আবুল বাশার মিরাজ, বাকৃবি প্রতিনিধি:সম্প্রতি ‘বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাউবি) স্কুল অব এগ্রিকালচার এন্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট’ পরিচালিত ৪ বছর মেয়াদি ‘ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন এগ্রিকালচার (বিএসসিএজি)’ কোর্সে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের পরপরই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) সকল শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও কৃষিবিদরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিষয়টির তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ক্ষুব্ধতা প্রকাশ করেন।
জানা যায়, বিজ্ঞপ্তিতে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় জুলাই-ডিসেম্বর ২০২২ ‘ব্যাচেলর অব সায়েন্স ইন এগ্রিকালচার’ নামের ৪ বছর মেয়াদি কোর্সে ৫০ জন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্যে অনলাইনে দরখাস্ত আহবান করে। এসএসসি ও এইচএসসি পর্যায়ে ন্যূনতম জিপিএ-৩সহ মোট জিপিএ-৭ থাকলেই যে কোনো শিক্ষার্থী ওই কোর্সে ভর্তির জন্যে আবেদন করতে পারবেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। পরে ৫০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে ৫০ শিক্ষার্থীকে ভর্তির সুযোগ পাবেন। অন্যদিকে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে নিয়ে সমন্বিত কৃষি গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিও কিছুদিন আগে প্রকাশ করা হয় যেখানে শিক্ষার্থী ভর্তির যোগ্যতা হিসেবে এসএসসি ও এইচএসসিতে মোট জিপিএ-৮ এবং ন্যূনতম প্রতিটিতে জিপিএ-৩.৫০ থাকতে হবে বলে ওই বিজ্ঞপ্তিটিতে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. হাম্মাদুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কৃষি একটি টেকনিক্যাল বিষয়। প্রকৌশলী এবং চিকিৎসকদের পাশাপাশি এই শিক্ষায় পেশার মর্যাদা রক্ষায় আমাদের দীর্ঘ সংগ্রাম এবং ত্যাগ করতে হয়েছে। এখন এই ডিগ্রি যদি উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হতে দেওয়া শুরু হয় তবে এই পেশার মর্যাদা ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে বলে মনে করছি। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই ভেটেরিনারি, ফিশারিজ, অ্যানিম্যাল হাজবেন্ড্রি নামেও ডিগ্রি চালু করবেন উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বাংলাদেশ ভরে যাবে নানা রকমের কৃষিবিদে। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় তো চাইলেও এমবিবিএস এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক ডিগ্রি চালু করতে পারবে না। তাহলে কৃষিই কেন? আশঙ্কা করছি, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে এই ডিগ্রি চালু হলে কৃষি শিক্ষার মান ও কৃষিবিদদের মর্যাদা অচিরেই ভূলণ্ঠিত হবে। কৃষি শিক্ষার সর্বনাশ রোধে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দের প্রতি এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি।
বাকৃবি কৃষি অনুষদ ছাত্র সমিতির সহ-সভাপতি তারিক জামান জয় বলেন, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় কিভাবে বিএসসিএজি ডিগ্রি চালু করতে পারে সেটি আমার বোধগম্য নয়। আমি কৃষি অনুষদ সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বিষয়টির তীব্র প্রতিবাদ এবং নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা শীঘ্রই একটি মানববন্ধন করবো যেন এমন ডিগ্রি চালুর বিজ্ঞপ্তি সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপরেও কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে কঠোর আন্দোরনে যাবো। আমরা কোনোভাবেই কৃষি শিক্ষার মান নষ্ট হতে দিবো না।
কৃষি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজিজুল হক বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসানের সাথে কথা বলেছি। বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে একটি প্রতিবাদ লিপি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাকৃবি উপাচার্য।
এ বিষয়ে বাকৃবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বলেন, আমি এটির তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি স্নাতক ডিগ্রি চালু হলে কৃষি শিক্ষার উপর বড় ধরনের সমস্যা হবে। কৃষি শিক্ষা তো কৃষকের দোড় গোড়ায় গিয়ে হাতে-কলমে শেখার বিষয়। এটির জন্য পর্যাপ্ত ও হাতে-কলমে প্রশিক্ষিত দক্ষ প্রশিক্ষকের প্রয়োজন পড়ে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর হাজার হাজার দক্ষ গ্রাজুয়েট তৈরী করছে। অন্যান্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও সেটিতে যুক্ত হয়েছে। দেশে দক্ষ কৃষি গ্রাজুয়েটের অভাব নেই বললেই চলে। দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ আমাদের গ্রাজুয়েটদের অবদানে। এর জন্য আলাদা করে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি স্নাতক ডিগ্রি চালু করার কোনো প্রয়োজন নেই।