দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগের হাতছানি দিচ্ছে বিদেশি পাখি পালন

এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগের হাতছানি দিচ্ছে বিদেশি পাখি পালন। এক সময় শখ করে বাজরিগার, লাভ বার্ড, ফিঞ্চ, ককাটেইলসহ বিভিন্ন রকম বিদেশি পাখি অনেকেই বি শখ করে পালন করত তবে অনেকেই এটিকে মূল পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। আর্থিকভাবে ভালই করছেন তারা। এখাতে সরকারি প্রণোদনা এবং রপ্তানি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারলে বৈদেশিক মুদ্রার আহরণের একটি চমৎকার সৃষ্টি করতে পারেন নীতি নির্ধারকরা।

শুক্রবার (৭ অক্টোবর) বগুড়া কেইজ বার্ড ব্রিডার্স ক্লাবের আয়োজনে বগুড়ায় পোষা পাখি নিয়ে এক কর্মশালায় খামারিদের মুখে এসব কথা উঠে আসে।  বগুড়ার বনানীতে অবস্থিত সিয়েস্টা হোটেলের হলরুম-এ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানটি স্পন্সর করে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় এনিম্যাল হেলথ্ কোম্পানী এসিআই এনিমেল হেলথ্।

কর্মশালায় পাখি পালন কিংবা ব্রিডার্সের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়ে আলোচনা করা হয়। কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতে এর অবদান নিয়ে কথা বলেন তারা। এই কর্মশালায় পাখি পালনে অপার সম্ভবনাসহ কিছু সংকটের দিকও উঠে আসে।

বক্তারা জানান, দেশে অন্তত ৫ লাখ পোষা পাখি লালন-পালনের সঙ্গে জড়িতের মধ্যে অধিকাংশই যুবক। এদের মধ্যে বগুড়ায় অন্তত ৩০ হাজার মানুষ সৌখিন পাখি পালনে জড়িত। তাদের মধ্যে অনেকে শখ করে কেউবা আবার বৃহৎ আকারে খামার গড়েছেন। কয়েক বছর আগে এই বিষয়টি এভাবে গুরুত্ব দিয়ে ভাবা ভাবাও যেত না। এই সব বিদেশি পাখির মাধ্যমে এখন দেশে ডিম কিংবা বাচ্চা উৎপাদন করা হচ্ছে। নানা রকমভাবে মিউটেশন বের হচ্ছে। এতে পাখি পালনকারীদের আয়ের পথ প্রশস্ত হচ্ছে।



কর্মশালায় বক্তারা বলেন, আমাদের দেশের আবহাওয়া পাখির প্রজননের (ব্রিড) জন্য অনেক অনুকুল। শীতপ্রধান দেশে যেখানে বছরে একবার পাখি ব্রিড করে সেখানে আমারা বছরে দুই তিনবার ব্রিড করা যায় । ফলে এই সেক্টরে ব্যাপক রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। এখাতকে আরো সমৃদ্ধ করতে হলে দক্ষ এভিয়েরি বিশেষজ্ঞ প্রয়োজন। সর্বোপরি পাখির চিকিৎসা ও পরামর্শের জন্য স্পেশালাইজড হসপিটাল তৈরি করে উন্নত দেশগুলোকে কোয়ালিটি সম্পন্ন নিরোগ পাখি প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিতে পারলে রপ্তানির পথ সুগম হবে। সরকার যদি উদ্যোগী হয়ে কোয়ালিটি পাখি উৎপাদনে পাখালদের উদ্বুদ্ধ ও আর্থিক সহযোগিতা করেন তবে এই এভিয়েরী সেক্টরও একদিন বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে সক্ষম হবে।

মূলত এসব বিষয়ে দক্ষ করতে বগুড়ায় পাখি পালনের সাথে জড়িত উদ্যোক্তা সম্মাননা, পুরষ্কার বিতরণী ও পোষা পাখি বা প্রাণী বিষয়ক কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এখানে সারাদেশের প্রায় দুই শতাধিক সফল পাখি প্রেমী উদ্যোক্তা অংশগ্রহণ করেন।

