সমীরণবিশ্বাস: কৃষির সাথে কৃষকের পাশে অসময়ের বৃষ্টিতে কৃষক ভাইদের দূর্ভোগ চরমে। গত চার দিনের তুমুল বর্ষনে অনেকে কৃষক সর্বশান্ত। কেউ গত সপ্তাহে চারা লাগিয়েছে, পুরোটাই মাইর। নতুন করে আবার চারা লাগাতে হবে। কেউ কেবল ফসল তোলা শুরু করেছে। এখন গাছ টিকবে কিনা সেই সংকায় দিশেহারা। স্যালোপাম্প দিয়ে জমি থেকে পানি সরানোর প্রানান্তকর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন কেউ কেউ। যদি গাছ টিকে যায়, এই আশায়। আশা তার একমাত্র ভেলা।
ফসল চাষে রবি মৌসুম, লাভের মৌসুম। বেশ খরচ করে তারা ফসল ফলায় লাভের মুখ দেখবে বলে। এবার সেখানেই এক বড় ধাক্কা। কুমিল্লা, রংপুরের, বগুড়া, সাতক্ষীরা, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ ও সিলেট এবং ঢাকার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায় অসময়ের বৃষ্টিতে কৃষক ভাইদের দূর্ভোগ চরম সহ কৃষির নানাবিধ বিষয়ে। জানা যায় তাদের দূঃখ দূর্দশা আশা প্রত্যাশার কথা। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা কৃষকদের তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে চলছেন এবং পরবর্তীতে যাতে তারা সরকার কর্তৃক সাহায্য সহযোগিতা পান তার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছেন ।কৃষক ভাইদের নিরাপদ ফসল চাষের পরামর্শ দিচ্ছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ, নিজেও শিখছি অনেক কিছু।
প্রকৃতির এমন আচরণে এখন দেশের কৃষকের মাথায় বিশেষ করে আগাম রবি ফসলের চাষিরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন। তবে স্থানীয় কৃষি বিভাগ বলছে, ভারী বৃষ্টিপাত হলে আরও ক্ষয়-ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, অসময়ের বৃষ্টিতে অনেক স্থানে ফসল মাটিয়ে লুটিয়ে পড়েছে। এ ছাড়া যেসব খেতের সবজি এখনো ভালো রয়েছে, তা রক্ষায় প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন কৃষকেরা। কয়েকজন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত সবজিও দেখান। আরও বৃষ্টি হলে তাঁরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানিয়েছেন। এখন অসময়ের বৃষ্টিতে তাঁরা উদ্বেগে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা বলেন, কৃষকের যেন তাদের সমস্যা চিহ্নিত করতে পারেন এবং সম্ভাব্য সমাধান খুঁজে পেতে পারেন, সে ব্যাপারে সাহায্য করা কর্মকর্তাদের কাজ। তবে চাহিদার তুলনায় লোকবল সংকট রয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, আগাম রবি ফসলের বেগুন, আলু, মরিচ, শিম ও শাকসবজি।
একটি বিষয় ভালো লেগেছে, আধুনিক কৃষি এখন পৌছে গেছে প্রান্তিক এলাকায়। কৃষির এই রূপান্তর ইর্ষনীয়। সিডলিং ট্রেতে এবং পলিব্যগে ও পলিসেডে উৎপাদিত চারা জমিতে লাগানো হচ্ছে, মালচিং পেপার দিয়ে ফসল চাষ করা হচ্ছে, নেট দিয়ে ফসলের সুরক্ষা দেয়া হচ্ছে, হলুদ আঠালো ফাদ ও ফেরোমন ফাদ ব্যবহার হচ্ছে, মাটির সাস্থ্য সুরক্ষায় ভার্মিকম্পোস্ট দেয়া হচ্ছে। কৃষিতে নিত্য নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার আশা জাগায়। কৃষিতে সংকট আছে থাকবে। কিন্তু এখনকার কৃষকদের মনোবল চাঙ্গা। সে ভাংবে কিন্তু মচকাবে না! তাদের এই প্রত্যয় আমাদের ভরশা। প্রাকৃতিক দূর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে আমাদের কৃষি এগিয়ে যাক এই প্রত্যাশা রাখি। আমরা কৃষির পাশে থাকি, কৃষককে পাশে রাখি। কারন কৃষক বাচলে, বাচবে দেশ, সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশ।
লেখক: লিড-এগ্রিকালচারিস্ট, ঢাকা।