এগ্রিলাইফ২৪ ডটকম: বর্তমানে বাংলাদেশ সহ সারাবিশ্বে করোনা পরিস্থিতি এবং পরবর্তীতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের ফলশ্রুতিতে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জনসাধারণের অন্যতম খাদ্যপণ্যের মধ্যে ডিম ও মুরগীর মাংসের খুচরা দাম নিয়ে অসন্তুষ্টি বৃদ্ধি পাচ্ছে। পক্ষান্তরে খামারীরা তাদের উৎপাদন মূল্য না পাওয়ায় প্রায় প্রতিদিনই বন্ধ হচ্ছে কোন না কোন পোল্ট্রি খামার।
বর্তমানে বাংলাদেশে বিদ্যমান ১,৫৮,১৭৯টি খামারের মধ্যে চালু আছে মাত্র ৯৫,৫২৩টি খামার। ১,৫৮, ১৭৯টি খামারের উৎপাদন সক্ষমতা-মুরগীর মাংস ৫২৭৩ মে.টন। বর্তমানে উৎপাদন হচ্ছে ৪২১৯ মে.টন যা উৎপাদনে সক্ষমতা থেকে ২৫.৭১% কম। একইভাবে ডিম উৎপাদনের সক্ষমতা দৈনিক যেখানে ৬,৬৪, ৮২, ১৮৩টি সেখানে দৈনিক উৎপাদন হচ্ছে ৪,৩২,৪১৮টি ডিম যা উৎপাদন সক্ষমতা থেকে ২৫ ভাগ কম।
আজ রবিবার ( ৫ মার্চ) রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা তুলে ধরেন বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশনের নেতৃবৃন্দরা।
বাংলাদেশের পোল্ট্রি শিল্পে বিরাজমান সমস্যা এবং সমসাময়িক বিষয় ডিম ও মুরগীর মূল্য সম্পর্কে সর্বসাধারণকে অবহিত করতে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন ও সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন (বিপিআইএ)-এর সভাপতি শাহ হাবিবুল হক, মহাসচিব খন্দকার মোঃ মহসিন। এসময় সংগঠনের যুগ্ম-মহাসচিব নুরুল মোর্শেদ খান সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বক্তারা বলেন, করোনার সময় থেকে অদ্যবধি পোল্ট্রি সেক্টর থেকে কর্মহারিয়ে বেকার হয়েছেন লক্ষ লক্ষ কর্মজীবি মানুষ। প্রতিদিন স্ব-পেশা থেকে বিচ্যুত হচ্ছেন অনেকেই। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশনের নিবন্ধনের ৩১ বৎসরের ইতিহাসে পোল্ট্রি সেক্টরে এমন নাজুক অবস্থা কখনো আসেনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বাংলাদেশে বর্তমানে ডিম ও মুরগী যে মূল্যে বিক্রি হচ্ছে উৎপাদন খরচ তার চেয়ে অনেক বেশী। গতকাল (৪ মার্চ) গাজীপুরে ১টি ডিমের পাইকারী মূল্য ছিল ৯.৪৫ টাকা, পক্ষান্তরে ১টি ডিমের উৎপাদন খরচ ১১.৭১ টাকা। প্রতি ডিম বিক্রয়ে ক্ষতি হচ্ছে ২.২৬ টাকা। এভাবে পুঁজি হারিয়ে নিঃশ্ব হয়ে বন্ধ হচ্ছে ডিম উৎপাদনকারী খামার। অন্যদিকে সময়ে সময়ে বাচ্চা বিক্রি করতে না পেরে বাচ্চা উৎপাদকারী প্রতিষ্ঠানগুলি ১দিনের লক্ষ লক্ষ মুরগীর বাচ্চা মেরে ফেলতে বাধ্য হচ্ছেন। পোল্ট্রির ডিম ও মাংস উৎপাদনে ৬৮ থেকে ৭০ ভাগ খরচ হয় খাদ্যে। আর এই খাদ্যের বেশির ভাগ উপাদান বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। আমদানির জন্য ৮৪ টাকার ডলার ১১০ টাকা দিয়েও সহজ লভ্য হচ্ছে না। জাহাজ ভাড়া বৃদ্ধি, ডিজেল, বিদ্যুৎ, পরিবহন সহ সবকিছুর দাম বৃদ্ধির ফলে বেড়েছে উৎপাদন খরচ।
(বিপিআইএ)-এর নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০২০ সালের মাঝামাঝি প্রতি কেজি ভূট্টার দাম ছিল ১৭.৩০ টাকা যা বর্তমানে ভূট্টার মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি শুকনা ভূট্টার মূল্য ৩৮ টাকার উপরে। পোল্ট্রি খাদ্যে ভূট্টার ব্যবহার ৫৭/৫৮ ভাগ। একই সাথে পোল্ট্রি খাদ্যে সয়াবিন খৈলের ব্যবহার শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগ। উক্ত সয়াবিন খৈল ২০২০ সালে প্রতি কেজি যেখানে ৩৫/৩৬ টাকা ছিল এখন সেই সয়াবিন খৈল প্রতি কেজি ৮৪ টাকার উপরে। পোল্ট্রি খাদ্যে ব্যবহৃত হয় এমন সবকয়টি খাদ্য উপাদানের মূল্য বৃদ্ধি সহ দুষ্প্রাপ্য হয়ে যাচ্ছে কোন না কোনটি। বর্তমানে খাদ্য উপাদান সংকট চরমে। প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান আমদানির জন্য চাহিদা মত এলসি ওপেন করতে না পারলে একে একে বন্ধ হবে ছোট-বড় আরো পোল্ট্রি খামার সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য প্রতিষ্ঠান।
সংবাদ সম্মেলনে ডিম ও মুরগীর যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ পূর্বক জনমনে বিভ্রান্তি অবসানে প্রচার মাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা, ভারত সহ পৃথিবীর যে কোন দেশ থেকে ভূট্টা, সয়াবিন, ডিডিজিএস এবং অন্যান্য কাঁচামাল আমদানিতে এনওসি প্রথা তুলে নেওয়া, ‘এলসি’ সহজীকরণ, সহজ ও দ্রুত খালাসের ব্যবস্থা, দেশের সকল বৃহৎ সয়াবিন আমদানি ও প্রস্তুতকারকগণকে যৌক্তিক মূল্যে সয়াবিন খৈল, খামারী ও খাদ্য উৎপাদনকারী ফিড মিলারদের মাঝে বিতরণ নিশ্চিতকরণ, ভূট্টা, সয়াবিন সহ অন্যান্য কাঁচামালের চাষাবাদ বাড়াতে চাষিদের প্রণোদনা প্রদান, আসন্ন বাজেটে পোল্ট্রি খামারীদের ক্যাপিটাল মেশিনারীজের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা সহ ৯ টি জোরালো দাবী সংশ্লিস্ট মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর-এর প্রতি উপস্থাপন করেন।