এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম:প্রাণিসম্পদ খাতে উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ লাইভস্টক শিল্প (প্রতিষ্ঠান) ক্যাটাগরিতে বিএলএস'র ৫ম লাইভস্টক অ্যাওয়ার্ড পেল কাজী ফার্মস্ লিমিটেড। সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটি আয়োজিত ৫ম লাইভস্টক অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানে তাদেরকে এ সম্মানে ভূষিত করা হয়। কাজী ফার্মস লিমিটেড-এর পক্ষে পুরস্কার, ক্রেস্ট ও সম্মাননা গ্রহণ করেন কাজী ফার্মস্ লিমিটেড এর জেনারেল ম্যানেজার (সেলস্) সরদার সাব্বির আহম্মেদ।
অ্যাওয়ার্ড বিতরণী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটির সভাপতি প্রফেসর ড. মো. জালাল উদ্দিন সরদার-এর সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ লাইভস্টক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ড. হেমায়েতুল ইসলাম-এর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্যদ্বয় প্রফেসর ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম এবং প্রফেসর ড. মো. হুমায়ূন কবীর, এসিআই এনিমেল হেলথ-এর চীফ টেকনিক্যাল এডভাইজার ডা. এম এ ছালেক, কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) কৃষিবিদ ড.নাথু রাম সরকার প্রমূখ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ফ্যাকাল্টি শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।
কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা, প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র দূরীকরণ, নারীর কর্মক্ষমতায়ন এবং অসংখ্য ক্ষেত্রে উদ্যোক্তা তৈরিসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে পোল্ট্রি সেক্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। মূলত আশির দশকে শুরু হওয়া পোল্ট্রি সেক্টর আজ উপাদন সক্ষমতায় দেশের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম। এ ক্ষেত্রে যে কয়টি প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখে চলেছে, তন্মধ্যে “কাজী ফার্মস” একটি অন্যতম প্রতিষ্ঠান।
১৯৯৬ সালে কাজী জাহেদুল হাসান কাজী ফার্মস্ প্রতিষ্ঠা করেন। আমদানিকৃত যতকিঞ্চিত ডিম নিয়ে যাত্রা শুরু করে ২০০৪ সালের মধ্যেই তিনি জি.পি ফার্মস প্রতিষ্ঠা করেন এবং পরবর্তী বছরেই বাংলাদেশ থেকে প্রথম বারের মতো ডিম রপ্তানির গৌরব অর্জন করেন। উক্ত বছরে তিনি ডেইলি স্টার এবং ডি এইচ এল কর্তৃক “বিজনেস পার্সন অব দা ইয়ার” নির্বাচিত হন।
বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানের ৩টি জি. পি ফার্মস্ ২৪টি প্যারেন্ট ফার্মস্, ৬টি বাণিজ্যিক লেয়ার ফার্মস, ৭টি বাণিজ্যিক ব্রয়লার ফার্মস এবং ৫টি নিজস্ব ফিড মিল রয়েছে। কাজী ফার্মস বাংলাদেশে উৎপাদিত প্যারেন্ট বাচ্চার ৩৫ ভাগ উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। শুধু তাই নয় কাজী ফার্মস এরা নিজস্ব জি.পি ফার্মস থেকে উৎপাদিত এই প্যারেন্ট বাচ্চা দেশের বিভিন্ন হ্যাচারী কোম্পানীতে বিক্রয়ের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মূদ্রা সাশ্রয় করছে। এছাড়া বাণিজ্যিক লেয়ার বাচ্চার ৪০ ভাগ, বাণিজ্যিক ব্রয়লার বাচ্চার ২২ ভাগ এ প্রতিষ্ঠান থেকে উৎপাদিত হয়। পোল্ট্রি খাদ্য উৎপাদনে প্রায় ১০ ভাগ অংশীদারিত্ব রয়েছে। কাজী ফার্মস নিজস্ব ফার্মস থেকে বর্তমানে দৈনিক প্রায় ১৩ লক্ষ ডিম উৎপাদন করে। এছাড়া কাজী ফার্মস ফ্রোজেন চিকেন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে সবচেয়ে বড় অংশীদারিত্বের মাধ্যমে দেশে নিরাপদ খাদ্য সরবরাহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে।
দেশের কর্মসংস্থানে কাজী ফার্মস্-এর ভূমিকা অপরিসীম। ১২০০ লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে কাজী ফার্মসে। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রায় ৮০ জনের অধিক ভেটেরিনারি ডাক্তার এবং পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞগণ কর্মরত রয়েছেন। একক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভেটেরিনারি ডাক্তার এবং পোল্ট্রি বিশেষজ্ঞগণ এখানে তাদের কারিগরি জ্ঞান দ্বারা প্রতিষ্ঠানটির উত্তরোত্তর সমৃদ্ধিতে অবদান রেখে চলেছেন।
কাজী ফার্মস্ ব্যবসার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মকান্ড ও শিক্ষা কার্যে অবদান রেখে চলেছে। কাজী ফার্মস সম্পূর্ণ অর্থায়নে বাংলাদেশের প্রথম মহিলা বেসরকারি ইউনিভার্সিটি “সেন্ট্রাল উইমেনস ইউনিভার্সিটি” প্রতিষ্ঠিত হয়। কাজী ফার্মস এর অর্থায়নে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি মিলনায়তন প্রতিষ্ঠার কাজ চলমান রয়েছে, যে প্রতিষ্ঠানে কাজী ফার্মসের কর্ণধার কাজী জাহেদুল হাসান এক সময়ে পড়াশুনা করেছেন এবং শিক্ষকতাও করেছেন।
কাজী ফার্মসের আর্থিক সহযোগিতায় গোপালগঞ্জের মেরী গোপীনাথপুরে “কাজী জহিরুল হক” কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠান হিসেবে উক্ত কলেজটি ইতোমধ্যে জেলার মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিক বোর্ড পরীক্ষায় উত্তীর্ণের হারের বিবেচনায় যথেষ্ঠ সুখ্যাতি লাভ করেছে।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি অনুষদের মেধাবী ছাত্রদের বৃত্তি প্রদান করার জন্য একটি “কাজী ফার্মস ট্রাস্ট” গঠন করা হয়। কাজী ফার্মস বৈশ্বিক পরিবেশের কার্বণ নিঃসরণ কমানো এবং নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনের জন্য তার অব্যবহৃত জমি, ৭টি বিভিন্ন স্থাপনার ছাদে সোলার প্লান্ট স্থাপন করেন। এই প্লান্টগুলো হতে ১২,৫০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে।
কাজী ফার্মস্ "উৎস বাংলা" নামক একটি দুঃস্থ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে গাজীপুরে ১৯ একর জমি প্রদান করেন, যেখানে একটি স্থায়ী আবাসিক স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।