বানিজ্যিকভাবে কবুতর পালনে স্মার্ট প্রযুক্তিগুলি প্রয়োগ করতে হবে

এগ্রিলাইফ প্রতিনিধি:কবুতরের খামার প্রতিষ্ঠা করে বগুড়া জেলায় অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন। একসময় শুধু শখ করে পালন করলেও এখন বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালনকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন তারা। বলা যায়, বর্তমানে কবুতর পালন একটি সম্ভাবনাময় পেশা যার মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা যায়। তবে খামারকে লাভজনক করতে চাইলে কবুতর পালনে বর্তমান সময়ে আবিস্কৃত স্মার্ট প্রযুক্তিগুলি প্রয়োগ করতে হবে। কবুতর ও অন্যান্য পাখির প্রয়োজনীয় পুষ্টি এবং রোগমুক্তির জন্য বর্তমানে শীর্ষস্থানীয় এনিমেল হেলথ কোম্পানি এসিআই এনিমেল হেলথ্ দেশেই উৎপাদন করছে এ ধরনের পণ্য।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) উত্তরবঙ্গের প্রাণকেন্দ্র বগুড়ার তামান্না কমিউনিটি সেন্টারে "কবুতর ও পোষা পাখির পরিচর্যা" শীর্ষক এক কারিগরী সেমিনারে কবুতর পালনের আধুনিক ও স্মার্ট প্রযুক্তিগুলি তুলে ধরলেন এসিআই এনিম্যাল হেলথ্-এর বিশেষজ্ঞরা।

সেমিনারে বগুড়া জেলার খ্যাতনামা প্রায় ৭৫ জন কবুতর প্রেমিক ও খামারীরা অংশগ্রহণ করেন। এতে মুখ্য আলোচক হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন এসিআই অ্যানিমেল হেলথ-এর সিনিয়র প্রোডাক্ট এক্সিকিউটিভ ডা. ফারাহ্ ফারজানা। কবুতর পালনে খামারীরা সাধারণত যেসব রোগের মুখোমুখি হন সেগুলো সম্পর্কে অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন তিনি। কবুতরের সাধারণ রোগ এবং রোগের লক্ষন ও প্রতিরোধের উপায়গুলো সম্পর্কেও ধারনা দেন তিনি। এসব রোগ বালাই থেকে দূরে রাখার জন্য কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা আগে থেকেই নিতে হবে বলেন ডা. ফারজানা ।

ডা. ফারজানা বলেন, এসিআই এনিমেল হেলথ বাংলাদেশের সর্বপ্রথম পোষা পাখি ও কবুতর-এর প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও ওষুধ উৎপাদন করছে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে উৎপাদিত এসব পুষ্টি সামগ্রী এবং রোগ বালাই প্রতিরোধ ও প্রতিকারে কবুতর খামারীদের আস্থা তাদেরকে আরো উৎসাহিত করছে। এ সময় তিনি এসব পণ্যের নাম, প্রয়োগ ক্ষেত্র এবং ব্যবহার বিধি তুলে ধরেন।



ডা. ফারজানা আরো বলেন, কবুতরের রোগ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা কবুতর পালনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কবুতরের রোগ ও চিকিৎসা ব্যবস্থায় দক্ষতা না থাকলে যে কোন মুহূর্তে কবুতর খামারীদের উদ্যোগ মাটিতে মিশে যেতে পারে। কবুতরের রানীক্ষেত, কলেরা, রক্ত আমাশয়, বসন্ত নিউমোনিয়া জাতীয় সংক্রামক রোগ কখনো কখনো দেখা যায়। তাছাড়াও বিভিন্ন প্রকার পরজীবী যেমন কৃমি, উকুন, আঠালি ইত্যাদি কবুতরকে আক্রান্ত করতে পারে। কবুতরের ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়া সংক্রামক রোগ এবং ছত্রাক জনিত রোগ খুব মারাত্নক এছাড়া ভিটামিন ও মিনারেল এর অভাব জনিত রোগ, বদহজম জনিত সমস্যা হতে পারে। এসব সমস্যা সমাধানে এসিআই এনিমেল হেলথ-এর ইনোভেটিভ সমাধানগুলি তাদের খামারকে লাভজনত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।



সেমিনারে উপস্থিত এসিআই এনিমেল হেলথ্ -এর বিজনেস ম্যানেজার (ভ্যাকসিন) ডা. মোঃ মইনুল ইসলাম বলেন, বগুড়ার কবুতর খামারিরা অত্যন্ত আধুনিক মনোভাবাপন্ন এবং তারা অত্যন্ত পরিশ্রমী। তাদের মাঝে এসিআইয়ের ইনোভেটিভ সমাধান সমূহ তুলে ধরতে পেরে তারা অত্যন্ত আনন্দিত। তাদের হাত ধরে বগুড়ায় কবুতর শিল্পটি আরো বিকাশ লাভ করবে এমনটাই আশা করেন ডা. মইনুল।

ডা. মইনুল বলেন, কবুতরের সুস্থতা এবং রোগ প্রতিরোধের জন্য বায়োসিকিউরিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন এবং বায়োসিকিউরিটি মেনে চলার দ্বারা অধিকাংশ সাধারণ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এচাড়া সঠিক সময়ে রোগ প্রতিরোধে কার্যকর সঠিক ভ্যাকসিন প্রদানের কথা গুরুত্বের সাথে উল্লেখ করেন তিনি।



ডিজিএম জনাব রফিক আহমেদ বলেন, অল্প শ্রম ও স্বল্প ব্যয়ে কবুতর পালন শুধু আনন্দেরই খোরাক নয়, পাশাপাশি বাড়তি আয়ের সুযোগও সৃষ্টি করে দিয়েছে। কবুতরের মাংস অনেক স্বাদ ও পুষ্টিকর। বাজারে বাচ্চা কবুতর এর চাহিদা অনেক বেশি। এটি উৎপাদন খরচ কম, সময় লাগে কম, খাবার নিয়েও তেমন একটা ঝামেলা নেই। পালন করতে বেশি জায়গারও প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে অল্প সময়ে বাচ্চা পাওয়া যায়, বাজারে দামও বেশি। তাই খুব সহজেই কবুতর পালন করে আয় করা সম্ভব।

সেমিনারে আগত কবুতর খামারীরা বলেন, সঠিক পরিচর্যা, রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কবুতর পালনে এ সেমিনারটি ব্যাপক অর্থবহ।
সার্বিকভাবে কবুতর প্রতিপালন করে তারা কিছুটা হলেও বাড়তি আয়ের মুখ দেখছেন। দেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখতে কবুতর পালনকে একটি সম্মানজনক পেশা হিসেবেই দেখছেন বগুড়া জেলার কবুতর প্রেমিক ও খামারীরা।