কে এস রহমান শফি, টাঙ্গাইল: ব্যক্তিগত কাজে বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়িয়েছেন ব্যবসায়ী দিলিপ কুমার সাহা। সেখানে বাসাবাড়িতে কুকুর পালন দেখে তারও কুকুর পালার শখ জাগে। ৮ বছর আগে সেই সখ থেকে নিজের বাড়িতে কুকুর পালন শুরু করেন তিনি। কুকুর পালার এক পর্যায়ে তিনি বাণিজ্যিকভাবে খামার করার চিন্তা করেন। সেই চিন্তা থেকে বাড়ির আঙিনায় তিনি কুকুরের খামার করেছেন। বিদেশি প্রজাতির কুকুরের খামার করে তাক লাগিয়েছেন তিনি। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তার খামার পরিদর্শনে আসেন দর্শনার্থীরা। তার কাছ থেকে কুকুর ক্রয় করলে অন্য দেশ থেকে আমদানি করা কুকুরের চেয়ে ৫০ শতাংশ সাশ্রয় হবে বলে জানান তিনি। দিলিপ কুমার মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া গ্রামের বাসিন্দা।
দিলিপ কুমার জানান, আড়াই বছর আগে বাড়ির আঙিনায় ২০ শতাংশ জমিতে ‘অর্ক ক্যানেল’ নামে একটি কুকুরের খামার করেন তিনি। বর্তমানে তার খামারে ডগ আর্জিন্টিনা, পিট বল, ইউএস বুলি, কান কোর্সো, ফ্রান্স মার্সিভ, চাউচাউ, রাশিয়ান শামওয়েট, হোয়াইট টেরিমার, বাছে হাউন, বিগ্রোল ও টিবিভিয়ান মার্সিভসহ ২৪ জাতের ৭০ টি ছোট বড় কুকুর রয়েছে। এসব কুকুর তিনি ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করেছেন। এসব কুকুরকে সকাল বিকেলে ভাত, মাংস, সবজি একত্রে রান্না করে খাওয়ানো হয়। শিকার, দোকান ও অফিস পাহাড়া, ছাগল-ভেড়া ইত্যাদির হেফাজত, ঘরবাড়ি, এবং অপরাধের উৎস সন্ধান ও অপরাধীকে চিহ্নিত করার মতো কুকুর পাওয়া যায় এই খামারে। এমনকি ওসামা বিন লাদেনকে খুঁজে বের করা জাতের কুকুরও ওই খামারে রয়েছে। ওই খামারে স্থানীয় বেকারদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়েছে।
সরেজমিন খামারটি ঘুরে দেখা যায়, দুটি টিন শেড ঘরের মধ্যে দুই থেকে পাঁচটি করে কুকুর খাঁচায় রাখা হয়েছে। অপরিচিত কাউকে দেখলে একত্রে তারা শব্দ করে উঠে। সাদা, কালো, বাদামিসহ নানা রঙের কুকুর রয়েছে ওই খামারে। সার্বক্ষনিক নিরাপত্তার জন্য খামারে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও কুকুরের ঘরে আটটি এসি স্থাপনা করা হয়েছে।
খামারে কাজ করা শ্রমিক মাসুদ মিয়া বলেন, আগে কৃষি কাজ করতাম। তখন নিয়মিত কাজ হতো না দুই বছর যাবত এই খামারে চাকরি করি। নিয়মিত কাজ হওয়ায় এখন আর কাজ নিয়ে চিন্তা করতে হয় না।
অপরজন মাসুদ মিয়া বলেন, আগে ঝড় বৃষ্টি ও রোদের মধ্যে মাঠে কাজ করতে হতো। এখন আর তা করতে হয় না। সকাল ৭ টায় আসি, সন্ধ্যা ৭ টায় চলে যাই। যা বেতন পাই তাতে আমার সংসার মোটামুটি ভালই চলে।
স্থানীয় বাসিন্দা মানিক মিয়া বলেন, আমার ৪৫ বছর বয়সে সৌদি আরব, সিঙ্গাপুরসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরেছি। সেখানে হাঁস, মুরগী ও গরু ছাগলের খামার দেখছি অনেক। কখনও কুকুরের খামার দেখিনি। এই প্রথম আমাদের গ্রামে কুকুরের খামার দেখলাম। খামারের কারণে দুরদূরান্ত থেকে অনেক লোক আসে গ্রামে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য রতন মিয়া বলেন, জমিদার বাড়ি ও পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের পাশাপাশি কুকুরের খামারের কারণে মানুষ নতুনভাবে মহেড়া গ্রামকে চিনবে।
অর্ক ক্যানেলের পরিচালক গৌতম সাহা বলেন, ফ্যামিলি ডগ, গার্ডিন, টয়বিডসহ বিভিন্ন প্রজাতির কুকুর রয়েছে। প্রতিদিনই দুর-দূরান্ত থেকে ক্রেতা আসে। আবার অনলাইনেও বিক্রি করা হয়। ক্রেতাদের চাহিদা অনুযায়ী কুকুর বিক্রি করা হয়।
অর্ক ক্যানেলের মালিক দিলীপ কুমার সাহা বলেন, উন্নত বিশ্বে পোষা প্রাণী হিসেবে কুকুর বেশ জনপ্রিয়। আমার খামারের কুকুর গুলো অফলাইন-অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। প্রতিটি কুকুর প্রজাতি ও আকার ভেদে ২০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি হয়।
তিনি আরও বলেন, এ পর্যন্ত খামারে সব মিলিয়ে দেড় কোটি টাকা খরচ হয়েছে। স্বল্প সুদে ঋণ পেলে খামারটি পরিচালনা করতে সহজ হবে।