ক্লাবের সভাপতি কৃষিবিদ মোঃ মিল্টন ইসলামের সভাপতিত্বে উক্ত অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সৌখিন পাখী পালক ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর বগুড়া জেলার সহকারী পরিচালক ইফতেখারুল আলম রিজভী, বগুড়া কেইস বার্ড ব্রিডার্স ক্লাবের উপদেষ্টা মন্ডলীর সভাপতি মোঃ আব্দুল্লাহেল কাফী, উপজেলা প্রানিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন মো. ওয়াসিম আকরাম, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পাখি পালক ও বাজরিগার সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সুলতান বাবু, এভিকালচার সোসাইটি অব বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক রাইসুল হাসান খান (অন্তু), কেইস বার্ড এসোসিয়েশন অব রাজশাহির সাধারণ সম্পাদক মোঃ আসিফুর রহমান সজল, ঢাকার মিজু বার্ড ফিডের স্বত্বাধিকারী সুলতান আহম্মেদ মিজুসহ আরও অনেকে। এছাড়া এসিআই এনিমেল হেলথ্-এর বগুড়া অঞ্চলের কর্মকর্তাদের মধ্যে জনাব মো: শামিম খলিফা, ডা. কামাল, মো: জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন।



অনুষ্ঠানে বগুড়ার কেইজ বার্ড ব্রিডার্স ক্লাবের সভাপতি কৃষিবিদ মো. মিল্টন ইসলাম বলেন, দেশে ব্যাপক পরিমাণ পাখি আমদানি করা হয়। সেই তুলনায় পাখি রপ্তানি করার সুযোগ নেই। এই খাতকে প্রয়োজনীয় সুরক্ষা দিয়ে নীতিমালা তৈরি করার তাগিদ দেন তিনি। নীতিমালা সংশোধন করে যুবসমাজকে এ খাতে আগ্রহী করে তোলার কথা বলেন কৃষিবিদ মো. মিল্টন ইসলাম।

বাংলাদেশ বাজেরিগার সোসাইটি অফ বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক সুলতান বাবু বলেন, রপ্তানির জন্য গভর্নমেন্টকে এগিয়ে আসতে হবে। তারা এগিয়ে আসলেই আমাদের খামারিরা পরবর্তী ধাপের কাজটি সফলভাবে করতে পারবে।

খামারিদের জন্য পোষা পশু-পাখি ব্যবস্থাপনা আইনটি এখন স্থগিত রয়েছে। উদীয়মান এই শিল্পকে বিকশিত করার সুযোগ রয়েছে। রপ্তানির বিষয়টি নিয়ে নতুন করে ভাবা দরকার। এ বিষয়ে সদর উপজেলা প্রানিসম্পদ দপ্তরের ভেটেরিনারি সার্জন মো. ওয়াসিম আকরাম বলেন, পাখি পালন আমাদের দেশে উদীয়মান শিল্প হয়ে উঠেছে। এ শিল্পের প্রতি সরকারের এখনও সেভাবে নজর দেয়া হয়নি। তবে আমরা এ পেশার প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছি। ভবিষ্যতে পাখি রপ্তানির ক্ষেত্রে সরকার বা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে যদি কোনো সহায়তা প্রয়োজন হয় অবশ্যই করা হবে। পাশাপাশি খামারিরা যাতে লাভবান হতে পারে সেদিকেও নজর থাকবে।



সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন বগুড়া কেইজ বার্ড ব্রিডার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মৃধা মো. মাহমুদুজ্জামান রোমেল, সাংগঠনিক সম্পাদক সারোয়ার জাহান ও কোষাধ্যক্ষ আজাদুর রহমান। অনুষ্ঠানের গ্রান্ড স্পন্সর ছিলেন ঢাকার আরজে বার্ড হাউসের স্বত্বাধিকার মোঃ রফিকুল ইসলাম জলিল এবং কাটাবন পেট গ্যালারীর স্বত্বাধিকারী মোঃ নাহিদুল ইসলাম উদয়।

অনুষ্ঠানে পাখি পালনে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখায় ২ জন নারীসহ মোট ২২ জন নবীন প্রবীন পালনকারী ও পাখির খাদ্য ও পুষ্টিসামগ্রী বিক্রেতাকে উদ্যোক্তা সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ ছাড়াও ফেসবুক ভিত্তিক পাখির একটি ফটো কনটেস্টে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ৬ জনকে পুরস্কার দেয়া হয়।