সেন্ট্রাল আলবার্টা (কানাডা):"কক্সবাজার জেলার সামুদ্রিক শুকনো মাছের উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের উপর বিশ্লেষণ এবং নীল অর্থনীতি অর্জনে সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জসমূহের উপর গবেষক ও বিশেষজ্ঞ সমেত তৃণমূল পর্যায়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বক্তারা বলেছেন বাংলাদেশে বিকাশমান সমুদ্র অর্থনীতির সফলতা নির্ভর করছে এ খাতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের উপর। তারা কৌশলগত পরিকল্পনা প্রনয়ণ ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের উপর জোর দিয়ে স্বাস্থ্যসম্মত সামদ্রিকখাদ্য, শুকনো মাছ উৎপাদন, অন্ত: দেশীয় ও বৈদেশিক বিপণনের ক্ষেত্রে সকল বাধা ও প্রতিবন্ধকতা দূর করার আহ্বান জানান।
৮ জানুয়ারী অনুষ্ঠিত এ ভার্চুয়াল আলোচনায় সভাপতিত্ব করেন কানাডা প্রবাসী লেখক, গবেষক ও সাংবাদিক, বাংলাদেশ নর্থ আমেরিকান জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক এর সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা দেলোয়ার জাহিদ। অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এর সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী।অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রফেসর ড. আব্দুল জলিল চৌধুরী, ডিপার্টমেন্ট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং সাবেক মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্ট (বিআইবিএম)।
প্রধান আলোচক ছিলেন প্রফেসর ড. এস.এম. রফিকুজ্জামান, ডিন, ফিশারিজ অনুষদ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ। অধ্যাপক, গবেষক, শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক এবং স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের মধ্য থেকে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (বার্ড)এর সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. এস. জে আনোয়ার জাহিদ. প্রশিকার প্রোগ্রাম পরিচালক সাঈদ হাসান, উন্নয়ণ কনসালটেন্ট বাবু অশোক সরকার, আবেদ আহসান সাগর, মাহবুব উল আলম এবং অংশ গ্রহণ করেন খায়রুল আহসান মানিক, কৃষিবিদ মোয়াজ্জেম হোসাইন, নজরুল ইসলাম বাবুল, শামসুল হাবিব, শিরিন ফেরদৌসি, নাজমা রেশমী, ইভানা হোসাইন ও এসরার জাহিদ।
সম্মানিত অতিথি কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স এর সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেন, সমূদ্র অর্থনীতির সদ্ব্যবহার বাংলাদেশকে উন্নতির শিখরে নিয়ে যেতে পারে যদি আমরা এ খাতে প্রথাগত পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারকে নিশ্চিত করতে পারি। ইতিমধ্যে সরকার কৌশলগত নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং বিদেশি কয়েকটি সংস্থা তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। এগুলোর মাঝে সমন্বয় সাধন ও চেলেন্জের বিষয়। বাংলাদেশে খাদ্য সংস্কৃতি পরিবর্তনের উপর আমাদের জোরারোপ করতে হবে এবং সামুদ্রিক-খাদ্যকে আমাদের খাদ্য তালিকায় নিতে হবে।
মূল প্রবন্ধে প্রফেসর ড. আব্দুল জলিল চৌধুরী বলেন, কক্সবাজারে মার্কেট ভ্যালু চেইন এর উপর গবেষণা ও প্রশিক্ষণ দান বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে এর সুফলতা আসতে শুরু করেছে। সাসটেইনেবল ব্লু ইকোনমির জন্য পরিবেশগত অবক্ষয় এবং সমুদ্রের পানির দূষণ কমাতে
প্রয়োজনীয় নীতিনির্ধারণের উপর বাংলাদেশের উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।
প্রধান আলোচক প্রফেসর ড. এস.এম. রফিকুজ্জামান বলেন কক্সবাজার জেলার সামুদ্রিক খাদ্য ও শুকনো মাছের স্বাস্থ্যসম্মত উৎপাদন ও এগুলো বাজারজাতকরণের উপর নিবিড় গবেষণা করার প্রয়োজন রয়েছে। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে এর উপর কাজ হচ্ছে, দেশে বিচ্ছিন্নভাবে প্রযুক্তি ও আসছে কিন্তু ইন্ডাস্ট্রি এর ডিমান্ড যথাযথ ভাবে আলোচনায় উঠে আসছে না। দেশে মৎস্যখাত নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে একে অগ্রাধিকার তালিকায় নিতে হবে।
বার্ড এর সাবেক পরিচালক ড. আনোয়ার জাহিদ আলোচকবৃন্দের বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ আহরণ বিশেষ করে শুকনো মাছের উৎপাদনের অতীত ও বর্তমান অবস্থার উপর কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের পরিচালিত গবেষণা ও সমীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলের উপর আলোকপাত করেন। ভ্যালু চেইন এনালাইসিস সমীক্ষার মাধ্যমে যারা মৎসজীবি, ট্রলার মালিক, মাছ ও শুঁটকি বিক্রয়কারী মার্চেন্ট এজেন্ট মধ্যস্বত্ব ভোগী যেমন: আড়ৎদার,পাইকার, খুচরা ব্যবসায়ী, সংরক্ষনকারী ও মহাজন তাদের প্রতি কেজি বা ১০০ কেজিতে মুনাফা বা লাভের অংশ নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এতে মার্কেটিং চ্যানেলে জড়িত অধিক সুবিধাভোগীদের চিহ্নিত করা যাবে এবং এতে সরকারি বিভাগ ও বাজার নিয়ন্ত্রণকারীরা তাদের ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এছাড়া মাছ ধরার এলাকায় মাছ সংরক্ষণ (স্টোরেজ) এবং স্থানীয়ভাবে শুঁটকি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে তা অভ্যন্তরীণ ত্রেতা-ভোক্তার সাশ্রয় ও রপ্তানি বাজারে এর অধিক সুফল পাওয়া যাবে।
প্রশিকার প্রোগ্রাম পরিচালক সাঈদ হাসান তার বক্তব্যে পরিবেশগত অবক্ষয় এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী নিয়ে কাজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে সমুদ্র উপকুলের আদিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নের উপর জোরারোপ করেন।