবনে যার সরাসরি প্রভাব পড়ছে। এর মধ্যে রয়েছে পানি সংগ্রহ করতে দূর-দুরান্তে গিয়ে অতিরিক্ত সময় ব্যয়, কলস, ড্রামের মত পানি সংরক্ষণের ভারী আধার বহন করার ফলে শারীরিক নানা অসুস্থতা, বাধ্য হয়ে লবণাক্ত ও দূষিত পানি পানের ফলে উচ্চরক্তচাপ, পেটের পীড়া, হৃদরোগের মতো স্বাস্থ্যঝুঁকি, শিশুমৃত্যু, গর্ভবতী নারীদের খিঁচুনি, অকালগর্ভপাত ও উচ্চরক্তচাপ ইত্যাদি সংকট। আবার লবনাক্ততাজনিত অসুস্থতার চিকিৎসায় এবং প্রয়োজনীয় পানীয় জল কিনতে গিয়ে পরিবারগুলোর উপর রয়েছে অতিরিক্ত খরচের বোঝা।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত অন্যান্য বক্তারা বলেন, স্লুইস গেট ব্যবস্থাপনায় সুষ্ঠ নিয়মনীতি উপেক্ষা করার কারনে লোনা পানি ঢুকিয়ে দিয়ে মাছ চাষের কারনে কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আর চিংড়ি চাষের নামে চকরিয়ার বৃহত ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন উজাড় করে দিয়ে পরিবেশের ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে। একই সাথে মিঠা পানির আধার মাতামুহুরী নদীর পানি ধরে রাখা, বৃষ্টির পানি সংরক্ষন, জলবায়ু সহিষ্ণু কৃষি প্রজাতির সম্প্রসারণ বিষয়ে মনোযোগী হওয়া দরকার। বাংলাদেশের উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর সুপেয় পানির অনিশ্চয়তা কীভাবে অন্যান্য মৌলিক অধিকারকে ব্যাহত করছে, এই শুনানির মধ্যে দিয়ে তা ক্ষতিগ্রস্থ জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে সরাসরি জানার সুযোগ তৈরি হয়েছে যা আগামীতে পরিকল্পনা গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। সকলের সুপেয় পানি ও দৈনন্দিন সকল কাজে পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে স্থানীয় জনমানুষের সুবিধা-অসুবিধাকে অগ্রাধিকার বিবেচনা করে অঞ্চলভিত্তিক সংকটের ভিত্তিতে সময়োপযোগী উদ্যোগ গ্রহণের আশু দাবি জানান তারা।
বিশ্ব পানি দিবস ২০২৩ উপলক্ষে বুধবার ২২ মার্চ, ২০২৩ চকরিয়ায় এক পানি শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। পানি অধিকার প্রচারাভিযান ওয়াটারম্যুভ ক্যাম্পেইনের আওতায় আইএসডিই বাংলাদেশ, পার্টিসিপেটরি রিসার্চ অ্যান্ড অ্যাকশান নেটওয়ার্ক- প্রান এবং একশন এইড বাংলাদেশ এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এই শুনানিতে সুপেয় পানি সংকটে ক্ষতিগ্রস্থ জনগোষ্ঠী, নাগরিক আন্দোলনের কর্মী, গণমাধ্যম কর্মী, এনজিও প্রতিনিধি, জনপ্রতিনিধি, উপকূলে জলবায়ু ও পানি সংকট নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ, ভুক্তভোগী ৫০ এর অধিক মানুষ অংশগ্রহণ করেন।