টাঙ্গাইলে সোনালি আঁশ ও রুপালি কাঠি বিক্রি করে কৃষকের মুখে হাসি

কে এস রহমান শফি,  টাঙ্গাইল: চলতি মৌসুমে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। দাম ভাল পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন পাট চাষীরা। তবে দুই এক জায়গায় পানির অভাবে পাট জাগ দিতে না পারায় তা নষ্ট হয়েছে। সব মিলিয়ে সোনালি আঁশ ও রুপালি কাঠি বিক্রি করে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, গত বছর পাটের ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকরা এ বছর পাট চাষের দিকে বেশি ঝুঁকেছেন। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও মাটি চাষের উপযুক্ত হওয়ায় পাট চাষে সফল হয়েছেন চাষীরা। গত বছর জেলার ১২ টি উপজেলায় ১৬ হাজার ৮৮ হেক্টর জমিতে এক লাখ ৬৯ হাজার ৯৮৯ বেল পাট উৎপাদন হয়েছিলো। চলতি মৌসুমে ১৫ হাজার ৬৪২ হেক্টর জমিতে চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও চাষ হয়েছে ১৭ হাজার ১৪৭ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এক লাখ ৭৩ হাজার ৭৫০ বেল।

এর মধ্যে সদর উপজেলার দুই হাজার ৭৪০ হেক্টর, বাসাইলে ৪২৯ হেক্টর, কালিহাতীতে এক হাজার ১৯৫ হেক্টর, ঘাটাইলে ৯০০ হেক্টর, নাগরপুরে এক হাজার ৭৫৬ হেক্টর, মির্জাপুরে এক হাজার ১৬৮ হেক্টর, মধুপুরে ৯১ হেক্টর, ভূঞাপুরে চার হাজার ১২৫ হেক্টর, গোপালপুরে দুই হাজার ৯৪০ হেক্টর, সখীপুরে ১৪০ হেক্টর দেলদুয়ারে এক হাজার ৪৫৬ হেক্টর ও ধনবাড়ীতে ২১৭ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ করা হয়েছে। টাঙ্গাইলে দেশি, তোষা, মেস্তা, রবি-১ জাতের পাটের আবাদ হয়েছে। তবে উচ্চ ফলনশীল তোষা পাট চাষ বেশি হয়েছে। প্রতি বিঘায় ৬ থেকে ১০ মণ পাট পাওয়া গেছে। পাট বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে চার হাজার টাকায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, সদর উপজেলার হুগড়া, কাতুলী, দাইন্যা, মগড়া, গালাসহ বিভিন্ন গ্রামে পাট কাটা, জাগ দেয়া, পাট থেকে আঁশ ছাড়ানো ও শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। এবার বর্ষায় নদী নালা খাল বিলে পানি থাকায় পাট জাগ দিতে তেমন কোন সমস্যা হয়নি। তবে দুই এক জায়গায় পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারেনি।

হুগড়া ইউনিয়নের মালতিপাড়া গ্রামের কৃষক হোসেন বলেন, এ বছর আমি দুই বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। আবহাওয়া ভালো থাকায় পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। দুই বিঘা জমিতে ১২ মণ পাট ও ১২০০ আটি পাট কাঠি পেয়েছি। প্রতি মণ পাট তিন হাজার ৮০০ টাকা ও প্রতি আটি পাট কাঠি পাঁচ টাকা দরে বিক্রি করেছি।

অপরজন ছোরমান মিয়া বলেন, আমি কয়েক বছর ধরে পাট চাষ করছি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে আমার তিন বিঘা জমিতে পাটের বাম্পার ফলন হয়েছে। বাজারে পাটের দামও গত বছরের তুলনায় বেশি। আশা করি পাটের দাম আরও বাড়বে।

গন্ধবপুর গ্রামের রাজ আলী বলেন, আমাদের গ্রামে অনেকেই পানির অভাবে পাট জাগ দিতে পারেনি। তাই অনেকের বেশি ক্ষতি হয়েছে। সরকারি কোন সহযোগিতা পেলে অনেক উপকার হবে।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আহ্সানুল বাসার বলেন, ৩০০ পাট চাষীকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রণোদনা কর্মসূচির আওতায় রবি-১ নামে পাট বীজ উৎপাদন করার জন্য চাষীদের বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। চাষীদের যে কোন সম্যস্যা সমাধানের জন্য আমরা সব সময়ে মাঠেই আছি।