রাজধানী প্রতিনিধি:বাংলাদেশ ২০২১ সালে ১৬৯২ মে.টন আম রফতানি করেছে। রফতানি বৈচিত্র আনয়নে ও বৈদেশিক মুদ্রা আয় বৃদ্ধি করতে আম উৎপাদনে লাগসই ও যুগোপযোগী আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মানসম্মত আম উৎপাদন করতে হবে। যুক্তরাজ্যেসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের আমের যথেস্ট সুনাম ও চাহিদা রয়েছে। এ লক্ষে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ‘রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন’ শীর্ষক প্রকল্প গ্রহন করেছে।
সে লক্ষে রবিবার (২২ জানুয়ারী) প্রকল্প সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান/সংস্থা/ কর্মকর্তাদের অবহিত করা এবং ভবিষ্যৎ করনীয় বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য জাতীয় পর্যায়ে অবহিতকরণ কর্মশালা , ২০২৩ খ্রি. তারিখে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) অডিটরিয়াম, ফার্মগেট, ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালা’তে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিতি ছিলেন জনাব ওয়াহিদা আক্তার, সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয় এবং সভাপত্বি করেন বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, মহাপরিচালক, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। উক্ত কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জনাব মো: মাহবুবুল হক পাটওয়ারী, অতিরিক্ত সচিব, কৃষি মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সচিবালয় ও ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, নির্বাহী চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল।
বিশ্বে আম উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৭ম।
সরেজমিন উইং, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেএর সূত্রমতে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশের ২,০২,৯৬৮ হে.জমিতে আম চাষ হয় এবং ২৩,৫০,৪৯৯ মে.টন আম উৎপাদন হয়। ২০২১ সালে বিশ্বে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন ডলার আম রফতানি বাণিজ্য হয়। প্লান্ট কোয়ারেন্টাইন উইং এর তথ্যমতে, বাংলাদেশ ২০২১ সালে ১৬৯২ মে.টন আম রফতানি করেছে।
কর্মশালায় আম উৎপাদনকারী উপকারভোগী, ডিএই বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, কৃষি মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন, আইএমইডি ও অন্যান্য সংস্থার কর্মকর্তাসহ প্রায় ১৫০ জন প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান জানান, রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পটি দেশের আম উৎপাদনকারী ১৫টি জেলার ৪৬টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে। রফতানিযোগ্য মানসম্মত আম উৎপাদনের লক্ষ্যে আম চাষীদের মাধ্যমে প্রকল্প মেয়াদে উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে আম উৎপাদন প্রদর্শনী-২৩০০টি, রফতানিযোগ্য জাতের আম বাগান সৃজন-২৩০০ টি, বিদ্যমান আম বাগানে সার ও বালাই ব্যবস্থাপনা-১৮৪০ টি ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার (প্রুনিং ব্যাগিং ও বালাই ব্যবস্থাপনা) মানস্মত আম উৎপাদন প্রদর্শনী- ১৮৪০ টি মাঠ পর্যায়ে স্থাপন করা হবে।
আম রফতানি ত্বরান্বিতকরণের লক্ষ্যে প্রকল্পের মাধ্যমে আমের পেস্টরিস্ক এ্যানালাইসিস (পিআরএ) ও উত্তম কৃষি চর্চা তৈরি, জিআইএস প্রযু্ক্তি ব্যবহার করে প্রদর্শনী এবং কৃষি প্রযুক্তির তথ্য আদান-প্রদান ও সংরক্ষণ এবং আমের পাচঁটি জাতের প্রোডাক্ট প্রোফাইল তৈরী করা হবে। প্রকল্প সহায়তা হিসেবে আম উৎপাদনকারীদের প্রশিক্ষণ ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত করার লক্ষ্যে ক্ষুদ্র কৃষি যন্ত্রপাতি (ম্যাংগো প্লাকার, হাইড্রোলিক ম্যাংগো হারভেস্টার, গার্ডেন টিলার, হ্যান্ড স্প্রেয়ার, ফুট পাম্প, এলএলপি ও ফিতা পাইপ সেট) সরবরাহ করা হবে।
বক্তারা বলেন, প্রকল্প এলাকায় উৎপাদিত উন্নত মানসম্মত নিরাপদ আম উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধি এবং প্রক্রিয়াজাতকরণে সহায়তা প্রদানের ফলে পণ্য বাজারজাতকরণে ভ্যালুচেইন ব্যবস্থা উন্নয়ন ঘটবে, কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হবে।
কর্মশালায় আগত অতিথিবৃন্দ বলেন, মানসম্মতআম উৎপাদন বৃদ্ধি ও সঠিক বাজারে প্রবেশের সহায়তাকরণের লক্ষ্যে প্রকল্প হতে আম উৎপাদনকারী ও রফতানিকারকদের মার্কেট লিংকেজ তৈরীতে সহায়তা প্রদান করা হলে আম রফানি বৃদ্ধি পাবে। উৎপাদিত আম প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণে কৃষি উদ্যোক্তা সৃষ্টি হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়ার উপযোগী উত্তম কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় আমের উৎপাদন বর্তমান অবস্থা থেকে শতকরা ৫-১০ ভাগ বৃদ্ধি পাবে।
আম সংগ্রহ, গ্রেডিং, কুলিং, ওয়াশিং বিষয়ে হাতে কলমে শিক্ষা লাভের মাধ্যমে মানসম্মত নিরাপদ আম বাজারে প্রাপ্যতা বৃদ্ধি পাবে ও ভ্যালু চেইন ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটবে যার ফলে কৃষক তার পণ্যের ন্যায্য মূল্য পাবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে আমের উৎপাদন, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণে অধিক শ্রমের বিনিয়োগ হবে, কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং কৃষকের আয় বৃদ্ধি পাবে।